
সীতাকুণ্ডের কলেজ রোড়ের ছায়ানীড় বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার ১৬ মার্চ ভোর ৬টায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াত, র্যাব ও পুলিশের সম্বন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক যোগে অপারেশন শুরু করে।
অভিযানে এক নারীসহ ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
“অ্যাসল্ড-১৬” নামে এ অভিযানে শুরু হয় সকাল ৬টায়। শেষ হয়েছে পৌনে ৭টায়। প্রায় ৪৫ মিনিট এ অপারেশনে বাড়িতে থাকা বেশ জঙ্গি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অভিযানকারী দল বলেছে ২ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।

অভিযান শুরু পরপরই জঙ্গিরা বাসার ভেতরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটালে বাড়িটির সিঁড়ি ঘরে ছাদ উড়ে গেছে বলে জানায় প্রতক্ষ্যদর্শীরা। এসময় শত শত রাউণ্ড গুলি এবং বিস্ফোরণ ঘটায় অভিযানকারী দল।
ধারণা করা হচ্ছে জঙ্গির আস্তানা ছায়ানীড় ভবনটিতে থাকা সব জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা গেছে। তবে এ পর্যন্ত ৩ ঘন্টার অভিযানে সোয়াতের দুই সদস্য ও পুলিশের একজন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত দুই সোয়াত তাদেরকে এ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সাময়িক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ নেয়া হয়েছে।

অভিযানে দেড় ঘন্টার পর সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক এবিসি সানোয়ার। তিনি বলে, অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। একজন আত্মঘাতি বোমা হামলায় অন্যজন সোয়াত দলের গুলিতে মারা যায়। আহত বস্থায় একজন মহিলাকে উদ্ধার করা হলেও তিনি জঙ্গি দলের সদস্য না বাড়ির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে ভবন একটি পরিবারের ৪ জনকে অক্ষত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। সেখানে আরো ৪ পরিবারের সদস্যরা আটকে আছে তাদের উদ্ধারের পর গ্যাস চার্জ করা হবে। যাতে কোন জঙ্গি থাকলে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে জানান এবিসি সানোয়ার।

ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক জহির উদ্দিন বলেন, অপারেশন শেষ হয়েছে। বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানো হচ্ছে। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের কাছে শক্তিশালী বোমা ছিল যা অপারেশনের সময় তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
উল্লেখ্য গতকাল বুধবার দুপুরে সীতাকুণ্ড সদরের নামার বাজার এলাকায় একটি বাড়ীতে জঙ্গির আস্তানা আবিস্কার করে বাড়ির মালিকরা। স্বামী-স্ত্রী দুই জাঙ্গিকে আটক করে তারা পুলিশকে খবর পাঠালে পুলিশ সাধন কুঠির নামে বাড়িটি ঘিরে ফেলে স্বামী-স্ত্রী দুই জঙ্গিকে আটক করে ৪ মাস বয়সী এক শিশুসহ। এবং সেখান থেকে বিপুল গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে।
আটক দুইজনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজের পিছনে প্রেমতলা চৌধুরী পাড়ার ছাড়ানীড় নামে অপর একটি ভবনে জঙ্গির আস্তানা খুঁজে পায়। সেখানে অভিযান চালাতে গেলে বাসার ভীতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তদন্তসহ ২ জন আহত হয়।
এর পরপরই পুলিশ অভিযানে পিছুহটে। পরে রাতে চট্টগ্রাম থেকে সোয়াত টিম, বোমা বিষেশজ্ঞ টিম ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে। এবং ঢাকা থেকে রওনা হয় সোয়াতের আরেকটি টিম।
রাত পৌনে একটায় দু্টি মাইক্রোবাস ও একটি পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা থেকে সোয়াট দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগে ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল আসে। আর আগেই চট্টগ্রাম থেকে র্যাব, সোয়াত (স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস) ও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা সেখানে যান।
*সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান: শিশুসহ স্বামী-স্ত্রী আটক, পুলিশের উপর হামলা
*সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানা: ছায়ানীড়ে অভিযান স্থগিত, সোয়াত টিম প্রস্তুত
*ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে বাড়ী ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা
*ভোর রাতে সীতাকুণ্ডে জঙ্গি অভিযানে নামছে ঢাকা চট্টগ্রামের সোয়াত বাহিনী (ভিডিও)