
চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা পুলিশ নৌবাহিনীর কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে এলাকার ৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বলেছে, নৌ বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটকের পর থানায় সোপর্দ করেছে। ৪ শিক্ষাথীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তাদের অভিভাবকরা।
গ্রেফতারকৃত ৪ শিক্ষার্থী হলো-বিএফ শাহীন কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল হক (১৮), কুমিল্লা রেসিড্যানশিয়াল কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল হাসান, বেজপা পাবলিক স্কুল থেকে সদ্য এস এস সি পাশ শিক্ষার্থী সীমান্ত বড়ুয়া ও এল এম এফ কোর্সে অধ্যায়নরত প্রশেনজিত মজুমদার। তারা সকলেই বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

এদিকে এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, থানায় সোপর্দ করার ৩ ঘন্টা আগেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নেভি গেইট এলাকায় অবস্থিত বাসমতি রেস্টুরেন্টের সামনে আড্ডা দেয়ার কারণে নৌ বাহিনীর লোকজন গার্ড রুমে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে ছেলেদের উপর অমানুষিকভাবে নির্যাতন চালায় এবং তাদের মাথা মুড়িয়ে দিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার হওয়া কুমিল্লা রেসিডেনশিয়াল কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল হাসান (১৭) জানায়, আমার বন্ধু সীমান্ত বড়ুয়ার এস এস সি’র ফল প্রকাশ হলে সীমান্তকে নিয়ে আমরা ৫ থেকে ৭ জন বন্ধু নেভী হাসপাতাল গেইটে অবস্থিত বাসমতি রেস্টুরেন্ট খাবার খেতে যাই। সন্ধ্যার দিকে আমরা খাবার শেষ করে রাস্তায় বের হলে ওখানে কর্মরত নৌবাহিনীর এক সদস্য আমাদের ডাক দিয়ে বলে “রাস্তা কি তোদের বাবার? রাস্তায় এত জন মিলে কিসের আড্ডা দিস? আমরা বললাম আংকেল গালাগালি করতেছেন কেনো, আপনি ভালোভাবে বললে আমরা এমনি চলে যেতাম। একথা শুনে নেভীর আংকেলটা বললেন আমার মুখে মুখে কথা। এরপর তিনি তার সঙ্গীয় অফিসারদের ডেকে এনে আমাদের ৪ জনকে বেধরক মারধর করে বানৌজা ঈসা খানের গার্ড রুমে নিয়ে যায়। এরপর ওখানে উপস্থিত আরো কয়েকজন নৌবাহিনীর আংকেলরা আমাদের হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে অমানুষিক ভাবে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। তারপর আমাদের মাথার চুলও কেটে ফেলেন তারা। এভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে তারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় হস্তান্তর করেছে।

নির্যাতনের শিকার হওয়া কলেজ পড়ুয়া সীমান্ত বড়ুয়ার পিতা প্রভাত বড়ুয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেসহ তার বন্ধুদের পৈশাচিক এই নির্যাতনের বিচারের জন্যে প্রয়োজনে আমরা হাইকোর্টে রিট করবো। এমন অমানবিক নির্যাতনের যেন আমরা সঠিক বিচার পাই সে ব্যাপারে আমরা আপনাদের অর্থাৎ মিডিয়া ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা চাই এই নির্যাতনের প্রতিবাদে সকলেই আমাদের পাশে থাকবে।
এ ব্যাপারে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে করা মামলার বাদি মো: রনি মিয়া (পি এম-২) মামলার বিবরণীতে বাদী অভিযোগ করেন, নাবিক কলোনীর রোডে বাসমতি হোটেলের সামনে ১০/১২ জন ছেলে বিকালে কোচিং শেষ করা ফেরার পথে মেয়েদের ইভটিজিং করতে থাকে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি “আপনারা এখানে আড্ডা দিচ্ছেন কেন?” এসময় প্রসনজিৎ বলে আপনার সমস্যা কি? আমি বললাম এটা নৌ-বাহিনীর নিজস্ব রাস্তা এখানে আড্ডা মারা নিষেধ। মেয়েদের ইভটিজিং করেন কেন? প্রসনজিৎ বলে কি হয়েছে। তার নাম এবং বাবার নাম জানতে চাইলে বলে তাদের পরিচয় মানুষ। তখন আমি তাকে বলি আংকেল আপনি একটু এদিকে আসেন। এটা বলার পর তাদের সাথে থাকা আশিকুল হক লোকজনের সামনে আমার গালে থাপ্পর মারে। এবং বলতে থাকে গুলি করে দিবো। আমি তাকে ধরে ফেলি। এসময় অন্যরা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মারতে থাকে। আমার ইউনিফর্ম ব্যাজ ছিঁড়ে ফেলে। পরে উপস্থিত লোকজনের সহযোগিতায় ৪ জনকে ধরে ফেলি। এবং তাদের গার্ড রুমে নিয়ে যাই।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বাদী মো: রনি মিয়া ৪ জনের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বিকার করেন। এবং তারা কিভাবে আহত হয়েছে তা আমি জানি না।
ইপিজেড থানার ওসি আবুল বশার জানান, নৌবাহিনীর কাজে বাঁধা প্রদান করায় চার কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে নির্যাতনের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি বলে জানান তিনি।