
রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি:
আগামীকাল রবিবার রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বন্দরবানে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করা হয়েছে। রাঙামাটির লংগদু’র যুবলীগ নেতা ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার প্রতিবাদ, হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, লংগদুদে নিরীহ ও নির্দোষ বাঙালীদের উদ্দেশ্যমূলক ভাবে গণগ্রেফতার বন্ধ এবং লংগদুতে চলতি বছরের ৭ জুন মাইনীমুখ কাচালং নদীতে অজ্ঞাত বাঙালীর যুবককে হত্যার প্রতিবাদে এ হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ।
শনিবার (১০ জুন) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এ বিবৃতির মাধ্যমে হরতাল পালনের ঘোষণা করে ওই সংগঠনটি।
এদিকে ওই সংগঠনের রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম হরতাল ঘোষণার কথা স্বীকার করেন এবং এ হরতাল যথাযথ ভাবে পালনের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
নিহত নয়নের মোটর সাইকেল উদ্ধার, ২ চাকমা যুবক গ্রেফতারঃ
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ৭নং ইউনিয়ন শাখার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যা মামলায় খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন রনেল চাকমা (৩৩) ও জুনেল চাকমা।
শুক্রবার (৯ জুন) রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। দিঘীনালা থানার ওসি শামসুদ্দিন ভুইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওসি জানান, রাতে তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের মোটর সাইকেলটি মাইনী নদী থেকে নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত রনেল চাকমার বাড়ি দিঘীনালার হাসেনচনপুরে। তার বাবা রাজমোহন চাকমা (মৃত) ও মা কপিলা দেবি চাকমা।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, আটককৃতরা নয়নকে দিঘীনালা উপজেলার চার মাইল নামক স্থানে এনে হত্যা করে এবং হত্যার পরে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে লংগদুর পাহাড়ি পল্লীতে আগুন দেওয়াসহ পরবর্তী সহিংস ঘটনায় নিজেদের রক্ষায় তারা মোটর সাইকেলটি গত দুইদিন আগে রাতের অন্ধকারে মাইনী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৯ জুন) রাতে তাদেরকে লংগদু থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (১০ জুন) সকালে তাদেরকে রাঙামাটি চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে চালান করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- লেয়াকত আলী জসিম (৩০), বাবুল হোসেন (৩৫), ও দিদার হোসেন (৩৫)। এ নিয়ে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। লংগদু থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলা থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন দুই যাত্রী নিয়ে দীঘিনালার দিকে রওনা হন। দুপুরের পর দীঘিনালার চার মাইল এলাকায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সন্ধ্যায় ফেসবুকে তার মৃতদেহের ছবি দেখে শনাক্ত করে পরিবার ও বন্ধুরা। পরদিন সকালে নয়নের লাশ লংগদুতে তার গ্রামের বাড়ি বাইট্টাপাড়া আনা হয়। এই ঘটনায় ২ জুন দিঘীনালা থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে ২ জুন বাইট্টাপাড়া থেকে লংগদুবাসীর ব্যানারে কয়েক হাজার বাঙালির একটি শোকমিছিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় উপজেলার ঝর্ণাটিলা এলাকায় মারফত আলীর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। ওই সময় ওই মিছিল থেকেই প্রধান সড়কের পাশের লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির কার্যালয়সহ আশেপাশের পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। আড়াই শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এই ঘটনায় লংগদু থানায় তিন থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।