
নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আসতে বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে।
আজ সোমবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএফইউজে সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আগামী ২১ জুন বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমাদের ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশ নেয়ার সম্মতি জানিয়েছেন। কিন্তু ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিরাপত্তার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্লাব চত্বরে ইফতার মাহফিলে আসতে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা মনে করি বর্তমান ক্লাবের কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তিকে চরমভাবে নসাৎ করেছে।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ডিএমপি কমিশনারের দোহাই দিয়ে দেশনেত্রীকে প্রেস ক্লাবে আগমনে বাধা দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি, সকল মতপ্রকাশের মঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করে ক্লাবের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের স্বার্থে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তিন তলায় কনফারেন্স হলে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ক্লাবের সাবেক শওকত মাহমুদ বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ডিএমপি কমিশনারের দোহাই দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রেসক্লাবে আগমনে বাধা দেয়া কোনোভাবে কাম্য নয়। বেগম জিয়া প্রতিদিনই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন, পূর্বাণী হোটেলসহ রাজধানীর কোনো না কোনো স্থানে ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন।
কোথাও নিরাপত্তার সমস্যা হয়নি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথাও বাধা প্রদান করেছে, কোথাও নিরাপত্তা জনিত দোহাই কেউ দিচ্ছে না। তাই ক্লাব কর্তৃপক্ষে এটা খোড়া অজুহাত করে আমরা মনে করি। বেগম খালেদা জিয়াকে গত বছর ক্লাবের দখলদার কমিটি আসতে বাধা প্রদান করেছে। বর্তমান নির্বাচিত কমিটির কাছ থেকে এমন আচরণ আমরা কোনোভাবে আশা করিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাব দীর্ঘদিনের একটি জাতীয় গণতান্ত্রিকপ্রতিষ্ঠান। এখানে গণতান্ত্রিক দলের নেতা-নেত্রীদের আসার দ্বার উন্মুক্ত। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা বারবার এই ক্লাবে এসেছেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সাংবাদিদের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু স্বৈরাচার এরশাদ এই ক্লাবে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। যদিও দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ পতিত স্বৈরাচার এরশাদকে ক্লাবে আসতে দেয়া হচ্ছে। অথচ দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাধা দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি খুব ব্যথিত হয়েছি ক্লাবের এই সিদ্ধান্তে যে বেগম খালেদা জিয়াকে এখানে আসতে না দেয়া। এটা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ভুলন্ঠিত করেছে।
আমি বলি, জাতীয় প্রেস ক্লাব হলো, আইল্যান্ড অব ডেমোক্রেসি, ওশেন অব অটোক্রেসি। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময়ে সারা বাংলাদেশে যখন দাঁড়ানোর জায়গা ছিলো না, তখন সব রাজনীতিবিদ, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী সবাই আসতেন এই প্রেস ক্লাবে। সেই ক্লাবের দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রীর জন্য। এটা খুব দূঃখজনক এবং আমি এর নিন্দা করছি। অনুরোধ করছি, প্রেস ক্লাব কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনা করে সার্বজনীন গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনবে। ’৯০ সালে দাবি উঠেছিলো, প্রেস ক্লাবকে ডেমোক্রেসি স্কয়ার হিসেবে নামকরণ করার জন্য, এই ডেমোক্রেসি স্কয়ারে স্বৈরতন্ত্রের ছায়া দেখতে পারছি আমরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, নিরাপত্তার প্রশ্ন দেখানোর বিষয়টি খোঁড়া যুক্তি, হাস্যকর। আমি ও আমাদের আরেকজন শ্রদ্ধেয় সদস্য জনাব হাসান হাফিজ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে বার বার বলেছি, কিন্তু আমাদের বক্তব্য আমলেই নেয়া হয়নি। অত্যন্ত হাস্যকরভাবে তারা এই অবস্থান নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা অসহায় হয়ে বা ব্যর্থ হয়ে যাই বলুন না কেনো প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা সভা থেকে ওয়াক আউট করে চলে এসেছি।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, প্রেস ক্লাবে খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা আসতে চাইলে তাদের আসার ব্যবস্থা করা ক্লাবের ঐতিহ্য। বর্তমান কমিটি ক্লাবের গনতান্ত্রিক চরিত্রকে ধবংস করে দিয়ে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাইছে। তিনি বলেন ক্লাব কতৃপক্ষের কাজ হচ্ছে অনুমিতি দেয়া। নিরাপত্তার বিষয় দেখবে আয়োজক সংগঠন ও প্রশাসন।প্রতি বছরই খালেদা জিয়া প্রেস ক্লাবে ইফতারে আসেন, কই তখনতো নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আসেনি। পুলিশ যদি খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না বলে থাকেন তা হলে এ ব্যর্থ বাহিনীর দরকার ক?
সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান উপস্থিত ছিলেন।