ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

জলদস্যু প্রধান কালামের অজানা কাহিনী

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

কুখ্যাত জলদস্যু প্রধান কালাম বাহিনীর প্রধান কালাম।

অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি, ইয়াবা ও মাদক বিক্রির নগদ ১৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকাসহ কুখ্যাত জলদস্যু প্রধান কালাম বাহিনীর প্রধান কালাম (৫৫) ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭।

৫ জুলা্ই বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে ধরা হয়। গ্রেফতারের পর দুর্ধর্ষ এই ত্রাস কালামের নানা অপকর্মের লোমর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসছে।

র‌্যাব-৭ এর এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে ধরা হয়। র‌্যা‌বের দাবি উপকূলীয় এলাকা ও মেঘনা মোহনার ত্রাস এই কালাম বাহিনী। কালামের কাছ থেকে আটটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি, ইয়াবা ও মাদক বিক্রির নগদ ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

এ নিয়ে বুধবার বিকালে র‌্যাব চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয় জলদস্যু প্রধান কালাম বাহিনীর প্রধান কালামের নানা অপরাধের কাহিনী।

 র‌্যাব জানায়,  বঙ্গোপসাগরের পূর্ব অংশের উপকূলীয় এলাকা অর্থ্যাৎ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ভোলার উপকূলীয় এলাকা এবং মেঘনা নদীর মোহনায় যে কয়েকটি জলদস্যূ বাহিনী জেলেদের অপহরণ, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের মাধ্যমে এলাকায় রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে তার মধ্যে জলদস্যূ ‘কালাম বাহিনী’ সবচেয়ে সক্রিয় এবং দূর্ধর্ষ।

জলদস্যু প্রধান কালাম থেকে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্র।

এ বাহিনীর প্রধান মোঃ আবুল কালাম কালাম চৌধুরী প্রকাশ কালাম ডাকাত (৫৫)। কালাম চৌধুরীর বর্তমান নিবাস ভোলার মনপুরায় হলেও তার বাহিনীর প্রায় ২০-২৫ জন জলদস্যূর তথ্য পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ভোলা ছাড়াও চট্টগ্রামের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও বাঁশখালীর অনেক জলদস্যু রয়েছে।

জলদস্যু কালাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানা ও ভোলার মনপুরা থানায় ১১ টি মামলা রয়েছে যার মধ্যে ২ টি হত্যা, ৩ টি অস্ত্র, ৪ টি ডাকাতি ও ১ টি চুরির মামলা। এর মধ্যে ৮ (আট)টি মামলায় আদালত হতে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী রয়েছে। বিগত কয়েক মাসে বঙ্গোপসাগরের পূর্ব অংশে এই কালাম বাহিনী তার দলের দুই জন সদস্যকে খুন করে লাশ গুম করে এবং অনেক জেলেদের অপহরণসহ মাছ ধরার ট্রলার ছিনতাই ও মোবাইলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী করে আসছে।

বেশকিছুদিন যাবৎ র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল কালাম বাহিনীর উপর গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার উপকূলে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি কালে জলদস্যু কালাম বাহিনীর অবস্থানে অভিযান পরিচালনা করে কালাম বাহিনীর ‘নদীর কমান্ডার’ হিসেবে পরিচিত কুখ্যাত জলদস্যু আমির (২৬)সহ ০৫ জন জলদস্যূকে ৭ (সাত) টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৩ রাউন্ড কার্তুজ, ২৩টি রকেট ফ্লেয়ার এবং ০১ টি বন্দুকের অতিরিক্ত ব্যারেলসহ গ্রেফতার করে। এ সময় কালাম বাহিনীর প্রধান কালাম চৌধুরী ও তার কয়েকজন সক্রিয় সদস্য পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

.

যে ভাবে গ্রেফতার হয় জলদস্যূ প্রধান কালামঃ

কালাম ডাকাত এবং তার সহযোগীরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে, এদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জলদস্যূ কালাম বাহিনীর প্রধান কালাম ডাকাত ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিগত ১ মাস ধরে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ভোলা ও লক্ষীপুরে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী আরো বৃদ্ধি করা হয়। এরই একপর্যায়ে ৫ জুলাই র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১১ এর সমন্বয়ে একটি অভিযানিক দল চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন ৯১৯ গ্রীনভিউ আবাসিক এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জনৈক মোঃ মিনহাজ (৪৫), পিতা-মৃত সামসুল আলম এর ৩য়তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে আবুল কালাম প্রকাশ কালাম ডাকাতকে ২ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ০৫ রাউন্ড গুলি, ২০০০ পিস ইয়াবা, নগদ-১৬ লাখ ৩৯ হাজার৩০০ টাকা এবং ২৬ টি মোবাইল ফোনসহ গ্রেফতার করা হয়।

পরবর্তীতে কালাম ডাকাতের দেয়া তথ্য মতে চট্টগ্রামের হালিশহরস্থ সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী পোর্ট লিংক রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো ৬ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০ রাউন্ড গুলি এবং বিপুল পরিমান রকেট ফ্লেয়ার ও বাঁশি (যা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হয়) উদ্ধার করা হয়। এসময় তার কয়েক জন সহযোগীরা সু-কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পালিয়ে যাওয়া জলদস্যূদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

কে এই কালামঃ
কালাম ডাকাত প্রকাশ কালাম চৌধুরীর আদি নিবাস ছিল নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার জাহাজমারা ইউনিয়নের সুখচর গ্রামে। কালাম ডাকাতের বাবা ‘মাহে আলম’ এলাকার কুখ্যাত চোর ছিল। ‘মাহে আলমের’ অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় লোকজন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আসাদের নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে তার বাড়িঘর ভেঙ্গে তাকে হাতিয়া থেকে বিতাড়িত করেছিল। ‘মাহে আলম’ হাতিয়া থেকে পালিয়ে পরিবারসহ ভোলার মনপুরা থানার কালকিনিতে বসতি শুরু করে। পরবর্তীতে কালাম চৌধুরী বড় হয়ে পিতার মত ভোলার মনপুরায় চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠলে স্থানীয় লোকজন তাকে ভোলার মনপুরা থেকেও বিতাড়িত করেছিল।

জলদস্যূ কালাম বাহিনীর যত অপকর্মঃ

২০১১ সালের জুন মাসে মেঘনার মোহনায় কুখ্যাত জলদস্যূ ‘মুন্সিয়া ডাকাত’ কালামচরে নিজের আস্তানায় আভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হলে, কালাম চৌধুরী তার নিজের নামে নতুন বাহিনী সংগঠিত করে কালাম চরে আস্তানা গড়ে তোলে। ‘কালাম বাহিনীর’ মূল উদ্দেশ্যে ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা, মেঘনার মোহনায় এবং মেঘনা নদীতে ডাকাতি করা। কিন্তু কালাম বাহিনী নৌ-ডাকাতি ছাড়াও জেলেদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, খুন এমনকি নারীদের অপহরণ করে তাদের আস্তানায় নিয়ে গণধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ করত।

.

র‌্যাবের অব্যাহত অভিযানের কারনে প্রায় তিন বছর আত্মগোপনে থাকার পর চলতি বছর ইলিশ মৌসুমকে কেন্দ্র করে কালাম চৌধুরী তার বাহিনীকে নতুন করে সংগঠিত করে সাগরে ও মোহনায় ডাকাতি শুরু করে এবং জেলে ও মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে ফোন করে চাঁদা তুলতে থাকে। সে বিভিন্ন ভাবে জেলেদেরকে তার টোকেন নেয়ার জন্য হুমকি দিত যার প্রতিটি টোকেনের মূল্য মাস প্রতি ২০-৫০ হাজার টাকা। জেলে ও মৎস্যজীবীরা টোকেন সংগ্রহ ও টাকা প্রদান না করলে তাদেরকে অপহরণপূর্বক জিম্মি করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করত বলে সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

সাম্প্রতি গত ২৯ মে ২০১৭ তারিখে কালাম বাহিনী সাগরে ডাকাতি করতে গেলে ডাকাতির অর্থ ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জুনায়েত রুবেল (চরচেঙ্গা, হাতিয়া) নিজের দলের এক সদস্যকে কালাম চৌধুরীর নির্দেশে গুলি করে হত্যা করে এবং তার লাশ সাগরে ডুবিয়ে দেয় বলে জানা যায়। কালাম বাহিনী থেকে পালিয়ে আসা দুইজন জলদস্যূ এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। গত ১৩ জুন ২০১৭ তারিখ র‌্যাব-১১ কর্তৃক কালাম বাহিনীর নদীর কমান্ডার আমিরসহ ৫ জন জলদস্যূকে ৭ টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হলেও কালাম চৌধুরী তার কর্মকান্ড আরো বাড়িয়ে দেয়। নিঝুম দ্বীপের জনৈক কুদ্দুসের ছেলে রাসেলকে কমান্ডার বাানিয়ে পুনরায় তার কার্যক্রম শুরু করে এবং বেশ কয়েকজন জেলে ও মৎস্যজীবীদের অপহরণ করে এবং নৌকা জিম্মি করে মুক্তিপণ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। গত ২০ জুন ২০১৭ তারিখে বঙ্গোপসাগরের মেঘনার মোহনায় টোকেন না নিয়ে মাছ ধরার অপরাধে ৩ টি ট্রলার কালাম বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রথমে বাবর মাঝির ট্রলারে কালাম বাহিনীর সশস্ত্র জলদস্যূরা হানা দেয়। ঐ ট্রলারে থাকা ১৬ জন জেলের মধ্যে দুজন জেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর একই এলাকার আকবর মাঝি ও হাসান মাঝির ট্রলারে কালাম বাহিনীর সদস্যরা ডাকাতি করে। তারা জেলেদের ট্রলার থেকে বিপুল পরিমান মাছ ও ৫ জন জেলেকে অপহরণ করে একটি ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়। এই তিন ট্রলার থেকে অপহৃত ৫ জন জেলে হচ্ছে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের সমির উদ্দিন সমির মাঝি, মোঃ সালাউদ্দিন, ইসমাইল, ইমরান হোসেন এবং মোঃ শরীফ হোসেন। ইতিপূর্বে নোয়াখালীর বুড়িরচর নতুন বেড়ির সুইজ বাজার এলাকায় জলদস্যূ কালাম ও তার বাহিনীর জলদস্যূরা মিলে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ৩ জন গৃহ বধূকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ও তাদেরকে পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করে। এছাড়া হাতিয়ার রেহানিয়া গ্রামের এক গৃহবধূকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে। উল্লেখ্য, রেহানিয়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের কাছে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে অপহরণ করে ও তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং নগদ ৩০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ ২ লাখ টাকার মালামাল লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়।

জলদস্যূতার পাশাপাশি কালাম চৌধুরী মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। সাগরে ডাকাতির পাশাপাশি মাদকের বড় ডিলারদের কাছে ইয়াবার চালান টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেওয়া এবং ইয়াবা বিক্রির সাথেও তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

 

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print