
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এখনো হাটুঁ পানিতে তলিয়ে আছে। বিভিন্ন গুদামে পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার পণ্য। প্রায় ৯০ শতাংশ দোকান ও গুদামের ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে তারা বলেছেন, প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি ফটক দিয়ে দুই ফুট করে পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সেই পানিও পড়েছে কর্ণফুলীতে। ফলে বেড়েছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। এতে গত দুইদিনে প্রায় তিনশত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি ও জোয়ারে মূল সড়কের কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর সমান পানি। জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে ব্যবসায়ীরা গুদাম ও দোকানের প্রবেশমুখে দুই ফুট উঁচু দেয়াল তুলে দেন। তবে গতকালের পানির স্রোত সেই দেয়াল উপচেও প্রবেশ করে। অনেক ব্যবসায়ী দোকান ও আড়তের প্রবেশ মুখে পেঁয়াজ ও নানা ভোগ্যপণ্যের বস্তা দিয়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করেছেন।

দেখা গেছে, মধ্যম চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, চর চাক্তাই, পুরানো চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড, আছদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জের চান্দমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, আমির মার্কেট, নবী মার্কেট, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রামপট্টি, চালপট্টি ও এজাজ মার্কেটসহ আশপাশের দোকান ও গুদামগুলো পানিতে সয়লাব। তবে সবচেয়ে বেশি পানি হয়েছে ইলিয়াছ মার্কেট ও নবী মার্কেটে।
এছাড়া শুঁটকিপট্টি, চামড়াগুদাম, চালপট্টি এলাকার দোকান ও গুদামগুলোতে পানিতে ভাসছে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ, চাল-ডালসহ নানা ধরনের পণ্য।

খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের ব্যবসায়ী সজীব কুমার সিংহ বলেন, এরকম পানি আর কখনো দেখিনি। জোয়ারের পানি যাতে গুদামে না ওঠে সেজন্য আমরা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিলাম। সেইসব কোনো কাজ দেয়নি। আমার সব পণ্য মসলা জাতীয়। এই দুইদিনের পানিতে আমার অন্তত ৭৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর গত দুইদিন ব্যবসা তো ছিলই না।
ইলিয়াছ মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, ভেবেছিলাম রোববারের মতো জোয়ারের পানি হয়তো আসবে না। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও কাপ্তাই হ্রদের পানি ছেড়ে দেয়ায় এই বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমার প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদের বস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এর ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক দশ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: এনামুল হক বলেন, এমনিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ক্রেতা সংকট রয়েছে। তার ওপর জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীতে তিনটি নতুন খাল খনন করার কথা ছিল। সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, গ্যাস কর্তৃপ ,সিডিএ, বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করতে হবে। বরাদ্দের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা দেখতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।