
চট্টগ্রাম মহানগরী আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনিতে ফাতেমা আক্তার মীম (১২)কে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা রহস্য উম্মোচিত হয়েছে। মা বিবি রাবেয়া বেগমের সঙ্গে আর্থিক বিরোধের জের ধরেই প্রতিশোধ নিতেই মীমকে ৭ জন মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা করেছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক ছয়জনের স্বীকারোক্তি মতে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
মীমের মায়ের সাথে তাদের পার্শ্ববর্তী বিজয়ের মায়ের টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল। বিজয় এর প্রতিশোধ নিতেই তার অপর ৫ সঙ্গিকে নিয়ে মীমকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে।
এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার ছয়জন হলেন, বেলাল হোসেন বিজয় (১৮), রবিউল ইসলাম রুবেল (১৬), হাছিবুল ইসলাম লিটন (২৬), আকসান মিয়া (১৮), মো.সুজন (২০) এবং ভবনের কেয়ারটেকার মনিরুল ইসলাম মনু (৪৯)।

গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের মধ্যে তিনজন বখাটে বলে জানান পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার মুল নায়ক বিজয় ডিশ অপারেটর হিসেবে কাজ করেন।
ধর্ষণের ঘটনাস্থল বিশ্বকলোনির আই ব্লকের আয়শা মমতাজ মহলের কেয়ারটেকার মনিরুলকে ঘটনার পরপর গ্রেফতার করা হয়।
তার স্বীকারোক্তিমতে নগরী ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ জানান মনিরুল ও বিজয়সহ ঘটনার সঙ্গে মোট সাতজন জড়িত। সৈকত নামে একজনকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-পশ্চিম) মো.ফারুক-উল-হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মীমের লাশ উদ্ধারের পরই তার মা বিজয়কে সন্দেহ করেছিলেন। কারণ বিজয় আগেও একবার তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল।
বিরোধের শোধ নিয়েছে বিজয়, সেটা মীমের মা আমাদের বলেছেন। তবে বিজয়ের প্রতিশোধের সঙ্গে আরও কয়েকজনের বিকৃত মানসিকতাও এক্ষেত্রে কাজ করেছে বলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝতে পেরেছি।

গ্রেফতারের পর তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাতজনই ধর্ষণে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
এদিকে কেয়ারটেকার মনিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তিনদিন মঞ্জুর করেছেন।
এছাড়া গ্রেফতার হওয়া বাকি পাঁচজন মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো. নোমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দিতে সাতজনের সবাই শিশুটিকে ধর্ষণের তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন আকবর শাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উৎপল কান্তি বড়ুয়া।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক উৎপল জানান, গ্রেফতার হওয়া ৬ জন জানিয়েছেন, ২১ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার পর পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে হাছিবুল ইসলাম লিটন মীমকে ফুসলিয়ে বিশ্ব কলোনির আয়শা মমতাজ মহলের তিনতলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়।
ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বাসায় তালা দিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কেয়ারটেকারের কাছে ওই ফ্ল্যাটের বিকল্প চাবি ছিল। সেই চাবি ব্যবহার করে তারা মিমকে নিয়ে ঢুকে।
‘ফ্ল্যাটের মধ্যে ধর্ষণের সময় মিম চিৎকার করলে একজন তার মাথায় আঘাত করে। কয়েকজন মিলে তার গলা চেপে ধরে। মৃত্যুর পর সুজন লাশ টেনে ওই ভবনের সিঁড়িতে নিয়ে যায়। এরপর সবাই পালিয়ে যায়।
এদিকে মিমের মা বিবি রাবেয়া বেগম জানান, মাস ছয়েক আগে ব্র্যাক এনজিও থেকে রাবেয়ার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন বিজয়ের মা। কিন্তু শোধ না করায় সেই ঋণের বোঝা এসে পড়ে রাবেয়ার মাথায়। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েকবার ঝগড়া হয়েছে। বিজয় ৮-১০ দিন আগেও একবার মিমকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে।
ধর্ষণের পর নির্মম হত্যার শিকার ফাতেমা আক্তার মীম আকবরশাহ থানার ফাতেমাতুজ জোহরা হিফজুল কোরআন মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী ছিল।
*কিশোরী মীম হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আরো ৫জন
*বিশ্ব কলোনীতে ধর্ষনের পর কিশোরী হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা
*আকবর শাহ থানার কাছে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার
*বিশ্ব কলোনীর সেই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়