মামলার তথ্য গোপন করে ৬ কর্মচারীকে অবসর সুবিধা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইতোমধ্যে সাধন চন্দ্র নাথ (মেকানিক) নামে একজনকে ২৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ জানুয়ারী তাঁর চেকটি ইস্যু করা হয়।
তাজুল ইসলাম ও আবু বকর ছিদ্দিক (ফিল্ড এ্যাসিসট্যান্ট) নামে আরো দুই কর্মচারীর অবসর সুবিধার ফাইল প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তাও দপ্তরে অপেক্ষমান রয়েছে। এর আগেও আরো তিন কর্মকর্তাকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকার অবসর সুবিধা পাইয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ উঠেছে, অনৈতিক উপায়ে মামলা চলাকালীন ওই তিন কর্মচারীকে অবসর সুবিধা পেতে সহায়তা করে বন গবেষণা কর্তৃপক্ষ। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার পরেও তারা অবসর সুবিধা বাবদ প্রায় কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেন।
এর আগে অবসর সুবিধা পাওয়া তিন কর্মচারী হলেন চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান সহকারী আবুল কালাম, অফিস সুপারিটেনডেন্ট আহসান হায়দার, ডকুমেন্টেশন সহকারী খোরশেদ আলম মজুমদার।
অবসরের এসব টাকা উত্তোলনে সহযোগিতা করেন বন গবেষণার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বদিউজ্জামান, পে-অফিসার রেজাউল করিম ও বিভাগীয় কর্মকর্তা (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম।
তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক খুরশিদা আক্তার। ওই তিন কর্মচারীর অবসর ফাইল কীভাবে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তার স্বাক্ষরে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিম্ন দফতর থেকে অনাপত্তি পাওয়ায় তাদের ফাইলে স্বাক্ষর করা হয়।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ঢাকাস্থ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দফতরে কর্মরত অডিটর মাঈনুদ্দিন নিজামী বলেন, চট্টগ্রাম থেকে এ ব্যাপারে কোনো আপত্তিপত্র না আসায় আমরা অবসর সুবিধা প্রদান করেছি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেকানিক সাধন চন্দ্র নাথ, ফিল্ড এ্যাসিসট্যান্ট তাজুল ইসলাম ও আবু বকর ছিদ্দিক , প্রধান সহকারী আবুল কালাম, অফিস সুপারিটেনডেন্ট আহসান হায়দার, ডকুমেন্টেশন সহকারী খোরশেদ আলম মজুমদারসহ ১১ কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় পাহাড় কাটা ও সরকারি জমি দখলের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়।
চান্দগাঁও ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাফেজ আহমেদ বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা (০৬/২/০৭) দায়ের করেন। এরপর প্রধান সহকারী আবুল কালাম, অফিস সুপারিটেনডেন্ট আহসান হায়দার, ডকুমেন্টেশন সহকারী খোরশেদ আলম মজুমদার এ তিন কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।
সরকারি চাকরিবিধি মতে, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভাগীয় অথবা ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হয়। কিন্তু ওই তিন কর্মকর্তার ব্যাপারে তা করেনি কর্তৃপক্ষ। উল্টো কারাগারে থাকাকালীন তারা পূর্ণ বেতন সুবিধা ভোগ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর জামিনে এসে তারা পুনরায় কাজে যোগ দেন।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সাধন চন্দ্র নাথ , তাজুল ইসলাম, আবু বকর ছিদ্দিক ২০১৭ সালে ,আবুল কালাম ২০০৯ সালে, আহসান হায়দার ২০১৩ সালে এবং খোরশেদ আলম মজুমদার ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
এসব কর্মকর্তার প্রত্যেকেই প্রায় ১৫ লাখ থেকে শুরু করে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অবসর সুবিধা উত্তোলন করেন এবং আরো দুজন অপেক্ষমান রয়েছেন। যার পরিমাণ প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি।
সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে থাকার পরেও কেন তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় কর্মকর্তা (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি কোনো পক্ষ তাকে অবহিত করেনি। এ ছাড়া নিচের সকল দফতর থেকে অনাপত্তি পাওয়ার পরই তাদের ফাইল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্ররণ করা হয়।
বন গবেষণা কেন্দ্রের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গবেষণা ইনস্টিটিউটের বড় কর্তারা মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে এসব কর্মকর্তাকে অবসর সুবিধা প্রদানে সহায়তা করেন।
এ ছাড়া নিমাই নামের বন গবেষণার অবসর প্রাপ্ত এক কর্মচারী এসব কর্মকর্তার অবসর সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ইনস্টিটিউটের বর্তমান চাকুরীরত কর্মচারী না হয়েও তাঁর মাধ্যমে অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদেও অবসর সুবিধার ফাইল ঢাকায় তার মাধ্যমে নিয়ে যায় । সেখানে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তাদের সাথে মোটা অংকের অর্থ বিনিময়ের পর এসব ফাইল অনুমোদন দেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত কর্মচারীরাও হতবাক বলে জানান কয়েকজন। এ ব্যাপারে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বদিউজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে কেউ আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে অবহিত করেননি। কেউ যদি আমাকে না জানায় বা কোনো বিষয় গোপন করে সে ক্ষেত্রে আমার করার কিছু থাকে না।
