
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক সহকারী দারোগার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ১০ লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রীকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করছে সিএমপি’র ইপিজেড থানার এ এস আই রেজাউল ইসলাম মজুমদার ।
এ ব্যাপারে নির্যাতিত স্ত্রী তানজিনা পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তাঁকে কোন প্রকার আইনি সহায়তা দিচ্ছেনা পুলিশ। উল্টো অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে তানজিনাকে রীতিমত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে রেজাউল। বর্তমানে ৫ মাসের এক শিশু সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন নির্যাতিত এ নারী।
এ দিকে পুলিশ স্বামী রেজাউলের অব্যাহত নির্যাত আর প্রাননাশের হুমকির কারনে গত পরশু নগরীর বায়েজিদ থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছে নির্যাতিতা তানজিনা।
পুলিশ কমিশনারের নিকট তানজিনার দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, চট্টগ্রামের অভিজাত ক্লাব চট্টগ্রাম ক্লাবে বিউটিশিয়ানের কাজ করার সময় পুলিশ কনস্টেবল রেজাউলের সাথে পরিচয় হয় তানজিনার । পরিচয় থেকে প্রেম এর পর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দুজন আবদ্ধ হন পরিণয়ে।

২০১২ সালে ১০ লাখ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে তানজিনাকে বিয়ে করেন রেজাউল। নগরীর বায়েজিদ চা বোর্ড সংলগ্ন ড্রিমল্যান্ড আবাসিক এলাকার মাবিয়া ভবনের ৫ম তলায় বসবাস করেন তারা। সংসার জীবনে ৫ মাস বয়সি একটি পুত্র সন্তান রয়েছে তাদের।
পাঠক ডট নিউজের সাথে আলাপকালে তানজিনা জানান, বিয়ের পর কিছু দিন বেশ ভালই কাটছিল তাদের। দু’জনই নিজ নিজ পরিবারের সম্মতি ছাড়াই বিয়ে করেন। এর মধ্যে রেজাউল এ এস আই পদে পদোন্নতি পান। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দক্ষিন জোনে কর্মরত ছিলেন রেজাউল।
এর মধ্যে তানজিনাকে না জানিয়ে নিজ পরিবারকে খুশি করতে রেজাউল তার খালাতো বোনকে পূনরায় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর রেজাউলের চলা ফেরা এবং আচার আচরনে সন্দেহ হয় তানিজনার। গোপনে খবর নিয়ে তানজিনা জানতে পারে রেজাউল দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তখন থেকে দুজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তানজিনা রেজাউলের নিকট দ্বিতীয় বিয়ের কারন জানতে চা্ইলে বিরোধ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে রেজাউল তানজিনাকে নিজের আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
বিষয়টি নিয়ে সিএমপি’র দক্ষিন জোনের উপ পুলিশ কমিশনার এস এম মোস্তাইন এর নিকট অভিযোগ করার পর ঘটনা তদন্ত শেষে রেজাউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর পর থেকে রেজাউল তানজিনার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করা তানজিনা এত মোটা অংকের টাকা যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
অভিযোগে বলা হয়, রেজাউল সব সময় তানজিনাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন শুরু করে। প্রায় সময় তাকে শারিরীক নির্যাতন করা হয়। তানজিনা জানান, প্রতি নিয়ত বাসায় দরজা বন্ধ করে তাকে বেদম মারধর করে রেজাউল। শুধু শারিরীক নির্যাতন নয় ,তানজিনা এবং তার ৫ মাস বয়সী শিশুর ভরনপোষন ঠিকমত দেয়না রেজাউল।
বর্তমানে স্বামীর নির্যাতনের বিচারের দাবীতে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তানজিনা। তানজিনা জানান, শুধু স্বামী রেজাউল নয় তার পরিবারের প্রায়ই সব সদস্য তাকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে রেজাউলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ছাড়াও আরো নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদে একজন এএসআই হয়েও তার রয়েছে দুটি মোটর সাইকেল । এর মধ্যে একটি আমদানি নিষিদ্ধ ৬ লাখ টাকা দামের কেটিএম ডিউক রয়েছে।
এ ছাড়া ভারতের চোরাই মোটর সাইকেল পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেজাউলের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি অনেকটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় বলেন, তানজিনা তাঁকে নিয়ে জোর করে সংসার করতে চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে রেজাউলকে নগরীর ইপিজেড থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান, বন্দর জোনের আরও মাজহারুল ।
নগরীর বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, বিষয়টি নিয়ে রেজাউলের স্ত্রী তানজিনা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এটি সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর) তদন্ত করছেন। তদন্তে ঘটনা প্রমানিত হলে রেজাউলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।