ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

রোহিঙ্গা সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব ও আসন্ন বাজেট” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত বিলম্ব হবে এই তিন খাতসহ নানা খাতে ততই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

আজ রবিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ সেন্টমার্টিন হোটেলের কাকলি হলে অনুষ্ঠিত নাগরিক সম্মেলনে এমন আশংকা করেন তিনি। সিপিডি এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যৌথ উদ্দ্যোগে আয়োজন করে নাগরিক সংলাপ। প্রফেসর আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন, সনাক চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী ও জেনারেল মেজর অব মো. এমদাদুল ইসলাম সংলাপে অংশ নেন।

.

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনসংখ্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা, স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরুর পর সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে এ সংকট তৈরি হয়।

ফাহমিদা খাতুন জানান, চলতি বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৩২২ মিলিয়ন ডলার এসেছে বিদেশি দাতা সংস্থার মাধ্যমে। এসময় পর্যন্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ সরকার ব্যয় নির্ধারণ করেছে ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশ বিদেশী দাতা সংস্থার সাহায্য এলেও ব্যয় নির্ধারিত বাকি অর্থ আমাদের দেশ থেকে করা হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার হিসেব কষে বাংলাদেশ সরকার চলতি বছরের বাকি ৯ মাসের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য চেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের যে ঢল শুরু হয়েছে, তা এখনো থামেনি। আবার প্রত্যাবাসন শুরুতেও তেমন অগ্রগতি নেই। মায়ানমারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিমাসে যদি ৩০০ জন করে রোহিঙ্গা ফেরত যায় তাহলে ২০২৫ সালের আগে এই সংকটের সমাধান হবে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী সাত বছর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় হবে ৪ হাজার ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে ক্যাম্প নির্মাণ করতে ২৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল।

জানা গেছে, মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভাসানচর দ্বীপটিতে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাসস্থান সুবিধা, সুপেয় পানি, পয়োব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন, পুকুর খনন, স্কুল, মসজিদ, অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন, সাইক্লোনশেল্টার স্টেশন, দুইটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। এসব কাজে সরকারের ব্যয় ১০ কোটি টাকা।

.

অনুষ্ঠানে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় সমাধানযোগ্য নয়, এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। তিনি বলেন, আমরাও চাই যেসব রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে আমাদের দেশে এসেছে তাদের নিরাপদে তাদের দেশে ফিরিয়ে দিতে। তবে সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্থায়ী আত্তীকরণের পরিকল্পনা নয় বরং মানবতার সংকট বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেটে কিছু বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করছি। তবে বিদেশি সাহায্য কতখানি রোহিঙ্গাদের উপকারে যাচ্ছে আর কতখানি আমাদের ব্যবস্থাপনা খাতে যাচ্ছে এটার বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে।

তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ষড়যন্ত্রের মধ্যে যেন না পড়ে সেদিকটাই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যেই অনেকই ধারণা করছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আর যাচ্ছে না। যদি তাই হবে তবে ধীরে ধীরে বৈদেশিক দাতা সংস্থা থেকে ত্রাণ অনুদান আসা বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের উপর বোঝা সৃষ্টি হবে। তখন সরকার কী করবে? এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া দরকার।

রোহিঙ্গা সংকটে পরিবেশের ওপর প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এরইমধ্যে ৩ হাজার ৭শ ১৩ একর বনভূমি ক্ষতি হয়ে গেছে। আগামী ২০২৫ সালে তা আরো ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। দেবপ্রিয় বলেন, ‘অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় কিংবা দেশজ আয়ের পুরোটাই রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করলে হয়ত অর্থনীতিতে ভারসাম্য আসবে। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের কিছুই আর বাংলাদেশের জনগণের জন্য থাকবে না। মোট বাজেটের ২ শতাংশ যদি শিক্ষা এবং ১ শতাংশ যদি স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মোট বরাদ্দের তিনগুণ কিংবা তারও বেশি।

.

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুদান বা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থাগুলো অন্য সেক্টরের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। আরও নমনীয় হয়ে অনুদান প্রদান করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প বা এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক চোরাচালান বন্ধে জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে নারী পাচার, নারীদের নিরাপত্তাহীনতা, শিশুদের পুষ্টিহীনতা ও সুরক্ষার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে সেখানকার বাংলাদেশিরা শ্রমবাজার হারাচ্ছে। যে শ্রমিকের দিনে ইনকাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা তার আয় এসে ঠেকেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কারণ সস্তায় রোহিঙ্গারা শ্রমবাজারে ঢুকে পড়েছে। সুতরাং স্থানীয় জনসাধারণকে রক্ষার জন্যও তো পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংলাপে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটে বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন ইউনিভার্সিটি অব সাইয়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড.আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, নারীনেত্রী নূরজাহান খান ও জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্জুরুল আমিন, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print