
চট্টগ্রাম সংসদীয় ৮ আসন থেকে এবারের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনোয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পুত্র মুজিবুর রহমান। সাথে আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এস,এম আবুল কালাম।
এদিকে বিএসসি পুত্র মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম ৯ আসন থেকেও নির্বাচনে আগ্রহী যদি তার বাবাকে ঐ আসন থেকে মনোনোয়ন না দেয়া হয়। আর তার বাবাকে মনোনোয়ন দিলে তিনি চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনোয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান ও নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে জৌষ্ঠতার কি থেকে মোর্শেদ খান গুরু হিসেবেই পরিচিত আবু সুফিয়ানের কাছে। এদিকে একই আসনে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান এরশাদ উল্লাহ।
চট্টগ্রাম ৮ সংসদীয় আসন হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২৮ নং আসন। চট্টগ্রাম ৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪,৫,৬,৭ এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়ারতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরনদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন, আহল্লা, করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে মহাজোটের মইন উদ্দিন খান বাদল শতভাগ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালেও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তাকে আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে জিতে এমপি নির্বাচিত হন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাসদ নেতা বাদলকে আবার মহাজোটের মনোনয়ন দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো স্থানীয় ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
তখর দল থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও নগর আওয়ামী লীগ কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

এবার এ আসন থেকে আবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। কেন মনোনোয়ন চান-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার এলাকা ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিলো, সে প্রত্যাশা পুরণ হয়নি। যে সাংসদ ক্ষমতায় আছেন, সে সাংসদ এলাকার কোন উন্নয়ন করতে পারেননি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও সম্পৃক্ততাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এলাকার জন্য কাজ করতে চান।
অতীত জীবনের কথা বলতে গিয়ে এই নেতা বলেন, ১৯৬২ সালে ছাত্ররাজনীতি করার সময় গ্রেফতার হয়েছিলাম। ৬৬ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হই। এরপর ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ও ১৯৭২ সাল থেকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শুরু করি। এরপর ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব নেই।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পটিয়া থেকে মনোনয়ন পেলেও কিছু ভোটের জন্য তিনি নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারেননি। আর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে নির্বাচিন করতে চাইলেও মহাজোটের শরীককে আসটি ছেড়ে দিতে হয়।
তিনি এ আসনের বর্তমান সাংসদ মইন উদ্দিন খান বাদলের সমালোচনা করে বলেন, বাদল জামায়াত বিএনপি পরিবারের। তারই আশ্রয়ে জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী বোয়ালখালিতে লুকিয়ে ছিলো।
তিনি বাদলের সমালোচনা করে আরো বলেন, কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের জন্য যে তদবীরের প্রয়োজন ছিলো তা তিনি করেননি। বাদল নিজেকে প্রশাসনিক কাজে সম্পৃক্ত করেনি। তিনি বোয়ালখালীকে পৌরসভা করার জন্য যে শ্রম দিয়েছেন, তাতেও বিরোধীতা করেছেন বাদল। তার গায়ে যুদ্ধাপরাধীর তকমা।
মোসলেম উদ্দিন খান আরো বলেন, মইন উদ্দিন খান বাদলের চাচা মোজাফ্ফর খান ১৯৭১ সালে শান্তিবিরোধী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি বাদলের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তার যে ছোঁয়া তা বোয়ালখালীতে লাগেনি। পাশের পটিয়া উপজেলা যতোটা উন্নত, তার সিকিভাগ ও উন্নত হয়নি বোয়ালখালী। তাই মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন বলে জানান আওয়ামীলীগের এই নেতা।
তবে এই আসনের বর্তমান সাংসদ বাদলের প্রতি বিষেদাগার করলেও তিনিও বিভিন্নসময় জনগনের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে নানা দূর্নীতর।
চট্টগ্রামে গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ আট থেকে দশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিলো। চট্টগ্রামের সাত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ আরো আছে যে, তারই যোগজাশসে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিলো একেকটি মনোনয়নের দাম। বিষয়টি নিয়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ করেছিলেন। এরপর অনান্য উপজেলার আগ্রহী প্রার্থী এবং ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতারাও মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন।
এদিকে গত বছরে ১৯ নভেম্বর নগরীর লালদিঘি ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় অনুষ্ঠানশেষে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। মিডিয়ায় বক্তব্য দেয়ার সময় বিরক্ত করায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে ধাক্কা দেয়াকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছিত হন মোছলেম উদ্দিন। ঘটনাস্থল থেকে সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীনের গাড়িতে করে লালখান বাজারের বাসায় যাওয়ার পথে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন নেভাল এভিনিউতে মোটরসাইকেল দিয়ে ফের গতিরোধ করে হামলার চেষ্টা করে দুষ্কৃতকারিরা। আফসারুল আমীন তাদেরকে ধাওয়া দিলে দুষ্কৃতকারিরা পালিয়ে যায়।
এছাড়াও ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের শুরুতে জাবেদের সংসদীয় এলাকা আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।
জাবেদ ওই বছরের ২৬ আগস্ট বোয়ালখালীর একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ক্ষোভ ঝাড়েন মোছলেম উদ্দিন আহমদের কর্মকান্ড নিয়ে। জাবেদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য এবং মোছলেম সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। মোছলেম বিরোধীরা জাবেদের কাতারে শামিল হন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিত্বের দায়িত্বে দীর্ঘদিন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাবেদের প্রয়াত পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। মোছলেম উদ্দিন ছিলেন সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বাবুর মৃত্যুর পর জাবেদ বাবার আসনে সাংসদ হয়ে প্রতিমন্ত্রী হন। আর মোছলেম সভাপতি পদে আসীন হন।
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও ইউপি নির্বাচনে বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তোষামোদী রাজনীতি করতে রাজি না। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি। আমার ভিতরে তাই একটা অহংবোধ কাজ করে। আর আমি যদি স্বচ্ছ রাজনীতি না করতাম তাহলে ২৫ বছর সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে থাকতে পারতাম না।
অন্যদিকে এই সিনিয়র নেতার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে মনোনোয়ন প্রত্যাশী নুরুল ইসলাম বিএসসি পুত্র মুজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম ৯ আসন থেকে ও মনোনোয়ন প্রত্যাশী। আলাপকালে তিনি জানান, চট্টগ্রাম ৯ আসন থেকে আমার বাবা মনোনোয়ন প্রত্যাশী। উনাকে না দিলে আমি চাই। যদি ৯ আসন থেকে না পাই তাহলে চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে আমি মনোনোযন চাইব।
জানা গেছে, মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের কোন পদে নেই। তিনি বলেন, পদে না থাকলেও বাবার দীর্ঘ রাজনীতির পদাঙ্ক অনুসরন করে তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে এসেছেন। এলাকার লোকের সেবা করে আসছেন। বাবার পরে পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের হাল ধরার প্রয়োজন আছে। আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি। তাই মনোনোয়ন চাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার বলে জানান তিনি।
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে তিনি তার বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানান তিনি। মুজিবুর রহমান আরো বলেন,, তার বাবা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে ভ’মিকা রেখেছেন সে কথা চট্টগ্রামবাসীর জানা। তার বাবার একটি ইচ্ছে, মোবাইল অ্যাম্বুলেন্সে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা। ঘরে ঘরে গিয়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ে খোঁজ নিবে এ মোবাইল অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসক ও নার্সরা। তিনি তার বাবার এ স্বপ্নকে পূরন করতে চান।
তিনি আরো বলেন, তার বাবার কাজের সৃষ্টিগুলো ভিন্ন। যে পথ ধরে তার এগিয়ে আসা। তিনি নিজে চট্টগ্রাম হাজেরা-তুজ কলেজ নির্মান করেছেন। যে কলেজ ভালো ফলাফলে বোর্ডের শীর্ষ বিশে অবস্থান থাকে। তিনি নিজে নির্মান করেছেন চিটাগং কিন্ডারগার্টেন। স্বপ্ন আছে, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চান্দগাঁওবাসীর শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে একই আসন থেকে মনোনোয়ন প্রত্যাশীর দলে আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এস,এম আবুল কালাম
এদিকে এ আসনে বিএনপিতে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী নয় বলে অভিমত দলীয় নেতাকর্মীদের। দলীয় চেয়ারপার্সনের কড়া নির্দেশনার পরও তেমন কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি দলটি কিংবা অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের। অন্যান্য যে কর্মসূচিগুলো পালিত হয়, তাও ছবি-নির্ভর। কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করছেন অনেকেই।
দেখা গেছে, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্ম-মৃত্যু ও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে কাগজে-কলমে। দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারিং ছাড়া তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
কিন্তু এই বোয়ালখালী উপজেলাই একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিলো। এরকম শক্ত অবস্থানে আন্দোলন সংগ্রামে কর্মসূচি পালিত না হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম. মোর্শেদ খান ও এরশাদউল্লাহ’কে ঘিরে দ্বিধাবিভক্তি দেয়া দেয় বোয়ালখালী বিএনপিতে। উপজেলা থেকে তৃণমূল পর্যায়ে উভয় গ্রুপের রয়েছে আলাদা আলাদা কমিটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এরশাদউল্লাহ বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও মোর্শেদ খানের দেখা না মেলার অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের।
তিনি বছর দুয়েক আগে ইফতার মাহফিলে যোগদান করা ছাড়া কালেভদ্রেও দলীয় কর্মসূচিতে যোগদান না করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
জানা যায়, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও আহল্লা-কড়লডেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচা ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার গাজীপুর থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর এরশাদউল্লাহ গ্রুপের আহবায়ক মো. আজিজুল হক চেয়ারম্যান মোরশেদ খান গ্রুপে যোগ দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন।
কিছুদিন পর এ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ খানের সাথে তাঁর মতবিরোধ সৃষ্টি হলে এ গ্রুপে উপ-দলীয় কোন্দল দেখা দেয়। এতে বিএনপির দুর্গখ্যাত দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম উপজেলা বোয়ালখালীতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে চিড় ধরতে শুরু করে। সৃষ্টি হয় দলীয় কোন্দলের।
এ অবস্থায় বিএনপিই বিএনপির প্রতিদ্ব›দ্ধী হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নিবার্চন প্রতিরোধ করার আন্দোলনে ত্রিধাবিভক্ত বিএনপি পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করতে মাঠে নামলেও উপজেলার গোমদন্ডী ফুলতলীতে ইসমাঈল নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ায় মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়ে উপজেলা বিএনপি।
জানতে চাইলে মোরশেদ খান গ্রুপের অনুসারী উপজেলা কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা আন্দোলন করব, নেতারা রাজধানীতে বসে থাকবেন, তা তো হয় না। ।
এছাড়া মোরশেদ খানের ভাইপো বিশিষ্ট শিল্পপতি জহির উদ্দীন খানের ছেলে ২০ দলের পক্ষে মনোনয়ন চাইতে পারেন। বিগত নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ সহজেই হাল ছাড়ছেন না। ত্রিধারায় বিভক্ত বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি নেতারা অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ পালন করছেন।
উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক শওকত আলম বলেন, যার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম হবে, সে এরশাদ ভাইকে দল থেকে বহিষ্কার করে রেখেছে বিএনপি’র সুবিধাভোগীরা। তবে সুযোগ পেলে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে তার জয় নিশ্চিত বলে জানান শওকত আলম।
জানা যায়, একসময় এরশাদ উল্লাহ একসময় মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে ২০০৮ সালে দলের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন এই বিএনপি নেতা। কিন্তু এখন তিনি দলের কেউ নন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বোয়ালখালীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার ও ভাইস চেয়ারম্যান মনজুর মোরশেদ খানের গাড়িতে হামলার ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। তবে দমবার পাত্র না হয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন পৃথক সমর্থকগোষ্ঠী।
বিএনপির বহিষ্কৃৃত এ নেতা হলেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ। তবে মোরশেদ খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নগরীর চান্দগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম খান বলেন, দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কৃত হয়েছেন এরশাদউল্লাহ। তাই তিনি দলের কেউ নন। পরে এরশাদ উল্লাহ নিজের পদ ফিরে পান।
এদিকে মনোনয়ন প্রত্য্শাী নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আমি অবশ্যই চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে দলের চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে মনোনয়ন চাইব। মহানগর কমিটিতে আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই আমাকে আগামী সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনোয়ন দিয়ে আমাকে মূল্যায়ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে মোরশেদ খানের মনোনয়ন প্রার্থী হলে তিনি কি করবেন, এ প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, মোরশেদ খান আমার গুরু। আর আমি শিষ্য। তাই গুরু শীষ্যর মনোনোয়ন দৌড়ে কে এগিয়ে থাকে, দেখা যাক।
*চট্টগ্রাম-৮ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি !