
ঢাকা চট্টগ্রামে ছয়দফা জানাযার নামাজ শেষে হাটহাজারীর লালিয়ারহাট এলাকায় পিতার কবরে শায়িত হলেন জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য ও সাবেক চীফ হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।
আজ মঙ্গলবার বাদ জহুর লালিয়ারহাট মাদ্রাসা ময়দানে তাঁর শেষ জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার পিতা সৈয়দ আবদুস সাত্তারের কবরেই তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ১১টায় হাটহাজারী পার্বতী স্কুল মাঠে পঞ্চম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয়নেতাকে শেষবারের মতো বিদায় দিতে হাটহাজারীর বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দল মত নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষজন উপস্থিত হন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো স্কুল মাঠ। এমপি সাহেবের মুখ দেখতে ভিড় করেন সকাল থেকে। সবার মুখে একটিই কথা ওয়াহিদ সাহেবের মতো মানুষ হাটহাজারীর আর পাবে না। নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অভিভাবক হারিয়ে অনেকে আজ বাকরুদ্ধ।
জানাযার আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মন্ত্রী বলেন, ‘সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের সাথে আমার সম্পর্ক ৪০ বছরের। দলের সহকর্মী হিসেবেও কাজ করেছি আমরা। আবার প্রতিপক্ষ হয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছি। হেরেছি আবার জিতেছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনদিন সম্পর্কের অবনতি হয়নি। সেই ৪০ বছর আগে যেভাবে বদ্দা ডাকতো ঠিক মৃত্যুর আগ পর্যন্তও সেই ডাকে আমাকে সম্বোদন করতেন। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ছিলেন সৎ, সজ্জন ও পরোপকারী লোক। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিলো গণমানুষের সাথে কাজ করা। তাদের সুখে দুঃখে ছুটে যাওয়া। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সে এভাবে জীবন অহিবাহিত করেছেন। তার কোন লোভ ছিলো না। ছিল না অহংকার্ ী।হাটহাজারীর মানুষ তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা হাটহাজারীকে আজ শঅন্তির জনপদ বলে আখ্যা দিয়ে থাকি। আর এ শান্তির জনপদ গড়ে তুলেছেন সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। হাটহাজারীর মাটি ও মানুষ ওয়াহিদুল আলমকে ভুলতে পারবে না।
সাবেক মন্ত্রী মীর মো.নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাই ওয়াহিদুল আলমের সাথে হাটহাজারীর মানুষের সাথে ছিলো আত্মার সম্পর্ক। তার প্রমাণ হিসেবে ওয়াহিদুল আলম দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও চারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। একদিনের জন্যও তিনি হাটহাজারীর মানুষের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেননি। দল ও মতের উর্ধেব উঠে সকল মানুষকে তিনি কাছে টেনে নিতেন। তার কারণেই হাটহাজারীর আজ শান্তির জনপদ।
জানাযায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী বলেন, হাটহাজারীকে শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়াহিদ ভাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। যেকোন সমস্যায় তিনি দল মতের উর্ধে¦ উঠে সবাইকে আকলে রেখেছেন। আজকে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে। শান্তির জনপদ যাতে অশান্তি না হয়। তা না হলে ওয়াহিদ ভাই কষ্ট পাবেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল মতের উর্ধে¦ উঠে হাটহাজারীর উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
জানাযার শুরুতে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ওয়াহিদুল আলমের ছোট ভাই সৈয়দ নেছার আহমেদ ভুলু, সৈয়দ শহীদ উদ্দিন দুলু।
জানাযায় অংশগ্রহণ করেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো.নাছির উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী,কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনালেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী,উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মীর হেলাল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, হাটহাজারী কলেজের অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দিন সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। দাফনের পর সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কবরে বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হয়।
উল্লেখ্য রোববার ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর।
যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সহ সভাপতি হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে হাতেখড়ি সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের। পরে বিএনপি থেকে হয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। ১৯৯১ সালে প্রথম ধানের শীষে নির্বাচন করে সঙসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬, ২০০১ সালে সংসদ সদস্যসহ মোট চারবার নির্বাচিত হন। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনসহ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। সর্বশেষ বিএনপির কাউন্সিলে তাকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়। সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের বড় মেয়ে ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য।