
আবদুল্লাহ আল জামিলঃ
স্বাক্ষরতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ত ও বরাদ্দ দিলেও পাশপাশি এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামে দুটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গরীব ও মেধাবীরা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে সেই বেসরকারি কলেজে দুটি হচ্ছে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ও চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ।
প্রতি বছর মাধ্যমিক হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অনুপাতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে এই বছর ১ লাখ দুই হাজার ৩৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে। তম্মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮০৯৪ জন। এছাড়া জিপিএ ৫ ব্যতিত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি কলেজে ভর্তির কোন সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম খরচের বিষয়টি সামনে আসে যা অভিভাবকদের নিকট অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামর্থ্য অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকদের বেগ পেতে হয়।
বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকগণ আরও বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। এই সকল বিষয়কে মাথায় রেখে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানের জন্য বিশেষায়িত বিজ্ঞান কলেজের যাত্রা শুরু হয়। যার সাথে ভিন্ন মাত্রায় ছিল ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার সংযোজন।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ জাহেদ খান জানান-ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞানের জন্য বিশেষায়িত কলেজে স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। যা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিকট এখন একটি আস্থার নাম। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অল্প সময়ে সুপরিচিতি লাভ করে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ও সিটি বিজ্ঞান কলেজ।
তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কলেজটি বিজ্ঞান শিক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেই চলেছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক র্যাঙ্কিং এ ১৮ তম স্থান এবং বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ। এছাড়াও বিশেষায়িত কলেজ হিসেবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২য় স্থান দখল করে। ২০১৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের পাসের হার ছিল প্রায় ৯২%। সিটি এডুকেশন গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ, সিটি বিজ্ঞান কলেজ ও চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ। ফলাফলে বিচারে সিটি বিজ্ঞান কলেজও বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এবং ব্যবসা শিক্ষার বিশেষায়িত কলেজ হিসেবে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজেরও রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।
অল্প সময়ে সাফল্য অর্জনের পেছনে রয়েছে সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রয়াস তাই সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আগামীতে আরও ভালো ফলাফল উপহার দিতে পারবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মাদ জাহেদ খান।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন- এই বছর এসএসসিতে জিপিএ ৫ ও ১০৫০ নম্বর প্রাপ্তদের চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ও চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে সম্পূর্ণ বিনা বেতনের পড়ার সুযোগ দিবেন।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমাদের ডিজিটাল ক্যাম্পাস শুধু শ্লোগান নয় বরং তা বাস্তব ও মানসম্মত। তিনি আরও জানান, ২০০৮ সাল থেকে কলেজটি একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে প্রতি বছর ঈর্ষণীয় ফলাফলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে কলেজটি। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সগৌরবে এই বছর কলেজটির প্রায় ১০ বছর পূর্তি হলো। শুরু থেকেই এই কলেজের অগ্রযাত্রায় আস্থা রাখার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থার মূল্য রাখতে আমি খুবই সচেষ্ট আছি। এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন এবং তা স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করেছে বলে তিনি দাবি করেন। কারণ প্রতিবছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলে তার প্রতিফলন ঘটেছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয় বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। বিগত বছরের ফলাফল, পড়ালেখার মান, ডিজিটাল ক্লাসরুমসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা এবং স্বল্প খরচের কথা বিবেচনা করলে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজই সেরা কলেজ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করে সাফল্যের সাথে এমবিবিএস,ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এবং দিন দিন এই সাফল্যের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন-জীবনের কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সঠিক উপায়ে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি তিনি অভিভাবকদের সচেতনতার বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, ক্লাসনির্ভর পাঠদান পদ্ধতি এবং আধুনিক শিক্ষা উপকরণের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প ধারা সৃষ্টি করেছে। ফলে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ হতে অনেক শিক্ষার্থী এইচ এস সি তে এ+ পেয়েছে, যাদের অনেকেই এসএসসি-তে এ+ প্রাপ্ত ছিল না। শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা সিবিসি-কে মূল্যায়ন করার অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে তিনি মন্তব্য করেন। রাশেদুল ইসলাম ও সৈয়দ মারুফ উল হাসানের মত অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চুয়েটে অধ্যয়নরত। যারা চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী। এই কলেজে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষার মাধ্যমে অল্প সময়ে সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব যার ফলে একজন শিক্ষার্থী অনেক এগিয়ে থাকে। এছাড়াও শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করছে বলেও তারা উল্লেখ করে। এই কলেজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- শিক্ষার্থীদেরকে কোনো প্রাইভেট পড়তে হয় না। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ এসি ক্লাসরুম। সুবিশাল ক্যাম্পাস, ওয়াই-ফাই সুবিধা, আইটি ও বিষয়ভিত্তিক ব্যবহারিক ল্যাব।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল মেধাবি শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি গঠন করেছেন জেএফ ট্রাস্ট। এর মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে- ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা এবং সৃজনশীল শিক্ষার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দির উপযুক্ত একটি আলোকিত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখা। এছাড়াও ট্রাস্টের মাধ্যমে দরিদ্র কৃষক, রিক্সা চালক, দিনমজুর, গার্মেন্টস কর্মী,ট্যাক্সি চালক, বাস চালকসহ যে কোন নিম্ন আয়ের পরিবারের মেধাবি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় সহায়তা দিয়ে গড়ে তোলা।
কলেজটির ট্রাস্টি বোর্ডে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ আবু জাফর চৌধুরী। তিনি বলেন, মান সম্পন্ন পাঠদান ও ভাল ফলাফলের কারণে বিজ্ঞান কলেজ সবার নজর কেড়েছে। ফলে এখন বিজ্ঞানের সেরা শিক্ষার্থীরা এ কলেজে পড়তে আসছে।
বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে বিজ্ঞান কলেজ আস্থার স্থানটি দখল করেছে। পড়ালেখা ও ফলাফলের মানে এই কলেজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য চট্টগ্রামের সেরা কলেজ। কলেজটিতে এসি ক্লাসরুমসহ সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। যে কোন মানের শিক্ষার্থীর জন্য এই কলেজ একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বলে তিনি জানান। একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এই কলেজে রয়েছে উন্নতমানের হোস্টেল সুবিধা। সিটি এডুকেশন গ্রুপের যে কোন শিক্ষার্থীরা এর সুবিধা পাবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা, পাহাড়ি ও অন্যান্য কোটায় বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি করানোর সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া অদম্য মেধাবীদের জন্যও রয়েছে বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা। অদম্য মেধাবীদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হোস্টেল সুবিধাসহ পড়ালেখার সুযোগ। মেয়েদের জন্য রয়েছে আলাদা ক্যাম্পাস, সংরক্ষিত ২৫০ আসনসহ মেয়েদের জন্য বিশেষ সুযোগ–সুবিধা। ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এইচএসসিতেই মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতির জন্য ১ম ও ২য় শিক্ষা বর্ষের সুবিধাজনক সময়ে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে।