ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

দেশের ৪৩শতাংশ শিশু শালদুধ বঞ্চিত

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

বুুদ্ধিদীপ্ত, সুস্থ-সবল বাড়ন্ত শিশু গড়ে তুলতে হলে শিশু জন্মানোর সাথে সাথে শিশুর মুখে দিতে হবে শাল দুধ। শালদুধ হলো একটি শিশু প্রথম টীকা। এই শালদুধে রয়েছে শিশুর সকল রোগের ঔষধ। শালদুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সুস্থ সবল জাতি গঠন করা সম্ভব।

সুস্থ সবল শিশুরাই দেশের আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সম্পদ। মঙ্গলবার সকালে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য দপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগের উদ্যোগে স্বাস্থ্য দপ্তর কার্যালয়ে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী।

তিনি বলেন বর্তমানে দেশের ৪৩শতাংশ শিশু শালদুধ থেকে বঞ্চিত। চট্টগ্রাম বিভাগেই শালদুধ থেকে বঞ্চিত হওয়ার হার হলো ৪৮ শতাংশ। ২০১৪ সালের ডাটা অনুসারে এ তথ্য পাওয়া যায়। যা আমাদের দেশের জন্য ভাবনার উদ্রেক করে। কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও নানা প্রতিকুলতার কারণে শিশুদেরকে বঞ্চিত করা হয় মায়ের বুকের শালদুধ থেকে। অথচ জন্মের পরই মায়ের বুকের শালদুধই হলো শিশুর ভিত্তি গড়ে তোলার সময়। এই শালদুধই শিশুর মেধা বিকাশসহ নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. আবুল কাশেম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দীপক চক্রবর্তী বলেন শিশু জন্মের পর থেকে ৬মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া কোন কিছুই দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মায়ের বুকের দুধের মাঝেই শিশুর জীবনের প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন রয়েছে। সাথে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সকল শক্তি। দুবছর পর্যন্ত একটি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। তিনি বলেন পুরুষ এবং নারী সকলেই অনেক কাজ করতে পারে। কিন্তু নারীরা যা পারে তা পুরুষরা পারে না। নারীরা গর্ভধারণ করতে পারে,বাচ্চা প্রসব করতে পারে,সুস্থ সবল জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। সুস্থ সবল জাতি গঠনের পিছনে রয়েছে মায়ের বুকের দুধ। আর এটা প্রত্যেক মায়ের পক্ষে করা সম্ভব। কিন্তু বাবাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে এসব বিষয়ে মা এবং পরিবার তথা পুরো সমাজকে সচেতন করতে পারে কলম সৈনিকরা। সাংবাদিকরা তাদের কলমের লেখনিতে পুরো দেশের মানুষকে সচেতন করে তুলতে সক্ষম। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুস্থ সবল জাতি গঠনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কারণ সুস্থ সবল জাতি গঠন করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা, শফিকুল ইসলাম বলেন শিশু জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে। আর না হয় সারাজীবনের জন্য বঞ্চিত হবে শিশু। এ ব্যাপারে মায়ের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সতর্ক না থাকলে শিশুর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হবে। তিনি বলেন শিশুকে মায়ের বুকের দধু খাওয়ালে মায়ের স্তনের সমস্যা হবে মনে করেন অনেকে। এ ধারণা পুরোপুরিই ভুল। বরং মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে নিরাপদ থাকেন মায়েরা। প্রথম ৬মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে পিল খাওয়া লাগেনা। মায়েরা স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে। মায়েদের নিজের প্রয়োজনে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে মা আর শিশুর মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। সামাজিক অস্থিরতা কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন শিশুরা ঘনঘন প্র¯্রাব আর পায়খানা করলে অনেক মায়েরা চিন্তায় থাকেন শিশু মনে হয়ে বুকের দুধ পাচ্ছে না। একটি শিশু দিন ৬/৭ বার প্র¯্রাব করলে বুঝতে হবে শিশুর মায়ের বুকের দুধ সঠিকভাবে পাচ্ছে। তাছাড়া ঘন ঘন পায়খানা করলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অল্প অল্প করে শিশুরা দিনে কয়েকবার পায়খানা করলেও বুঝতে হবে শিশু সঠিকভাবে দুধ পাচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন অনেকেই মায়ের বুকের দুধের বদলে কৌটা দুধ খাওয়ায়। একটি শিশুর জন্য কৌটা দুধ মারাত্মক ক্ষতিকর। কৌটা দুধ হলো সৎ মা, বলেন তিনি। শিশু জন্মের পর কোনভাবে কৌটা দুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। ক্ষেত্রবিশেষে কৌটা দুধ দিতে হলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে কৌটা দুধ ব্যবহারের কারণ লিখতে হবে। কোন কোন চিকিৎসক আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য শিশুদের খাওয়ানোর জন্য কৌটা দুধের পরামর্শ দেয়। এটা ঠিক না। জন্মের পর ৬মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ ছাড়া কোন কিছুই দেয়ার প্রয়োজন নাই বলে জানান তিনি। কৌটা দুধ খেলে শিশুকে দেখতে মোটা তাজা মনে হলেও সেসব শিশু সুস্থ সবল নয়। কেবল মোটা নাদুস নাদুস করার জন্য অনেক মা বাবা কৌটা দুধ খাওয়ায়। এটা ঠিক নয়। দুবছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নাই বলে জানান তিনি। ৬মাস পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য খাবার খাওয়ান যায়।

আলোচনা সভার এক পর্যায়ে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা, আইনী ব্যবস্থা, মাতৃদুগ্ধ না খাওয়ালে সমাজ, দেশ, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়ে সে বিষয়ে একটি স্লাইড শো দেখান স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের নিউট্রিশন বিভাগে বিভাগীয় কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম। তিনি বলেন প্রতিবছর নবজাতকের জন্য আমদানী করা হয় ২৫কোটি ৩৪ হাজার ৪২৭ টাকার কৌটা দুধ। বছরে আমদানী করা হয় ১৯কোটি ৪৩লাখ ১৩ হাজার ৭১৩ টাকার গুঁড়ো দুধ ও ক্রিম। মায়েরা বুকের দুধ দু বছর পর্যন্ত শিশুকে খাওয়ালে এসব কৌটা দুধের চাহিদা কমবে । আর চাহিদা কমলে কৌটা দুধ আমদানীতে যে সব টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে তার সাশ্রয় হবে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন দেশের প্রতিটি দোকানেই এখন কৌটা দুধ ও গুঁড়ো দুধ পাওয়া যায়। মুদির দোকানেও পাওয়া যায় শিশুদের কৌটা দুধ। তাছাড়া কৌটা দুধ বিপননের অসংখ্য রঙছটা বিজ্ঞাপনও দেখা যায় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায়। যা আইনত নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকা দরকার বলে মনে করেন তারা। আইনী ব্যবস্থা জোরদার হলে শিশুদের জীবনের জন্য ক্ষতিকর কৌটা দুধের বিপনন,ব্যবহার কমে আসবে বলে মনে তারা। শতভাগ শিশুকে শালদুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তারা। তারা বলেন শালদুধ শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জন্ডিসসহ নানা রোগের আক্রমন থেকে রক্ষা প্য়া। এ বিষয়টি দেশের সকল ঘরে ঘরে পৌছে দিতে হবে। আর এ জন্য ভরসা হলো সাংবাদিকরা।

প্রতিবছর পহেলা আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত সারা বিশ্বে পালন করা হয় বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে পালন করা হয় এই সপ্তাহ। আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ। আয়োজিত আলোচনা সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ

০৯ নং ওয়ার্ড জাসাস কমিটি অনুমোদিত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৪৭ বছর ⦿বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print