
চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সিরাজুল ইসলামের হস্তক্ষেপের কারণেই বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত চাঞ্চল্যকর ফকির জিল্লুর রহমান ভান্ডারী হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন।
সরকারি কৌসুলীর বারংবার টাইম পিটিশনের কারনে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও শংকা প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার। প্রথমে পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ আর এখন জেলা পিপির অপ্রয়োজনীয় সময় ক্ষেপনের কারনে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছে মামলার বাদী ও নিহতের ছোট ভাই মো: আজিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, মামলার আসামীকে অনৈতিক সুবিধা দিতেই অভিযোগ গঠনে বারবার সময় নিচ্ছেন পিপি সিরাজুল ইসলাম। অভিযোগ গঠনে দেরি হলে মামলার আসামী খোকন জামিনে মুক্ত হয়ে যাবেন এমন আশংকা করছেন তিনি মামলা
সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ই জানুয়ারী রাতে ফকির জিল্লুরকে রাঙ্গুনিয়া রানীরহাট বাজারে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে অন্য একটি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী খোকনকে প্রধান আসামী করে ৮জনের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৪/৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে মূল আসামী খোকন, ইসমাইল ওরফে পিস্তল ইসমাইল, আজিম ও শফু নামে চার আসামীকে বাদ দিয়েই গত ২০১৫ সালের ২৩ আগষ্ট তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এই চার আসামীকে মামলা থেকে বাদ দিতেও আবেদন করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে ৯জন অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশের এই পক্ষপাতমূলক অভিযোগের বিরুদ্ধে আদালতে বাদী নারাজী দিলে আদালত মামলাটি তদন্তের সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে পুলিশের বাদ দেওয়া চার আসামীর বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।
এসময় সিআইডি প্রধান আসামী খোকনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে। সিআইডি মামলা তদন্ত করে ১৩জনের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পায়। যার মধ্যে পুলিশের অভিযোগপত্রে বাদ দেওয়া চার আসামীও রয়েছে। সিআইডি ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর তারিখে প্রধান আসামী খোকনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
জানা যায়, মামলাটি বিচারের জন্য জজ কোর্টে আসে ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে। তারপর চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল।
কিন্তু অভিযোাগ রয়েছে, জেলা পিপি সিরাজুল ইসলাম সময় চাওয়ায় অভিযোগ গঠন করা যায়নি। এরপর আরো তিনবার টাইম পিটিশন দেন তিনি। সর্বশেষ আজ বুধবার(৮আগষ্ট) অভিযোগ গঠনের তারিখ ছিল কিন্তু রাষ্ট্র পক্ষের সময় আবেদনের কারনে তা পিছিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী পক্ষের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পাঠক ডট নিউজকে বলেন, মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতে অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় আছে। এই মামলায় কোন কারন ছাড়াই রাষ্ট্র পক্ষ বারবার সময় নিচ্ছেন। এই মামলার প্রধান আসামী খোকন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। ৬জন আসামী আছে পলাতক আর বাকীরা জামিনে আছেন। এই মামলা অভিযোগ গঠনে আইনি কোন বাধা নেই। মামলার প্রধান আসামী খোকন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান কিন্তু আপিল বিভাগ তার জামিন স্থগিত করেছেন। এখন মামলার অভিযোগ গঠনে বিলম্ব হলে আসামী জামিন নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর সিরাজুল ইসলাম প্রথমে বলেন-এই মামলার আদালতে বিচারক নেই। পরে আবার বলেন মামলার বিষয়ে আমি কিছ্ইু জানিনা। আমি সব মামলা এপিপিদের বুঝিয়ে দিয়েছি।
জানতে চাইলে এপিপি পারভীন সুলতানা নিপা পাঠক ডট নিউজকে বলেন, মামালাটি সরকারের পক্ষ থেকে আমাকেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মামলার সিডি পিপি অফিস থেকে আমাকে বুঝিয়ে দেয়নি। তারপরও অভিযোগ গঠনের শুনানিতে পিপি সাহেব টাইম পিটিশন দিচ্ছেন। এই বিষয়ে আপনি উনার সাথে কথা বলেন।
জানতে চাইলে মামলার বাদী প্রবাসী আজিম উদ্দিন থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার ভাইকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তারপর আমরা মামলা দায়ের করলে আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। আসামীদের ভয়ভীতির কারনে আমরা সব ভাই এখন দেশে ছেড়ে প্রবাসে আছি। সরকারি কৌসুলী বারবার সময় ক্ষেপন করে আসামী পক্ষকে সুবিধা দিচ্ছেন। মামলাটি অভিযোগ গঠনে বিলম্ব হলে প্রধান আসামী যেন জামিনে বের হতে পারেন সেই জন্য অভিযোগ গঠনে বিলম্ব করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। সরকারি কৌসুলীর আচরণে আমরা খুবই মর্মাহত।
তিনি আরো বলেন,আমি জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০০৮সালে আমি ড.হাসান মাহমুদের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। আমার ভাাইয়ের হত্যা মামলায় আমি ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হাসান মাহমুদ এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।