
বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে খোরপোষ না করার অভিযোগে চট্টগ্রামের একটি আদালতে উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত ৩ পুত্র সন্তানের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক অসহায় পিতা।
আজ বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হেলাল উদ্দীনের আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের অধীনে অবসরপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও মীরসরাই পূর্ব মালিয়াইশ গ্রামের ধনমিয়া বাড়ীর বাসিন্দা মরহুম মোঃ সোবহানের পুত্র মোঃ সাইদুল হক (৭২)।
আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩ সন্তারের বিরুদ্ধে সমন জারী করেছেন। এবং আগামী ১১/১০/২০১৮ইং তারিখে আদালতে স্বশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃদ্ব সাইদুল হক পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এর কর্মকর্তা এডভোকেট এ.এম জিয়া হাবীব আহসান পাঠক ডট নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হেলাল উদ্দীনের আদালতে পিতার অভিযোগটি শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত বাদীর তিনপুত্র যথাক্রমে মোঃ নাজমুল হক হেলাল (৪৪), মোঃ সাইফুল হক(৩৬) এম.কম, এবং মোঃ মাইনুল হক (৩৪) এম.এ (ঢা.বি) এর বিরুদ্ধে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ইং এর ৩ ও ৫ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে প্রতিপক্ষগণকে ১১/১০/২০১৮ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে স্বশরীরে হাজির হতে সমন জারীর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য মামলার বাদী একজন মানবাধিকার কর্মী হয়েও বৃদ্ব বয়সে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঔরষজাত তিন উচ্চ শিক্ষিত সন্তানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হন।
অভিযোগে প্রকাশ, বাদী বহু কষ্টে অর্ধাহারে অনাহারে জীবনের সমস্ত অর্থ, শ্রম ব্যয় করে সন্তানদের লালন পালন ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। বড় সন্তান মোঃ নাজমুল হক হেলাল একজন ঠিকাদার, দ্বিতীয় সন্তান মোঃ সাইফুল হক এম.কম পাশ এবং সিএন্ডএফ ফার্ম রাজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল চৌমুহুনী আগ্রাবাদে কর্মরত সিনিয়র এসিষ্টেন্ট ও তৃতীয় সন্তান মোঃ মাইনুল হক রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ যিনি বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ, গুলশান, ঢাকা শাখায় চাকরীরত অফিসার। বাদীর সন্তানগণ আর্থিকভাবে সামর্থবান হওয়া সত্ত্বেও মাতাপিতার কোন ভরণপোষণ দেয়া দূরে থাক তাদের সংগদান এবং চিকিৎসা ও ঔষধ খরচও প্রদান করে না মর্মে বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন।
বাদী গত ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৪ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসরে আসলে সামান্য পেনশনের টাকায় পরিবারের খরচ তথা অভিযুক্তদের পিতামাতা তাদের ভরণপোষণ চালানো সম্ভব না হওয়ায় বাদী ইতিমধ্যে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ের স্বামীদের সাহায্যে বাদী চোখের অপারেশন করলেও তিন সন্তান তাকে হাসপাতালে দেখতে পর্যন্ত যায়নি। বাদী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এবং স্থানীয় থানার মাধ্যমে ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আপোষে খোরপোষ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। তিনি তিন সন্তান হতে মাসিক সর্বমোট ৩০হাজার টাকা (বকেয়া পাওনা সহ) নিয়মিত খোরপোষ বা মাতা পিতার ভরণপোষণের দাবীতে অভিযোগটি দায়ের করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও দাখিলীয় দলিলপত্র বিবেচনায় প্রতিপক্ষগণের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে লইয়া সমন জারীর আদেশ দেন।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মানবাধিকার আইনজীবীবৃন্দ যথাক্রমে এডভোকেট এ.এম জিয়া হাবীব আহসান, এডভোকেট এ.এইচ.এম জসিম উদ্দিন, এডভোকেট প্রদীপ আইচ দীপু, এডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ, এডভোকেট মোঃ হাসান আলী প্রমুখ।