ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

আমার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত করলে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবো- মুফতি ইজহার

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

২০১৩ সালে কতিপয় অনলাইন এ্যক্টিভিস্ট কর্তৃক মহানবী (সা:)কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে ছিল অরাজনৈতিক দল ও কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে তখন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। এই দ্বীনি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা আহমেদ শফি।

আল্লামা আহমেদ শফির নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল হেফাজতে ইসলাম। সেই কর্মসূচীতে সারাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ গ্রহণ করেছিল। ৫ই মে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফি শাপলা চত্বরে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু সেই দিন তিনি দিক নির্দেশনা দেননি।সেই রাতে পুলিশের অভিযানে শাপলা চত্বর থেকে পিছু হটে অবস্থানকারীরা। সেই রাতে পুলিশের হামলায় প্রায় দুইশো হেফাজত কর্মী নিহত ও প্রায় সহস্রধিক আহত হয়েছে বলে দাবী করেছিল হেফাজতে ইসলাম।

শাপলা চত্বরের সেই ট্রাজেডির পর থেকেই সরকারী চাপ ও নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে অনেকটা নীরব হয়ে যায় হেফাজতের তৎপরতা। হেফাজতের এই নীরবতার কৌশলে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হয় হেফাজত আমীর আল্লামা শফির সাথে। আর এই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ভুমিকা পালন করেন আল্লামা শফির ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী। যোগাযোগের সুবাদে সরকারের পক্ষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন আনাস মাদানী এমন কথা হেফাজতের অনেকের।

কিন্তু আনাস মাদানীর সরকারের সাথে এমন ঘনিষ্টতার বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি হেফাজতে ইসলামের অনেক সিনিয়র নেতা। সেই সময় থেকে হেফাজতে ইসলামের সকল ক্ষমতা আনাস মাদানীর কাছে কুক্ষিগত হচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল অনেকের। আল্লামা শফি সাহেবকে তিনি ভুল পথে পরিচালনা করছেন বলেও অনেকে অভিযোগ করেছিল। মাওলানা আনাস মাদানীর বিভিন্ন আচরণের কারনে ক্ষোভ বাড়ে দলটির অনেক সিনিয়র নেতার।

সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নেতা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর পদত্যাগ করায় মাওলানা আনাস মাদানীর অনেক অসামাজিক আচরণ প্রকাশ পায়।

হেফাজেত ইসলামের মধ্যে চলমান সংকটের জন্য মাওলানা আনাস মাদানীকে দায়ী করেছেন হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম।

.

সম্প্রতি পাঠক ডট নিউজের সাথে একান্ত স্বাক্ষাতে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

হেফাজতে ইসলামের মধ্যে বর্তমানে সংকট চলছে জানিয়ে মুফতি ইজহার বলেন, হেফজতের ১৩ দফার মূল দাবী হলো আল্লাহ ও তার রাসূলের শানে যারা বেয়াদবি করবে তাদের শাস্তির বিধান করতে হবে। সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পূন:সংযোজন করতে হবে। আল্লাহ হচ্ছেন সবার জন্য। এই দাবীতে তৌহিদী জনতা ঐক্যবদ্ধ। আমরা শফি সাহেবের সাথে বেয়াদবি করতে চাইনা আমরা উনাকে বলবো তিনি যেন সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করেন। কাউকে বাদ দিয়ে অন্যের গিবত করে বর্তমান সমস্যার সমাধান হবেনা।

হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফির ছেলে আনাস মাদানী তাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিভাবে অত্যন্ত দু:খ ও ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলবো কওমী মাদ্রাসার জন্য আমার অনেক অবদান আছে। তার আব্বার জন্য (আল্লামা শফি) আমার অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু তার অসংখ্য অসামাজিক আচরণ রয়েছে। যে গুলো আপনাদের মাধ্যমে জাতির কাছে জানাতে চাই । তার আচরণগুলো বেয়দবি ছাড়া আর কিছুই না। শফি সাহেব আমাদের মজলিস শূরার প্রধান উনাকে একদিন আমি শূরা বৈঠকে আনতে গাড়ী নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। হুজুরও শূরা বৈঠকে আসার জন্য তৈরী হয়ে বসেছিলেন। কিন্তু সেই দিন আনাস তার বাবাকে শূরা বৈঠকে আসতে দেয়নি। বলেছে আপনার শূরা বৈঠকে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তার বাপের উপর সে এই ধরণের হস্তক্ষেপ ও নজরদারী করতো। আমি তার বাপের সাথে দেখা করতে গেলে সে তার বাপের রুমের দরজা বন্ধ করে দিতো। এটা অসামাজিক আচরণ।

আনাস মাদানীকে উদ্দেশ্যে করে মুফতি ইজহার বলেন, আমি মাওলানা আনাস মাদানীকে বলছি, আপনি আপনার বাপের মাথার উপর কাঠাল ভেঙ্গে এভাবে অসামাজিক আচরণ করে আমাদের সাথে বেয়াদবি করে জাতিকে বিভক্ত করে, টাকার কেলেঙ্কারিতে জড়িত হয়ে কখনো হাটহাজারী মাদ্রাসার কান্ডারী হতে পারবেননা। সেই আশা ছেড়ে দেন ।

তিনি বলেন, “আপনার আব্বা বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বী হাজার হাজার আলেমের উস্তাদ হিসেবে উনার হাজারো ভুল থাকলে আমরা বেয়াদবি করবোনা। কিন্তু আপনিতো মাওলানা আহমেদ শফি নন। আপনি নিজেকে মাওলানা আহমেদ শফি মনে করলে “আপনার জন্য ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে”। এটা আপনাকে বুঝা উচিত। আমার বিরুদ্ধে যদি এখনো কোন চক্রান্ত করেন আমি দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবো। আনাসকে তার চরিত্র সংশোধন করতে হবে। আপনি মাওলানা শফির ছেলে তাই বলে যা খুশি তা করতে পারেন না।”

আনাস মাদানীকে উদ্দেশ্যে করে আরো বলেন, “আপনি আমার প্রিয় ছোট ভাই আমার সাথে বাড়াবাড়ি করবানা। আমার সাথে বাড়াবাাড়ি করে কেউ রেহায় পায়নি। আনাস মাদানী আপনার জন্য ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।”

মুফতি ইজহার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫ই মে পরবর্তী আমি যখন বিপদে পড়লাম তারা কখনো আমাকে বা আমার পরিবারকে দেখতে আসেনি। এটা কি আমার বলার অধিকার নাই। আমি আমার পরিবার আমার মাদ্রাসা ৬টি বিষ্ফোরক মামলায় বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম। জমি বিক্রি করে ফেললাম। আমার কি দু:খ প্রকাশ করার অধিকার নাই। আমি এই সব কিছুর সম্মুখীন হয়েছি মুধুমাত্র হেফাজতের জন্য।

মুফতি ইজহার বলেন, সবাইকে কথা বলার অধিকার দিতে হবে। উনার পিছনে আমার ৬০ বছরের অবদান আছে। আমার কি কথা বলার অধিকার নাই। উনি হাটহাজারী মাদ্রাসার একটি চেক জালিয়াতির ঘটনায় ফেঁসে গিয়েছিলেন আমি তাকে সেই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছিলাম।

হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছে এমন কিছু কথা শোনা যায় এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাও শুনেছি কিছু কিছু লোক টাকা পয়সার লেনদেন করেছে। তবে আমি কখনো দেখিনি। হেফাজতের ফান্ড আছে শুনেছি কিন্তু কখনো আমরা সেই ফান্ডের কোন সুবিধা পাইনি। সম্প্রতি শফি সাহেব নিজেই বলেছেন “আওয়ামী লীগ আমাদের টাকা পয়সা দেয়”।

বর্তমানে হেফাজতে ইসলামের প্রতি আপনার ক্ষোভের কারন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি (হেফাজত আমীর) আমার শ্রদ্ধভাজন ওস্তাদ । আমি হাটহাজারী মাদ্রাসার উল্লেখ যোগ্য মেধাবী ছাত্র ছিলাম। যখন আমি রাজনীতিতে আসলাম। আমি মন্ত্রী না হয়েও মন্ত্রীর মর্যাদা পেতাম উনার জন্য আমি অনেক কিছু করেছি। পরে আমরা দেখতে পাই উনি অন্যের প্ররোচনায় ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন। তিনি আমার প্রস্তাাবে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপাল হয়েছেন। আমাদেরকে দিয়েই হেফাজত গঠিত হয়েছিল। পরে আমরা যখন বিপদে পড়লাম। আমাদের বিরুদ্ধে ছয়টি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হয়েছে। আমার ছেলে হারুন তিন বছর ও আমি দুই বছর কারাগারে ছিলাম। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় হয়েছে। আমরা হেফাজতের ফান্ড থেকে কোন টাকা পাইনি। মানুষ কি হেফাজতের ফান্ডে টাকা দেয়নি। এই দু:খটা ব্যাক্ত করলে কি অপরাধ হবে, বেয়াদবি হবে।? এটা আমাদের ক্ষোভের কারন।

আপনি এই সব এতো দিন প্রকাশ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকাশ করিনি কারন হেফাজত একটি পবিত্র সংগঠন। যারা সংবিধান থেকে আল্লাহকে বাদ দিয়েছে যাদের ব্যাপারে জাতীর অনেক ক্ষোভ রয়েছে। সুষ্ঠ নির্বাচন না হলে এই দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদেরকে যখন একটি পবিত্র সংগঠন ও মহান মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেবে এটাতো কোন জাতি মানতে পারেনা।

২০১৩সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরের কর্মসূচী ভুল ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ভুল ছিলোনা তবে সেই দিন রাতে হেফাজত আমীর শাপলা চত্বরে গিয়ে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু তিনি তা দেননি। আমি সেই দিন লালবাগ মাদ্রায় ছিলাম। উনি (হেফাজত আমীর) ভিতরের রুমে আমরা সামনের রুমে অবস্থান করছিলাম। উনি সেই দিন কারো সাথে কোন পরামর্শ করেননি। উনি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও দেননি। উনি আমার মুরুব্বী উস্তাদ তিনি যদি একটি জাতিকে নিয়ে ভুল করেন তাহলে সে বিষয়ে কথা বলা কি বেয়াদবি হবে ?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে ভাঙ্গনের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাঙ্গনের কোন সম্ভাবনা নাই। আমরা আবেগ প্রবল কোন সিদ্ধান্ত নিবো না।  “আমরা চাচ্ছি হেফাজতে ইসলামকে সংস্কার করার জন্য। বর্তমানে হেফাজতে ইসলাম সঠিক লাইনে চলছে না” তাই অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে কি করা উচিত এই বিষয়ে তিনি বলেন, আল্লামা শফি সাহেবের উচিত সবাইকে নিয়ে বসা। সবার পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া। উনি বয়সের কারণে কাজ করতে না পারলে তিনি নিজ দায়িত্বে একজনকে নির্বাহী আমীর করতে পারেন। তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে চলতে হবে। না হলে উনি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন হেফাজত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্বীকৃতির পর প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্তে আপনারা একমত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমাদের সাথে কোন পরামর্শ করা হয়নি। উনি (হেফাজত আমীর) কিছু চাটুকারদের খপ্পরে পড়ে গেছেন। অতিরঞ্জিত কোন কিছুই ভালনা। অতিরঞ্জিত কাজের কারনেই তো ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে।

*“বির্তকিত প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিবেন এটাতো ধর্মপ্রাণ মানুষ মানতে পারে না”-মুফতি ইজহার (ভিডিও)

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print