
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
সীতাকুণ্ডের মেয়ে সাঈদা মুনা তাসনিম যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আজ সোমবার (২২ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার ও অণুবিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাঈদা মুনা তাসনিমের এ নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সাঈদা মুনা তাসনিম নতুন দায়িত্বে নাজমুল কাওনাইনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
তাঁর বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার ১ নং সৈয়দপুর ইউনিয়নে। সাঈদা তাসনিম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পেশাগত জীবনে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিভিন্ন পদে অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ অণুবিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন সাঈদা তাসনিম।

তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৮৮ সালে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং পরে যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনকূটনীতি ও পরিকল্পনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু সরকারি চাকুরীজীবী (অতিরিক্তি সচিব) বাবার আগ্রহে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন তিনি। বিসিএস একাদশ ব্যাচে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে যোগ দেন পররাষ্ট্র ক্যাডারে।তাসনিম পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। পরের বছর বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে সব ক্যাডারের মধ্যে প্রথম হয়ে অর্জন করেন রেক্টরস অ্যাওয়ার্ড। প্রায় দু’যুগ ধরে কূটনীতিক জীবনে পালন করে চলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব।
ব্যক্তিগত জীবনে সাঈদা মুনা তাসনিম তিন সন্তানের জননী।

সাঈদা মুনা তাসনিমের বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জাফরনগরে। বাবা সরকারি চাকরি করতেন, সেই সূত্রে ঢাকায় তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা। বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে প্রথমে যোগ দেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ১৯৯৩ সালে যোগ দেন ফরেন ক্যাডারে। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে, নিউইয়র্ক জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে আছেন থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে। তিন সন্তানের জননী সাঈদা মুনা তাসনিমের শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশে।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায় হলেও চট্টগ্রামের প্রতি আলাদা টান আছে বলে জানালেন সাঈদা মুনা তাসনিম। তিনি বলেন, প্রতি বছর শীতে এবং দুই ঈদে আমরা বাড়ি যেতাম। শহরের পাথরঘাটায় আমাদের একটা বাড়ি আছে সেখানে যেতাম। গ্রামের পুকুর, সবুজ ঘাস, মাটির গন্ধ আমাকে খুব টানে।
‘শীতকালে ভোরে উঠে খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নিয়ে ঘরে ফেরা, নারকেল আর চালের গুড়া দিয়ে পিঠা বানিয়ে খেজুরের রস দিয়ে খাওয়া, কোরবানির ঈদে প্রতিবেশিদের কাছে গিয়ে গোশত ভিক্ষা করে আনা, পুকুরে জাল ফেলে বাবা-চাচাদের বড় বড় মাছ ধরা সবকিছু আমি ভীষণভাবে মিস করি। ’
‘সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পায়ে হেঁটে ওঠা, বাড়বকুণ্ড, বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে ঘুরে বেড়ানো, বাড়ি থেকে কয়েক মিনিট হেঁটে সাগর পাড়ে চলে যাওয়া, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, রামুতে বৌদ্ধদের প্যাগোডাগুলো, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির আমি খুব খুব মিস করি।’