
কলকাতায় আটক মুসা এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু হত্যার আসামী মুছা নয় বলে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। তবে কলকতায় আটক মুসাকে ঢাকার গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পুলিশ আটক করেছে বলে জানাগেছে। তার পুরো নাম মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু আল মুসা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মো. মনিরুজ্জামান জানান, উভয়ের ডাক নাম কাছাকাছি হওয়ার কারনে প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম চট্টগ্রামে মিতু হত্যার আসামী মুছা। কিন্তু ভারতে আটক মুসার পুরো নাম মো. মুসাউদ্দিন ওরফে মুসা। মুসাকে আইএস জঙ্গি হিসেবে সন্দেহ করছে সে দেশের পুলিশ।
তিনি জানান, ভারতে গ্রেফতার হওয়া মুসা জেএমবির সদস্য। তার বাড়ি রাজশাহীতে। অন্যদিকে মিতু হত্যার মুল পরিবল্পনাকারী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মুছার পুরো নাম কামরুল সিকদার প্রকাশ আবু মুছা।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ মুসাকে আটকের পর খবর ছড়িয়ে পড়ে যে মিতু হত্যার আসামী মুছা আটক হয়েছে। তাকে সনাক্ত করতে র্যাব পুলিশের একটি টিম মঙ্গলবার কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তবে সর্বশেষ খবরে পশ্চিম বঙ্গ থেকে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে জঙ্গি সন্দেহে আটক করেছে মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু আল মুসাকে।
মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালত হাজির করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইদিনের হেফাজতে নিয়েছে সেখানকার পুলিশ।
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এন আই এ) পক্ষ থেকে মুসাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে আদালত রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে র্যাবের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কলকাতায় পৌছেছে। তারা মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনআইএর আইনজীবী শ্যামল ঘোষ জানান, আবেদনে সাড়া দিয়ে মুসাকে দুইদিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনআইএর রিমান্ডে থাকার সময়েই বাংলাদেশের র্যাবের প্রতিনিধিদল মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
সেখানকার আইনজীবি সুত্রে জানাগেছে, আদালতের এজলাসে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন জঙ্গি সন্দেহে আটক বাংলাদেশী নাগরিক মুসা।
আদালত সূত্র জানায়, তিনি এজলাসে দাঁড়িয়েই বিচারকের কাছে প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন বাংলাদেশ থেকে আসা র্যাবের প্রতিনিধিরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে?’ এজলাসের মধ্যেই ‘জয় হিন্দ’ বলে স্লোগান দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসা।
আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘আমরা এনআইএর পক্ষ থেকে আদালতে মুসাকে দুইদিনের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাদের সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদল মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কোন বাধা নেই।
উল্লেখ্য গত ৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে বছর মুসাকে আটক করে রেল পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, তিনটি গুলি, একটি ধারালো অস্ত্র এবং আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মুদ্রা উদ্ধারের কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মুসাকে জেরা করে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারে, ভারত-বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) নেতা মহম্মদ সুলেইমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুসার। মুসা মূলত পশ্চিমবঙ্গে কোনো অমুসলিম ব্যক্তিকে খুন করে এবং তার সঙ্গিনীকে ধর্ষণ করে ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ভারতে আইএসের উপস্থিতি জানাতে চেয়েছিলেন। আর ভিডিওটা সুলেইমানের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর।
একপর্যায়ে বিষয়টি ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানোর পর বাংলাদেশ থেকে র্যাবের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার ভারত পৌছেন।