ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

পাহাড়ের তক্ষক দিয়ে চলছে কোটি টাকার প্রতারনার ব্যবসা

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

আলমগীর মানিক,রাঙামাটিঃ
পাহাড়ে কিছুতেই থামছেনা তক্ষক পাচারের ঘটনা। অরণ্যনির্ভর পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে সক্রিয় রয়েছে তক্ষক পাচারকারিরা। প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকায় তক্ষক পাচারকারিরা ঘুরে বেড়িয়ে স্থানীয়দের কোটি টাকার স্বপ্ন দেখায়। বলা হয়, একটি তক্ষকের মূল্য কোটি টাকা। লাখ লাখ টাকায় এটি হাতবদল হয়। অনেক সময় না খেয়ে তক্ষকটি মারা যায়। নিঃস্ব হয়েছে অনেক তক্ষকসন্ধানী। কিছু লোক প্রচার করছে, তক্ষক দিয়ে এইডস, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরি হয়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চীনে কিছু ওষুধ তৈরিতে তক্ষক ব্যবহার করা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তক্ষকের কিছুটা দাম ও চাহিদা আছে। তবে যতটা প্রচার করা হয়, ততটা নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বনাঞ্চল থেকে বেশি পরিমানে ধরা হচ্ছে তথাকথিত কোটি টাকা দামের তক্ষক। এসব পাচারকারিদের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে যৌথবাহিনী কতৃক ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত বন্ধ হচ্ছে না তক্ষক পাচার। অবৈধ শিকারী ও পাচারকারী চক্রের করাল থাবায় পার্বত্যাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে পরিবেশ রক্ষাকারী তক্ষক বা টুট-ট্যাং জাতীয় প্রাণীগুলো। পাচারকারী চক্রের প্রলোভনে পড়ে স্থানীয় একটি চক্র অবাধে শিকার করেই চলেছে পাহাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির দূর্লভ প্রাণী। বনবিভাগ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কালেভদ্রেও বন্যপ্রাণী পাচারকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছদ্মবেশধারী পাচারকারিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় তক্ষকের মতো প্রাণীগুলো।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতার কারনে মাঝে মাঝেই ধরা পড়ে পাচারকারি চক্রের সদস্যরা। সোমবারও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চার তক্ষক ব্যবসায়িকে ২টি তক্ষকসহ হাতেনাতে আটক করেছে রাঙামাটির কোতয়ালী থানা পুলিশ। আটককৃত চারজন হলো শহরের রাজবাড়ী সংলগ্ন বিহারপুর এলাকার বাসিন্দা অমর জ্যোতি চাকমা (৩৬), প্রতিবাবু চাকমা (২৮), শহরের পুলিশ লাইনস্থ আপার রাঙামাটি এলাকার বাসিন্দা মো ঃ হোসেন (৫৫) ও খাগড়াছড়ি পানছড়ির মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫)।

কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহেদুল হক রনি জানিয়েছেন, আসামীরা সংবদ্ধ পাচারকারী দলের সদস্য। তারা আটকের দুইদিন আগে একটি চক্রকে তক্ষক দেওয়ার নাম করে প্রতারনার মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এবং একই প্রক্রিয়ায় ৮ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারন করে আবারো অন্য আরেকটি পক্ষকে সোমবার তক্ষক সাপ্লাই দেওয়ার কথা ছিলো। বিষয়টি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরে শহরের রিজার্ভ বাজারের একটি আবাসিক হোটেলে এই প্রতারক চক্র লেনদেন করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় আমরা শহরের বাস স্টেশন এলাকার উক্ত হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের চার সদস্যকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হই। এসময় তাদের কাছ থেকে দুইটি জীবিত তক্ষকও উদ্ধার করে পুলিশ। আটককৃতদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদে উপরোক্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে তারা। ওসি জানান, তাদের বিরুদ্ধে দন্ড বিধি ৪০৬/৪১৭/৪২০ ধারাসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৩৪ (খ) ধারায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ওসি জানান, কোতয়ালীর অন্তর্ধীন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সুজন কান্তি বড়–য়া, এএসআই সোহেল রানা সবুজ, এএসআই মোঃ আব্দুল বারিক, এটিএসআই মোঃ শাহআলম, নায়েক মোঃ জসিম, কনস্টেবল আজহারুল ও রবিন সূত্রধর এর মাধ্যমে উক্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এদিকে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এ দলটি নয়, রাঙামাটিসহ সারাদেশে তক্ষকের সন্ধানে ঘুরছে অনেক মানুষ। প্রাণী পাচারকারী চক্রের জালে ধরা পড়া এসব ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, একটি তক্ষকের মূল্য ওজন ভেদে কোটি টাকাও হয়। কিন্তু তক্ষকের খোঁজে নেমে প্রতারিত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী তক্ষক ওষুধি তেলসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার হয়। দেশের বাইরে পাচার এবং পাচারকারীদের হাতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় ৫ হাজারেরও বেশি তক্ষক হারিয়ে গেছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বিপদাপন্ন এ প্রাণীটির পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও বন্য প্রাণী আইন ২০১২ এর ৩২ ধারা মতে তক্ষক জাতীয় প্রাণী ধরা ও পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তক্ষক কী: টিকটিকির মতো দেখতে ছোট এ প্রাণিটির কিছু বিশেষত্ব আছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তক্ষক (টোট্টেং) Lacertilia বর্গে বেশ শড়হরফধবগোত্রের একটি গিরগিটি প্রজাতি। পিঠের দিক ধূসর, নীলাভ-ধূসর বা বেগুনি-ধূসর। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলো পাশাপাশি সাত-আটটি সরু সারিতে বিন্যাস্ত। কম বয়সী তক্ষকের লেজে পর পর গাঢ়-নীল ও প্রায় সাদা রঙের বলয় রয়েছে। মাথা অপেক্ষাকৃত বড়, নাকের ডগা চোখা ও ভোঁতা।

চোখ বড় বড়, মণি ফালি গড়নের। লেজ সামান্য নোয়ানো। দৈর্ঘ্য নাকের ডগা থেকে পা পর্যন্ত ১৭ সেন্টিমিটার এবং লেজও প্রায় ততটা লম্বা। তক্ষকের ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়। রাতের বেলা ডাকে তক্ষক। থাকে বড় আকারের গাছের কোটরে। ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁকে বা গর্তে বাস করে তক্ষক। এরা কীটপতঙ্গ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও ছোট সাপ খায়। ব্যাপক নিধনের কারণে তক্ষক বিপন্ন হওয়ার পথে। দেশি চিকিৎসায় এ প্রাণীর তেল ব্যবহৃত হয়। ভারত ও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি তক্ষক আছে। এছাড়া মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print