ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণ দুই কর্মকর্তাকে দায়ি করে ডিসির প্রতিবেদন

?

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

?
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা (ডিএপি-১) এর অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরনের প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তাকে দায়ি করে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন ও তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত রিপোর্টে দুঘটনার জন্য ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানার দায়িত্বরত উপ-প্রধান প্রেেকৗশলী দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং জি এম নকিবুল ইসলামের গাফেলতির কারণ বলে উল্লেখ্য করে বলেন, এ দুই কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এই দূঘর্টনা থেকে প্ল্যান্টটি রক্ষা করা সম্ভব হতো।

তারা দুজন স্বপদে বহাল থাকলে এই প্ল্যান্টটি কারো জন্য নিরাপদ নয়। তাদেরকে সেখান থেকে প্রত্যাহার পূর্বক বিভাগীয় শাস্তি ও তাদের কাছ হতে ক্ষতিপূরন আদায়ের সুপারিশ করেন কমিটি।

এ ছাড়া এ ঘটনার পর তদন্ত কমিটি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করেছেন। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে বিস্ফোরিত ট্যাংকের আনুমানিক মূল্য- ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা, নতুন ট্যাংক স্থাপনে ব্যয় হবে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা, মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা, প্রাণী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ২ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৩০ কোটি টাকার সরকারী বেসরকারী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

52e1bfa644a99e2c3d74a5b2bdde81a8-Untitled-28
আনোয়ারা অ্যমোনিয়া গ্যাস ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের পর সেখানকার আশেপাশে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় সবুজ ঘাস বির্বরণ হয়ে যায়।

অ্যামোনিয়া ট্যাংকে সকল নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি নষ্ট ও বন্ধ থাকায় ৫০০ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতার ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আরো বলা হয় ৫০০ মেট্রিকটন ধারন ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংকটিতে ৩৪০ মেট্রিক টন তরল অ্যামোনিয়া থাকার পরও মাত্রাতিরিক্ত গাসের চাপে ট্যাংকটির নিচের অংশে বেজপ্লেন্ট বরাবর বিস্ফোরন ঘটে।

এতে নির্গত গ্যাসের চাপে ট্যাংকটি উড়ে গিয়ে প্রায় বিশ ফুট দুরে ভূপাতিত হয় এবং সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়। গত ২২ আগষ্ট রাত প্রায় ১০ টায় হয় এবং রক্ষিত অ্যামোনিয়া বাতাস, মাটি এবং পানিতে ছড়িয়ে পড়ে মারাতœক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।

দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসক ২৩ আগষ্ট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আনোয়ারা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্ণফুলি থানাকে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্দ কমিটি গঠন করা করেন ।

গত ৮দিন তদন্ত শেষে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দূর্ঘটনার পর প্ল্যান্ট পরিচালনার সাথে ১০জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

জবানবন্দিতে দেখা যায় বাস্তবে যারা ফ্যাক্টরি পরিচালনা করতেন এবং ট্যাংকটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন তারা প্রায় সকলেই অপারেটর এবং তাদের এই ফ্যাক্টরি পরিচালনায় এবং নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই।

nodi-3
গ্যাসের আক্রান্ত হয়ে আশেপাশের জলাশয়ে কোটি টাকার মাছ মারা যায়।

ফ্যাক্টরি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষনে অপারেশন এবং মেইন্টেনেন্স নামে দুটি পৃথক বিভাগ রয়েছে। ২০ তারিখ থেকে উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকার পর সকল নিরাপত্তা সিস্টেম নষ্ট থাকার বিষয়টি অপারেশন বিভাগ হতে মেইন্টেনেন্স বিভাগকে অবহিত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে উক্ত বিভাগ সেখানে টেকনিশিয়ান পর্যায়ের লোক পাঠান। মেইন্টেনেন্স বা ইন্সট্রুমেন্ট বিভাগের টেকনিশিয়ানরা মেরামতে সক্ষম না হয়ে ফিরে আসে।

টেকনিশিয়ানদের ব্যর্থতার বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন উপ-প্রধান প্রকৌশলী দিলিপ কুমার বড়ুয়া এবং জিএম টেকনিক্যাল ও মেইনটিনেন্স সার্ভিস মো: নকিবুল ইসলামের। তাঁরা সেফটি সিস্টেম মেরামতের বিষয়টি তদারকি করেন নাই এবং নিজেরা মেরামতের কোন উদ্যোগও গ্রহণ করেন নাই। প্ল্যান্ট তদারকির বিষয়টি জিএম মেইন্টেনেন্স নকিবুল ইসলামও তাঁর রুটিন দায়িত্ব বলে মনে করেন নাই। তদন্ত কমিটির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিনি সরাসরি প্ল্যান্ট ভিজিট করেন না, তার অধীনস্তরা করে।

এছাড়া দূর্ঘটনারোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব ছিলেন উপ-প্রধান প্রেেকৗশলী (বিদ্যুৎ) দিলীপ কুমার বড়ুয়া। তাঁর দেয়া জবানবন্দিতে জানা যায়, তিনি কখনোই কোন মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করেন না।

এবারও প্রেসার ট্রান্সমিটার সংশ্লিষ্ট শেষ কম্পিউটারটি নষ্ট হলে তিনি মেরামতের উদ্যোগ না নিয়ে স্থানীয় মেকানিকের নিকট তা পাঠিয়ে দেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সফটওয়্যার ইনস্টলকৃত কম্পিউটারটি নিজে মেরামতের উদ্যোগ না নিয়ে অনির্ভরযোগ্য ও অননুমোদিত মেকানিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ট্যাংকটির এরূপ বিপদজনক পরিস্থিতিতে তিনি নিজে না গিয়ে তিনি তার দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন।

দিলীপ কুমার বড়ুয়ার জবানবন্দীতে আরও জানা যায় তিনি কোন ধরনের মেরমাত করতে আগ্রহী নন। তিনি ইতোপূর্বে একইভাবে ড্যাপ-২ এর জন্য দেড় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কিনতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছেন।

?
ডিসি’র সংবাদ সম্মেলন।

তদন্ত কমিটি মনে করেন দূর্ঘটনার অন্যতম কারন কোম্পানিতে অবস্থিত অপারেশন, মেইন্টেনেন্স, অ্যাডমিন, সিভিল, একাউন্টস ও কমার্শিয়াল সেকশনগুলোর মাঝে সমন্বয়ের অভাব।

দূর্ঘটনার পূর্বে অ্যামোনিয়া ট্যাংকের সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেলে মেইন্টেনেন্স বিভাগকে তা জানানো হলেও তারা কার্যকরী কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এমনকি এই বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জিএম নকিবুল ইসলাম ও উপ-প্রধান প্রেেকৗশলী দিলীপ কুমার বড়ুয়া প্ল্যান্টটি পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা ও অনুভব করেননি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয় এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহ প্রেেকৗশলী সাইদ হাসান,সদুলাল কান্তি দেবনাথ (এস,এম,এ) ও মো: ইকবাল হোসেন (এমও) তাদের জবানবন্দিতে জানান, তারা এই প্ল্যান্টে পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও এই প্ল্যান্ট বিষয়ে তাদের কোন প্রশিক্ষন নেই।
তদন্ত কমিটির নিকট তাদের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী এটি প্রতিয়মান হয়েছে যে, এই অ্যামোনিয়া ট্যাংকটি যে বিস্ফোরিত হতে পারে এমন ধারণাও তাদের নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রদান ব্যতিরেখে ড্যাপ- কর্তৃপক্ষ এরূপ জনবল দিয়ে প্ল্যান্ট চালানোয় তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ বিস্ময় প্রকাশ করেন।

প্রতিষ্ঠানের নির্বাহি প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) কাজী মাসুদুর রহমান, নিজেদের কাজে গাফিলতি ঢাকতে প্ল্যান্টের নির্মান দূর্বল ছিল বলে উল্লেখ করেন। ট্যাংকের সকল নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি নষ্ট রেখে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য ট্যাংকের নির্মান ক্রুটির কথাই তারা উল্লেখ করছেন।

এদিকে এ ঘটনার পর তদন্ত কমিটি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করেছেন। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে বিস্ফোরিত ট্যাংকের আনুমানিক মূল্য- ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা, নতুন ট্যাংক স্থাপনে ব্যয় হবে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা, মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা, প্রাণী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ২ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৩০ কোটি টাকার সরকারী বেসরকারী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দূর্ঘটনার ২দিন আগে থেকে প্ল্যান্টটি বন্ধ ছিল। দূর্ঘটনার দিনে ৫০০ মেট্রিক টন ধারনক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংকে গাস মজুদ ছিল ৩৪০ মেট্রিক টন। এই অবস্থায় ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হওয়ার কথা নয়। দূর্ঘটনার সময় ট্যাংকের ৫টি নিরাপত্তা সিস্টেমের সবক’টি অকেজো ছিল।

বিষয়টি মেইনটিনেন্স বিভাগকে জানানোর পরও তারা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহন করে নাই।

বিশেষত দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং জি এম নকিবুল ইসলাম এ দুই কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এই দূঘর্টনা থেকে প্ল্যান্টটি রক্ষা করা সম্ভব হতো।

তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেন, এ দুই কর্মকর্তা স্বপদে বহাল থাকলে এই প্ল্যান্টটি কারো জন্য নিরাপদ নয়। তাদেরকে সেখান থেকে প্রত্যাহার পূর্বক বিভাগীয় শাস্তি ও তাদের কাছ হতে ক্ষতিপূরন আদায়ের সুপারিশ করেন।

এছাড়া ড্যাপের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও আন্তবিভাগীয় সমন্বয় সাধন, সকল কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা, দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রয়, মেরামত ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা ব্যবস্থাপকের উপর ন্যস্ত করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে একটি শক্তিশালী চেইন-অব-কমান্ড প্রতিষ্ঠা করা, ড্যাপ-১ ও ড্যাপ-২ ফ্যাক্টরি ২টি অধিকাংশ ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য সিইউএফএল এবং কাফকোর উপর নির্ভরশীর না হয়ে নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং এবং সেফটি ইউনিট তৈরী করার সুপালিম করা হয়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print