
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় আড়াই বছর পর নগরীর বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকা থেকে মস্তক বিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উম্মোচর করে আদালত চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি।
আইপিএলের টাকা নিয়ে দ্বন্ধের জেরে বন্ধুরা পটিয়া মনসা স্কুল এন্ড কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র নুরুল আজিম অভি (১৬) কে খুন করে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে বডি নদীতে ফেলে দেয়। এই মামলায় দীর্ঘ তদন্তের পর চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিলেও আড়াই বছরেও সিআইডি নিহত অভির মস্তক (বিচ্ছিন্ন মাথা) উদ্ধার করতে পারেনি ।
১৮ জুন মঙ্গলবার আদালতে দেয়া চার্জশীটে যে ৪ জনকে অভিযুক্তরা তরা হয়েছে তারা হল-নাজিম উদ্দিন মন্টু ,শহিদুল ইসলাম মানিক, আজাদ হোসেন ও রাসেল। এদের মধ্যে মন্টু ও মানিক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। আজাদ ও রাসেল বিদেশে রয়েছে।
পুলিশ স্থানীয়দের মতে আইপিএল জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মামলার চার্জশিট পর্যালোচনা করে জানা যায়, নিহত অভি পটিয়া মনসা স্কুল এন্ড কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র ও পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের বানিগ্রামের প্রবাসী নুরুল আবছারের পুত্র। মামলার মূল আসামী মন্টুর দূর সম্পর্কের আত্নীয় অভি। তারা একই এলাকার হওয়ায় একসাথে আইপিএলের জুয়া খেলতো। জুয়া খেলতে গিয়ে তারা অনেক টাকা কর্জ হয়ে যায়। মন্টু নগরীতে দারোয়ানি করতো। সে আইপিএল খেলার জুয়ার কারনে অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিলো। সে মানুষের টাকা দেয়ার ভয়ে নগরী থেকে গ্রামে পালিয়ে যায়।
মামলার অন্য আসামী শাহিদুল ইসলাম মানিকের কাছ থেকে মন্টু টাকা পেতো। মন্টুর কাছ থেকে পাওনাদাররা যখন টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলো তখন নাজিম উদ্দিন মন্টু ,শহিদুল ইসলাম মানিক, আজাদ হোসেন ও রাসেল মিলে পরিকল্পনা করলো অভিকে শহরে ডেকে এনে আটকে রেখে চাঁদা দাবী করবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক তারা নগরীর একটি বাসায় অভিকে ডেকে এনে আটকে রাখে। অভি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার মোবাইল সাথে না এনে তার মায়ের মোবাইল নিয়ে আসে। আবার আসার সময় তার আরেক বন্ধু মোঃ শাহজাহান প্রকাশ সুবলকে বলে আসে আমি শহরে যাচ্ছি মন্টুর এক বন্ধুর কাছে টাকা আনার জন্য। আমাকে না পেলে মন্টুর সাথে যোগাযোগ করিস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি অফিসার মো: শরিফ পাঠক ডট নিউজকে বলেন, অভিকে আটকে রেখে তার বাসায় মুক্তিপণ চাওয়ার পর তার বাবা বিদেশ থেকে পুলিশের কাছে বিষয়টি অভিযোগ করে। পুলিশ যখন অভিযানে নামে তখন মন্টু এলাকায় থেকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছিলো। সে যখন বুঝতে পারলো পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাবে তখনই শহরে এসে বাকী আসামীদের সাথে পরমার্শ করে অভিকে খুন করে মস্তক আলাদা করে দেহ নদীতে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, এই মামলাটি প্রথমে তদন্তে করে মনে হয়েছিলো নারী ঘটিত কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে এবং অভির বন্ধু শাহজাহাল সুবলকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার আমার নিকট আসলে আমি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রধান আসামী মন্টুকে দূর্গম পাহাড় থেকে গ্রেফতার করি। তারপর মন্টু হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। এই মামলায় আমরা চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে। ও অভির বন্ধুশাহজাহাল সুবলের চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
মস্তক উদ্ধার করা ছাড়া চার্জশিট দেয়ার কারনে মামলায় বিচার কাজে কোন প্রভাব পড়বে কিনা পাঠক ডট নিউজের এমন প্রশ্নে জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া বডিটি অভির পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। সেই সাথে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে। মস্তক উদ্ধার না হওয়ার কারনে মামলার বিচারে কোন প্রভাব পড়বেনা বলে তিনি দাবী করেন। বিদেশে থাকা আসামিরদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ হয় নুরুল আজিম অভি (১৭) এবং ২৩ সেপ্টেম্বর তার লাশ মস্তকবিহীন নগরীর বাকলিয়া থানাধীন কল্পলোক আবাসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। এঘটনায় অভি পিতা বাদী হয়ে বাকলিয়া থানা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।