ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

হাজারি পাড়ার হাজারি গুড়

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

গুড়ের নাম কেন হাজরি গুড় এ ব্যাপারে দুটি গল্প আছে। এর একটির সাথে মিশে আছেন রানি এলিজাবেথ। অন্যটিতে আছেন দৈবশক্তিসম্পন্ন কোনো এক সিদ্ধ পুরুষ।

কথিত আছে, বহুকাল আগে এক গাছি খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি বেঁধে সবেমাত্র নিচে নেমেছে এমন সময় অচেনা ও অদ্ভুতদর্শন এক লোক এসে তার কাছে রস খেতে চাইলেন। গাছি তাকে জানাল, কেবল হাঁড়ি বাঁধা হলো, এখনি রস পাওয়া যাবে না।

কিন্তু লোকটা তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, রস পাওয়া যাবে। কী আর করা, গাছি গাছ বেয়ে উপরে উঠল এবং বিস্ময়ে অবাক হয়ে দেখতে লাগল, নল বেয়ে ঝরনার গতিতে রস পড়ছে। সে দ্রুত হাঁড়ি নামিয়ে লোকটাকে রস খাওয়াল। লোকটি রস খেয়ে হাজার হাজার পাটালির বর দিয়ে গেলেন। সেই থেকে হাজারি গুড়।
অন্য গল্পটি এ রকম, ব্রিটিশ আমলে রানি এলিজাবেথ ভারতবর্ষ সফরে এসেছিলেন। তার খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছিল এই গুড়। রানি গুড় হাতে নিয়ে একটু চাপ দিতেই হাজার টুকরো হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে হাজারি গুড়। রানি এলিজাবেথ গুড় খেয়ে এতই মজা পেয়েছিলেন যে, তিনি নিজে আগ্রহী হয়ে ‘হাজারি’ নামে একটি সিলমোহর তৈরি করে দিয়ে গেছেন। সেই সিলমোহরটি এখন জাহিদ হাজারির কাছে রয়েছে।

খেজুরের রস প্রকৃতির এক আশির্বাদ। এরমধ্যে রয়েছে ঋতু বদলের আনন্দ বা রোমান্স এবং রসনা বিলাসের অন্য সুযোগ। এই রস থেকে তৈরি হওয়া গুড়ের মিষ্টতায় বাঙালি মাত্রই মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। এর স্বাদ ও সুগন্ধ জিভে জল এনে দেয়। গরুর দুধ ও নারকেলের সাথে মিশলে এর স্বাদ হয় যেন অমৃত। ফলে আমরা সারা বছর ধরে খেজুরের গুড়ের অপেক্ষায় থাকি। খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন মিষ্টান্ন খাবার আমাদের কাছে অতি প্রিয়। এই গুড়ের তৈরি পায়েস-পঠা-পুলি-সন্দেশ খেয়ে বাঙালির বছরের শেষটা হয়ে ওঠে আনন্দ-আহলাদের।

খেজুরের গুড় শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়। এর উপকারিতাও অপরিসীম। গবেষকরা জানাচ্ছেন, খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তারা খেজুরের গুড় খেলে উপকার পাবেন। হাড় ও বাতের ব্যথা কমাতে খেজুরের গুড় বেশ উপকারী। খেজুরের গুড় শরীরের ভেতর থেকে চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেজুরের গুড় খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় রোগ প্রতিরোধ করে এই গুড়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও খেজুরের গুড় অতুলনীয়। এ ছাড়াও লিভার সুস্থ রাখতে, পেশিকে শক্তিশালী করতে এবং বয়স ধরে রাখতে খেজুরের গুড়ের জুড়ি নেই। ত্বকে ফুসকুড়ি ও ব্রণ নিরাময়ে নিয়মিত খেজুরের গুড় খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

এক সময় গ্রামের ঘরে ঘরে খেজুরের রস এবং গুড়কে কেন্দ্র করে শীতকালীন পিঠা উৎসব হতো। কিন্তু সেই দিন আর নেই। নগরায়নের ফলে অনেক ঐতিহ্যের সাথে এই উৎসবেরও ভাটা পড়েছে। কৃষক একদিকে খেজুরের গাছ কেটে রোপন করছেন বিভিন্ন জাতের কাঠ জাতীয় গাছ অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘গাছি’ পেশা জনপ্রিয়তা পায়নি। ফলে গুড় উৎপাদন কমে গেছে। মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকার হাজারি পাড়ার বিখ্যাত ‘হাজারি গুড়’ পরিবারের গাছি জাহিদ হাজারিসহ আরও অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেল, তাদের সন্তানরা কেউ এই পেশায় আসতে অগ্রহী নয়। তারা পড়ালেখা করে চাকরি- করতে ইচ্ছুক। ফলে আশঙ্কা করা যায়, অচিরেই হাজারি গুড়ের স্বাদ নেওয়া থেকে বাঙালি বঞ্চিত হবেন। কিন্তু এটা আমাদের কাম্য নয়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print