ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

শূন্য থেকে শীর্ষে উত্থানের গল্প-সিঙ্গাপুর

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

।। আশফা খানম।।

চীন সাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। তিন দিকে সমুদ্র ও একদিকে নদী দ্বারা মালয়েশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। আয়তনে চট্টগ্রামের চাইতে ছোট দেশটি লোকসংখ্যা মাত্র ৫৬ লক্ষ প্রায়। অথচ ছবির মতোই সাজানো চমৎকার সবুজ ও সুন্দর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর । বাংলাদেশের মাত্র ছয় বছর আগে স্বাধীনতা অর্জন করলেও আইন শৃংখলার উন্নয়ন এবং সমুদ্র বন্দর ও পর্যটনকে পুঁজি করে ঈর্ষনীয় অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে তারা । বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। একে বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ রাষ্ট্রও বলা হয়। দেশটি আমাদের দেশের কাছে হওয়ায় এমন উন্নত দেশ দেখার প্রচন্ড আকাঙ্খা ছিল। শুধু তাই নয় বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম হওয়ায় আর্থিক ব্যয়ের ব্যাপারটিও সাধ্যের প্রশ্নে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের Regent Airlines এর 50% Discount অফারটি আমাদের মতো মধ্যবিত্তের বিদেশ ভ্রমনের আকাঙ্খা পূরনকে সহজ করে দেয়। এই জন্য Regent কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। তাদের কেবিন ক্রুদের আন্তরিক সেবা ও আতিথেয়তাও আমাদেরকে মুগ্ধ করে। ১৮১৯ সালের পূর্বে ‘সিঙ্গাপুর’ দেশটির নাম ছিল তেমাসেক। পরে হয় ‘সিঙ্গাপুর’ যার অর্থ সংস্কৃতে ‘সিংহ শহর’ এবং তামিলে ‘সিংহের শহর’ বলা হয় । জানা যায়, সাং-নিলা উতামা নামীয় সূমাত্রার যুবরাজ ১৬ শতাব্দীতে ঝড়ের কবল থেকে বেঁচে আসে এবং সুমাত্রার যুবরাজ প্রথম দেশটিতে এসে একটি সিংহের দর্শন লাভ করে যাকে মালয়ে ‘সিংগা’ বলা হয়। তাঁর দেয়া ‘সিংগা’ নাম থেকে ‘সিঙ্গাপুর’। জানা যায় সিঙ্গাপুরে তৃতীয় বৃহত্তম আদিবাসী হিসেবে তামিলদের বসবাস। সিঙ্গাপুর নামটি তামিল কিংবা সংস্কৃত থেকে আসে। লি কুয়ান ইউ কে সিঙ্গাপুরের জাতির জনক বলা হয়। কারণ তিনি এই ক্ষুদ্র দেশটিকে এশিয়ার অন্যতম ধনী এবং দুর্নীতি মুক্ত দেশে পরিনত করেন। তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৫ সালের ২২ শে মার্চ ৯১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে সিঙ্গাপুর একটি অনুন্নত রাষ্ট্র ছিল যার GDP ছিল US$320 এর নীচে। কিন্তু আজ এটি পৃথিবীর অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র যার GDP US$60,000 যা’ সেন্ট্রাল ইন্টালিজেনস এর পরিসংখ্যান অনুসারে পৃথিবীতে ৬ষ্ঠ তম। ভৌগলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদে দুর্বল এ দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এই উত্থান তাৎপর্যপূর্ন। বিশ্ববাণিজ্যিকরণ, উন্মুক্ত বিনিয়োগ, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রসার এবং যথাযথ সময়োপযোগী ব্যবস্থা দেশটির ভৌগলিক সমস্যার উত্তরন ঘটিয়ে দেশটিকে বিশ্ব বাণিজ্যের নেতৃত্বে সক্ষম করেছে। সিঙ্গাপুর ১৯৬৫ সালের ৯ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। ইউসুফ বিন ইসাক এর প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং অন্যতম প্রভাবশালী লিকুয়ান ইউ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীনতার পর পর ৪৩৩ বর্গমাইলের এই রাষ্ট্রটি নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সে সময় প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ বেকার ছিল এবং জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করতো। আবার দুই প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার অবন্ধু সুলভ আচরনে স্যান্ডউইচের মতো মাঝে পিষ্ট ছিল। তার না ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ না ছিল যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। দেশের উন্নয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা করেন কিন্তু তা শুধুই জলাঞ্জলি। কোন রকম সাড়া পাওয়া যায়নি। লি ও তার মন্ত্রীসভা জানতো অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের জন্য তাদেরকে গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্ব বাণিজ্যের সাথে নিজেদেরকে সংযুক্ত করতে হবে এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোকে তাদের দেশে উৎপাদনে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য তাঁর সরকার দেশে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্নত ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে মনোযোগী হলো। ফলে একটি ক্ষমতাধর শাসক (autocrat) সৃষ্টি করে চোরাচালানকারী এবং দুর্নীতিবাজদের মৃত্যুদন্ডের মতো কঠোর সাজা প্রদান করলো। এছাড়া অন্য যে কোন রাজনীতিক বা দল জাতীয়, রাজনৈতিক বা যে কোন জোট হুমকির কারন হলে তাদেরকে কারাদন্ডের ব্যবস্থা করা হলো। এভাবে অত্যন্ত কড়াকড়ি শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বিদেশীদের জন্য ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। যা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই সমাদৃত হয়। উল্লেখ্য প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ায় সিঙ্গাপুরের স্থিতিশীল পরিবেশ এ সুযোগকে কাজে লাগায়। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের যথার্থ স্থান ছিল পোর্ট স্থাপনের জন্য এবং তা স্থাপন করে। ফলে ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের এক চতুর্থাংশ উৎপাদনশীল ফার্মগুলোর বিদেশী বিনিয়োগে বা যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান। বিদেশী বিনিয়োগে সিঙ্গাপুরের জিডিপি দ্রুত বাড়তে থাকে। অত:পর সরকার দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরী, টেকনিক্যাল শিক্ষা, পেট্রোক্যামিকেল, ইলেকট্রনিক্স, আইসিটি একের পর এক প্রভৃতিতে সমৃিদ্ধ সাধনে তৎপর হয় এবং সকলের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। আজকের আধুনিক সিঙ্গাপুর একটি আল্ট্রা ইন্ড্রাস্ট্রিলাইজড সমাজ এবং এর পোর্ট ট্রান্সশিপম্যান্ট পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্যস্ততম । এর আগে আছে শুধু সাংহাই পোর্ট। প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন পর্যটক এদেশ ভ্রমনে আসে। সুইস ব্যাংকে ট্যাক্স আরোপ করায় বর্তমানে সিঙ্গাপুরের ব্যাংকগুলোকে সুইস ক্লায়েন্টরা নিরাপদ মনে করে। বর্তমানে সেখানে মানুষের গড় আয়ু ৮৩.৭৫ বছর যা পৃথিবীতে গড় আয়ুুর তৃতীয়তম। দুর্নীতিমুক্ত, কড়া আইন শৃংখলা ব্যবস্থার কারণে একে পুলিশী রাষ্ট্র বলা হলেও বর্তমানে পৃথিবীতে সর্বোত্তম পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ বসবাসের বাসস্থান হিসেবে সিঙ্গাপুরকে পরিগনিত করা হয়। দেশটি ভ্রমনের পূর্বে এমন চমকপ্রদ ইতিহাস জেনে আমরা পুলকিত হলাম এবং এ দেশকে জানবার ও নিজ চোখে এর উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখার আগ্রহ অনেকগুন বেড়ে গেলো। যথারীতি ১১ই এপ্রিল ২০১৯ আমাদের যাত্রা শুরু হয়। আমরা আল্লাহর অশেষ রহমতে যথাসময়ে সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছি। তখন রাত প্রায় ২ টা। আমরা নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে ইমিগ্রেশন সমাপ্ত করে এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে আমাদের গাইডের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। যথাসময়ে গাইড এসে আমাদেরকে নিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। যাত্রা পথে আলো ঝলমলে সিঙ্গাপুরের নাইট সিটি আমরা উপভোগ করতে থাকি। আমাদের গাইড জানায় এদেশে কখন লোডশেডিং হয়েছে তা তার মনে নেই। সে জন্মসূত্রে সিঙ্গাপুরী। তার বাবা ভারতীয় ছিল। তখন যে রাতের শেষ ভাগ ছিল তা বুঝার উপায় নেই। বিশাল উচুঁ উচুঁ দালান। কিন্তু প্রত্যেকটির মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব বিদ্যমান। ফ্লাইওভার বা ফুটওভার ব্রীজ যেদিকে দৃষ্টি যায় ফুলে ফুলে ভরা। বিশাল দালানগুলোর প্রতিটি বেলকনিতে গাছের সমাহার। কোথাও কোন বিলবোর্ড নজরে আসেনি। এ যেন সবুজ প্রকৃতির মাঝে বিশাল বিশাল ইমারত সজ্জিত। সম্পূর্ণ দেশটি সি সি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। তাই কোথাও অনিয়ম বা বিশৃংখলার সুযোগ নেই। অবশেষে আমরা ঘন্টাখানেকের মধ্যে হোটেলে পৌঁছি। সেরাংপুন রোডে (মোস্তফা সেন্টারের বিপরীতে) অবস্থিত Claremont Hotel Singapore এ আমাদের জন্য পূর্ব থেকেই ২টি বুকিং ছিল । অল্প সময়ে ফজরের ওয়াক্ত হয়। আমরা সালাত আদায় করে এমন সুন্দর দেশে আমাদের যাত্রা সুখময় ও নিরাপদ হবার জন্য পরম করুনাময়ের কাছে দোয়া করে কিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম নিই। পরের পর্বগুলোতে সিঙ্গাপুরের নাইট সাফারী, সন্তোষা দ্বীপ, চায়না টাউন, গার্ডেন বাই দ্যা বে, স্কাই পার্ক ইত্যাদি নিয়ে অর্জিত চমৎকার অভিজ্ঞতা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরার আশা রাখি ।
লেখক- প্রিন্সিপ্যাল, চিটাগং ভিক্টোরী ন্যাশনাল স্কুল-সিভিএনএস ও নারী উন্নয়নকর্মী ।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।

সর্বশেষ

০৯ নং ওয়ার্ড জাসাস কমিটি অনুমোদিত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৪৭ বছর ⦿বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print