
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
আল জামিয়া আল ইসলামীয়া পটিয়া’র সহকারি মহাপরিচালক ও ভাইস প্রিন্সিপাল আবু তাহের নদভী ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হয়ে ১০টি মামলায় জড়িয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। মামলাগুলো হাজিরা দিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর আদালতে যেতে গিয়ে আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অথচ যে ১০টি মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়েছে সেখানে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই। এব্যাপারে তিনি রাষ্ট্্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আজ শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে পটিয়ায় গুলশান মেহরিন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আবু তাহের নদভী এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে ‘সুদমুক্ত সমাজ গঠন’ করার সুন্দর স্লোগানে মুখরিত হয়ে এদেশের হাজার হাজার ওলামাদের মতো আমিও এহসান সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থায় যোগদান করি। পরে সংস্থাটি এহসান রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ২০০৮ সালের দিকে এসে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। দুটি সংস্থায় সভাপতি পদে থাকলেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আর্থিক কোন লেনদেন বা সুবিধা গ্রহণ করিনি। সংস্থাটির পক্ষ থেকেও তিনটি প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়েছে, আমাকে শুধুমাত্র সংস্থার মুরব্বী হিসেবে রাখা হয়ে ছিল।
সংস্থা দুটির অনিয়ম ও দূর্ণীতি প্রসঙ্গ ঠেনে তিনি বলেন, বিষয়গুলো উল্লেখ করে ২০০৮ সালের শেষের দিকে পরিচালনা পরিষদের সভায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। কিন্তু এর কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ২০০৯ সালের ১২ মে সভাপতির পদ থেকে আমি পদত্যাগ করি।
আবু তাহের নদভী বলেন, ঢাকার উত্তরা ৩৯ নম্বর রোড়ের রোজ গ্রীণ হাউজে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান দুটিতে আমি আরো চারবারসহ সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২০ জুন পঞ্চমবারের মতো পদত্যাগপত্র সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে জমা দিই। এতে আমি অনিয়ম, দূর্নীতিসহ পদত্যাগের ৫টি কারণ উল্লেখ করি। বিশেষ করে এমডি জাহাঙ্গীর কর্তৃক ব্যাপক দূর্ণীতির কথা এবং আমার স্বাক্ষর জাল ও পঞ্চাশ লাখ টাকা আত্মসাতের কথাও আমি উল্লেখ করি। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১ জুলাই সংস্থার সভা নং-১১৮ এর সিদ্বান্ত মোতাবেক উক্ত সংস্থার সভাপতি ও কার্যনির্বাহী পরিষদ সভাপতি পদ থেকে আমার অব্যাহতি কার্যকর করে ‘পদত্যাগপত্র কার্যকর করা হলো’ মর্মে আমাকে প্রত্যায়নপত্র দেয়া হয়। অপরদিকে সংস্থার পক্ষ থেকে জয়েন্ট স্টকে আমার অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা অদৃশ্য কারণে কার্যকর করেনি।
এরপর শুরু হওয়া একের পর এক মামলা তিনি প্রসঙ্গে বলেন, আমার বিরুদ্ধে পাবনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০/১২টি মামলা দায়ের করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দ্বারা ভোক্তভোগীরা। তিনি বলেন, আমার পদত্যাগের বিষয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে গোপন রাখায় প্রতিষ্ঠান দুটির সভাপতি হিসেবে আমাকে মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ আইনগতভাবে ২০১৬ সালের পর আমি প্রতিষ্ঠান দুটির কেউ নই।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দায়ের হওয়া মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে উঠেছেন। বয়োবৃদ্ধ বয়সে হাজিরা দিতে গিয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে আর্থিক অনটন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা না নিয়ে এখন অর্থ আত্মসাতের মামলার আসামি হয়ে আইনী হয়রানির শিকার হচ্ছি।
প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে লিখিত ডিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্থার উন্নতি বা অবনতি সম্পর্কে আমি দায়ি নই। সভাপতি হিসেবে আমি শুধু স্বাক্ষর করতে পারবো। কোন দায়-দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। কোন বিনিময় নিবো না। প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ও অর্থের সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে না।
তিনি বলেন, এসব কিছুর পরও প্রতিষ্ঠানের দায় চাপিয়ে আমার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের পক্ষ হতে একের পর এক মামলা হচ্ছে। মামলার কারণে আমি সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও শারীরিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। মামলার তদন্তকারী সংস্থার প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন সুষ্ঠু তদন্ত করে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। দূর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতে আমার লেশমাত্র সংশ্লিষ্টতা থাকলে আমাকেও যেন ছাড় না দেয়।