ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

মানব পাচার রোধে সরকারি সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে : মানবাধিকার কমিশনার

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

মানব পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও অন্যান্য অংশীজনের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সংস্থাটির অভিবাসন কর্মসূচি আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলছেন পাচার রোধে সরকারের দিক থেকে কোন চেষ্টাই নাই। আমি বলবো চেষ্টা আছে, কিন্তু বিষয়টি সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, দীর্ঘদিনের সরকারির চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে সেটা আমার মনে হয়েছে। আমরার অনেক সহকর্মী (সরকারি কর্মকর্তা) এখানে রয়েছেন তারা হয়তো স্বীকার করবেন যে, সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আরো কিছু করার সুযোগ রয়েছে।

২০১২ সালে প্রণীত মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনটি কীভাবে আরো কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনের একটি দায়িত্ব হচ্ছে যত বিদ্যমান আইন রয়েছে এবং যেগুলো ভবিষ্যতে হবে সেসব পর্যালোচনা করে মানবাধিকারের দিকটা দেখা এবং সরকারকে পরামর্শ দেয়া। মানবাধিকার কমিশন দায়িত্ব নিচ্ছে মানব পাচার আইনসহ আরও কিছু আইন পর্যালোচনা করার। আমি বিশ্বাস করি যে, আইনটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করা গেলে আরও নতুন কিছু তথ্য আমরা পাবো। কারণ গত সাত বছরের হিসেবে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলোকেও আমলে নেয়া যেতে পারে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে মানব পাচার পর্যবেক্ষন প্রতিবেদন মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও করা হবে বলেও জানান তিনি।

মানব পাচার রোধ, নিয়মিত অভিবাসন এবং অনিয়মিত অভিবাসনকে নিরুৎসাহী করতে গণমাধ্যম আরো বেশি ভুমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অনেক বেশি ভুমিকা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে গণমাধ্যম যদি আরো বেশি গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ প্রচার করে, তবে মানব পাচার প্রতিরোধ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশীই জানেন না, বিদেশ গিয়ে তাকে কী কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে তাদের সঠিক তথ্য দিতে প্রচারণা চালানো যেতে পারে এবং একটু সম্মানজনক কাজের বাজার কোন দেশে রয়েছে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া যেতে পারে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলেও মত দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের মানুষতো খেয়ে-পরে খারাপ নেই তবুও কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনিয়মিতভাবে বিদেশ যেতে হবে বা পাচারের শিকার হতে হবে? এক্ষেত্রে সিস্টেমের যেমন ত্রুটি রয়েছে তেমনি মানুষের লোভও কারণ। গত মে মাসে ভূমধ্যসাগরে অনেকে মারা গেলেন। এর কিছু দিন পরে আরো যাদেরকে জীবিত উদ্ধার করা হলো তাদের অনেকেই আসতে চাচ্ছে না, যেকোনভাবেই হোক তাকে ইউরোপ পৌঁছতেই হবে। এক্ষেত্রে শুধু অজ্ঞতা নয়, লোভও দায়ী।

তিনি বলেন সব অনিয়মের মূলে রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে না পারলে সমাধান অসম্ভব।

মানবপাচার রোধে বেসরকারি সংস্থারগুলোর অবদানের কথা উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সরকারের সাথে সাথে বেসরকারি সংস্থাগুলোও মানব পাচার প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। এভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করায় সরকারের জন্য কাজ করা সহজ হয়।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম বলেন, অনিয়মিতভাবে বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া এবং পাচারের শিকার যারা হন তারা বিভিন্ন চাপে পড়ে মামলা করতে পারেন না। যারা মামলা করেন তারাও আপোষ করে ফেলতে বাধ্য হন। কারণ এই ঘটনার রেশে তার বিরুদ্ধে বা তার কোনো ভাই-বোনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এমনও ঘটনা আছে একজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করায় তার ভাইকে খুনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

তাই কেউ বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সে দেশ থেকেই যদি মামলা করার সুযোগ পায়। তাহলে তাদের উদ্ধার কাজ এবং প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার কাজ একই সঙ্গে করা যেতে পারে বলে মনে করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

সমাপণী বক্তব্যে ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহি পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, মানব পাচারের বিষয়টিকে সামষ্টিকভাবে দেখা দরকার। এ সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো সমন্বয়ের দিক থেকে জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করা এবং দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সমাজে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজন নতুনত্ব আনা।

তিনি বলেন, মূলত অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার কারণেই মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে বা অনিয়মিতভাবে বিদেশ যাচ্ছে। তাই তাদের জন্য দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়টিও ভেবে দেখা যেতে পারে। সরকারের যেকোনো উদ্যোগে ব্র্যাক সবসময় সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, ২০১২ সালে মানবপাচার আইন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬৮টি মামলা হয়েছে। এর মধে নিষ্পত্তি হওয়া হওয়া মামলার সংখ্যা খুবই নগণ্য। এখনও বিচারাধীন রয়েছে ৪ হাজার ১০৬টি মামলা।

তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টানা তৃতীয়বারের মতো টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

অনষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন উইনরক ইন্টারন্যাশনালের চীফ অব পার্টি (কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পারসন) লিসবেথ জোনভেল্ড, ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক জেনেফা জব্বার, সুইস এজেন্সী ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপরাশেনের (এসডিসি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজিয়া হায়দার।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে আসা তিন জন ভুক্তভোগী তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন।

পরামর্শ সভাটি আয়োজনে সহযোগিতা করে সুইস এজেন্সী ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপরাশেন (এসডিসি) এবং রয়্যাল ডেনিশ দূতাবাস।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print