ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

প্রেমের বিয়ের ৯ মাস পর হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ রেখে পালালো স্বামী!

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

মাত্র নয় মাস আগে প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত একটি সিমেন্ট কোম্পানির বিক্রয় ম্যানেজার অপূর্ব রায় ও সদ্য মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া দিপা রাণী দেবনাথ। কিন্তু এই ভালোবাসা শেষ হয়ে যেন পরিণত হল বিভীষিকায়।

বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে স্ত্রী দিপার লাশ রেখে পালিয়ে গেলেন স্বামী অপূর্ব।

জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক থেকেই কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউপির উছমানপুর গ্রামের ডা. পরিতোষ দেবনাথ এর মেয়ে দিপা রাণী দেবনাথের বিয়ে হয় একই গ্রামের মৃত অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে অপূর্ব রায়ের সঙ্গে। তবে অপূর্ব তার মা ও বোনকে নিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দিপাকে বিয়ের পর অপূর্ব শহরের পাইকপাড়া এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। এ বাসায় মা প্রতিমা রাণী রায় থাকলেও অপূর্ব’র একমাত্র বোন মমি রায় তার স্বামীকে নিয়ে ৩২ কিশোরগঞ্জ শহরে বসবাস করেন। তবে অপূর্ব রায়ের সংসারের হর্তাকর্তা হলেন বোন মমি রায়। তার সিদ্ধান্ত ছাড়া এ সংসারে কিছুই হয় না।

.

পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অপূর্ব ও দিপা লেখাপড়া করতো, সেই থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। অপূর্ব বহু আগেই মাস্টার্স পাশ করে চাকরি জীবন শুরু করেন। আর দিপা ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। তাদের বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সাংসারিক কলহ শুরু হয়। স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদ প্রতিনিয়ত দিপাকে মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। একমাত্র মেয়ের সুখের কথা ভেবে, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের দাবি পূরণে দিপার বাবা নগদ তিন লক্ষ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উপহার হিসেবে দেন।

সম্প্রতি দিপা প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গত ২৫ অক্টোবর ভাইভা পরীক্ষা দেন কিশোরগঞ্জ অষ্টগ্রাম উপজেলায়। এরআগে দিপা সন্তান সম্ভবা হওয়ার খবরে তার স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। অপূর্ব ও তার মায়ের সাফ কথা এখন বাচ্চা নেওয়া যাবে না। এই বাচ্চা লালন-পালন করার সময়-সুযোগ তাদের নেই। তাই ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত করাতে তারা দিপাকে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু দিপা তার গর্ভের সন্তানের মা হওয়ার পক্ষে অনড় সিদ্ধান্তে থাকেন। ফলে তার ওপর শুরু হয় নানা ধরনের নির্যাতন।

বুধবার রাতে দিপার মাতা বাঙ্গালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী রাণী দেবী এই প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, কিছুদিন আগে আমার মেয়ে ফোন করে বলে “মা ওদের কারণে আমি গর্ভের সন্তানের মা হতে পারছিনা। ওরা ক্লিনিকে নিয়ে আমার গর্ভপাত করাতে চায়। এভাবে গর্ভপাত করালে ভবিষ্যতে আমি আর সন্তানের মা না-ও হতে পারি। ক্লিনিকে যেতে আমি রাজি না হওয়ায় ওরা আমার গলা টিপে ধরতে চায়। ওদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছিনা। বাবাকে বলো বাবার চেম্বারের হোমিওপ্যাথিক কোনো ওষুধে এ সমস্যার নিরাপদ সমাধান হবে কি না।”

জয়ন্তী দেবী বলেন, মেয়ের মুখে কথাগুলো শুনে আমি পাগলের মতো অপূর্ব’র বোন মমি রায়কে ফোন করে বিষয়টি জানাই। জবাবে মমি আমাকে বলে “এটি আমাদের পারিবারিক ব্যাপার ও আমাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আপনারা এসবে নাকগলানোর দরকার নেই।” আজ তারা আমার একমাত্র মেয়েটাকে হত্যা করে লাশ হাসপাতাল মর্গে ফেলে পালিয়ে গেছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার সন্তান হারার বিচার চাই।

দিপার বাবা ডা. পরিতোষ দেবনাথ বলেন, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট জেনে মেয়ে আমার ফোনে বলে “বাবা ছয় নাম্বারের জন্য আমি প্রথমস্থান অর্জন করতে পারিনি। দ্বিতীয় হয়েছি।” মেয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে এই আমার শেষ কথা হয়।

পরিতোষ দেবনাথ বলেন, বুধবার দুপুরে অপূর্ব আমাকে ফোন করে বলে ” আপনার মেয়ে দিপা অসুস্থ। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আপনারা তাড়াতাড়ি এ হাসপাতালে চলে আসেন।” এ খবরে আমি ও আমার স্ত্রী সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছে আমার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে লোকজন নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরেও প্রথমে মেয়ের সন্ধান পাইনি। পরে অপূর্ব’র মুঠোফোনে বহুবার চেষ্টা করেছি, তার মুঠোফোন বন্ধ। সন্ধ্যার পর কিছু লোকের কথায় হাসপাতাল মর্গে উঁকি দিতেই দেখি আমার মেয়ের লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। তখন আমি বাবা হিসেবে একমাত্র কন্যা সন্তানের লাশ চোখের সামনে পড়ে থাকতে দেখে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। আমি এর বিচার চাই।

দিপার মামা সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ এলাকার বাসিন্দা সুভাষ দেবনাথ অভিযোগ করে বলেন, দিপাকে তার স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে খোঁজ করলে অপূর্ব ও তার মাকে পাওয়া যায়নি। তাদের ভাড়া ফ্ল্যাটের মালিক সাংবাদিকদের জানান, দিপার লাশ হাসপাতালে রেখে তারা গাঢাকা দিয়েছে। তাদের বসবাসের ফ্ল্যাটে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. তারেক জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা আছে। নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  –

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print