ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

৩০ বছর পর গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই (ভিডিও)

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

গৃহকধূ সগিরা মোশেদ।

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে থানা পুলিশ, ডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা যে হত্যা মামলার কুল কিনারা করতে পারেনি চাঞ্চল্যকর সে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে আবারও সাফল্য দেখিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রাজধানীতে ৩০ বছর আগে গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন পিবিআই।

মারুফ রেজা নিজ হাতে গুলি চালায়।

১৯৮৯ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছেই প্রকাশ্যে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। ঐ স্কুলেই সগিরা মোর্শেদের মেয়ে পড়ালেখা করত। হত্যার পরই ছিনতাইকারী সাজিয়ে খুনিদের রক্ষা করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।  সে সময়ের একজন মন্ত্রীর প্রভাবে মামলা থেকে খালাস পেয়ে যায় হত্যার সাথে জড়িত মাসুম রেজা নামে হত্যার সাথে জড়িত এক আসামীও। মন্ত্রীর চাপেই পুলিশ ছিনতাই নাটক সাজানো হয়। তার আত্মীয় এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়ে যান। এরই মধ্যে সগিরা মোর্শেদের স্বামীর বড়ো ভাই, ভাবিসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। খুনি মারুফ রেজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মাত্র ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করেন।

ডা. হাসানের শ্যালক। খুনে সহযোগী আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান।

রমনা থানা পুলিশ জানায়, মাত্র ৩০ মিনিট রমনা থানায় মামলাটি পুলিশের কাছে ছিল। ময়নাতদন্ত শেষ করে এসেই দেখি, মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তত্কালীন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এটি যে কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা নয় তা স্পষ্ট। কারণ হত্যাকারীরা তাকে গুলি করে সরাসরি পালিয়ে যায়। কোনো ধরনের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেনি। গুলি করে হত্যার ধরন দেখে ঐ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সগিরা মোর্শেদের হত্যার খবর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রী-অভিভাবকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। দীর্ঘদিন স্কুলের ক্লাস বন্ধ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সগিরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল।

সগিরার জা সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধের জেরে সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করা হয়। সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করার জন্য তার ভাসুর হাসান আলী চৌধুরী ও জা সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন ২৫ হাজার টাকায় মারুফ রেজা নামের এক খুনির সঙ্গে চুক্তি করেন।’

পিবিআই-এর প্রধান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দিন সগিরা মোর্শেদ তার মেয়েকে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে নিয়ে ফিরছিলেন। পথে মারুফ রেজা তার এক সহযোগীসহ মোটরসাইকেলে করে এসে সগিরা মোর্শেদের রিকশার গতিরোধ করে। মারুফ রেজা প্রথমে সগিরা মোর্শেদের হাতের সোনার চুড়িসহ অন্য গয়না ছিনতাই করার চেষ্টা করেন। এ সময় সগিরা মোর্শেদ বাধা দিলে মারুফ রেজা গুলি করেন, যার একটি সগিরা মোর্শদের হাতে ও একটি বুকে লাগে। এরপর তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।’

সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী।

জানাগেছে, গৃহবধূ সগিরা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সগিরার স্বামীর ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা। দুই বাসার বুয়াদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল বলে জানায় পিবিআই।

পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল মাসুদ তাঁর ফেসবুক আইডিতে তুলে ধরেন ঘটনার আদ্যোপান্ত সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল।

একটি চাঞ্চল্যকর খুনের মামলার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন করছে পিবিআই । গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন আসামি। প্রত্যেকেই আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিন দশক আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যাকাণ্ডে তার ভাসুর ও জাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই র একটি টিম।দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের মধ্যে ঈর্ষা থেকে খুন হয়েছিলেন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সগিরা মোর্শেদ। সগিরা মোর্শেদ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছিলেন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মিন্টু নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালে ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারও শুরু করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ছয়জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। সাক্ষীদের কাছ থেকে তখন আদালতের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মারুফ রেজা নামের এক ব্যক্তির সম্পৃক্তকা আছে বলে মনে করেন। যিনি ততকালীন এক মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ার সুবাদে পুলিশকে প্রভাবিত করে চার্জশীট থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয় বলে জানা যায়।

তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করার আবেদন করেন। আদালত তাতে সায় দেন। বিচারিক আদালতের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন মারুফ রেজা। এরপর চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত এ খুনের মামলাটি ২৬ জন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেন। গত ১১ জুলাই হাইকোর্ট পিবিআইকে অধিকতর তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

পিবিআই -এর স্বপ্নযাত্রায় সারথি। তিনি বনজ কুমার মজুমদার স্যার। স্যারের কথায় আলোচিত চাঞ্চল্যকর মামলাসহ যে মামলাগুলো ডিটেক্ট করা যাচ্ছে না বা যে সব হত্যাকান্ড ক্লুলেস হয়ে পরে আছে দিনের পর দিন এ ধরনের জটিল মামলা দ্রুত তদন্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসাই আমাদের পিবিআইয়ের কাজ।পিবিআই যে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও বস্তনিষ্ঠ তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।পিবিআই টিম মাঠে নামেন। ডিআইজি স্যার এবং অন্যান্য সিনিয়র অফিসিয়ালস প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান প্রানবন্ত কাজ চলতে থাকে।

ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন রিকশাচালক ছালাম। তাঁকে খুঁজে বের করার মিশনে নামেন পিবিআই। কত ঘটনা কতশত ত্যাগ বিরামহীন ছুটে চলায় অবশেষে ছালামের কাছে পৌছে যান পিবিআই টিম। তাঁর দেওয়া তথ্য এবং সগিরার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, সগিরার খুনের ঘটনার প্রকৃত কারণ।

রিকশাচালক ছালাম মোল্লা। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৬ বছর। খুনের ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। ছালামের সামনে ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রমনা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ খুন হন। খুনিদের চেহারা কেমন ছিল? কী কথা হয়েছিল খুনিদের সঙ্গে? কীভাবে সগিরা মোর্শেদকে খুন করা হয়? খুনের পর খুনিদের ধরার জন্য তিনি পিছু নিয়েছিলেন—এসব তথ্য পিবিআই র বিস্তারিত অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

১৯৮৯ সালে মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল স্কুল থেকে আনার জন্য রাজারবাগের বাসা থেকে সেদিন বিকেল ৫টায় রওনা হন সগিরা। রাজারবাগ মোড় থেকে চার টাকায় রিকশাচালক ছালামকে ভাড়া করেন। ছালাম মৌচাকের গলি পার হয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। স্কুলের অদূরে রিকশার গতিরোধ করে একটি মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলের দুজন লোক ছিল। একজন ছিলেন লম্বা, তাঁর মুখ লম্বাকৃতির। গোঁফ ছিল পাতলা। আরেকজন ছিলেন খাটো, ভালো স্বাস্থ্যবান। তখন মোটরসাইকেল থেকে নেমে সগিরার কাছে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় একজন। আর বাঁ হাতের চুড়ি ধরে টানাটানি করতে থাকে। তখন সগিরা মোর্শেদ ওই লোকটির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু তোমাকে চিনি।’ সগিরাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়। যা তাঁর বুকের বাম পাশে লেগে বুক ভেদ করে।সগিরা মোর্শেদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনার প্রবাহ অন্যদিকে ফেরাতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে সগিরাকে নির্মম ভাবে খুন করা হয়।

সগিরা মোর্শেদের স্বামীর নাম আবদুস ছালাম চৌধুরী। তাঁর বড় ভাই সামছুল আলম চৌধুরী। মেজো ভাই চিকিৎসক হাসান আলী চৌধুরী। তিনজনই তাঁদের পরিবার নিয়ে আউটার সার্কুলার রোডে তখন বসবাস করতেন। সগিরা মোর্শেদরা থাকতেন দ্বিতীয় তলায়। চিকিৎসক হাসান তাঁর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীনকে নিয়ে থাকতেন ওই বাসার তৃতীয় তলায়। সগিরা মোর্শেদ স্বামী-স্ত্রী দুজনই সবার চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত। এটি নিয়ে তাদের পারিবারিক দ্বদ্ব শুরু হয়েছিল মেজ ভাই বারডেম হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীনের সঙ্গে। তারা স্বামী-স্ত্রী ছোট ভাইয়ের এমন উন্নতি সহ্য করতে পারেনি। শাহীন তিন তলা থেকে প্রায় সময় ময়লা-আবর্জনা ফেলতেন, যা সগিরা মোর্শেদের পেছনের রান্না ঘর ও সামনের বারান্দায় পড়ত। এ নিয়ে সগিরার সঙ্গে শাহীনের প্রায় ঝগড়াঝাঁটি হতো। আর শাশুড়ি থাকতেন সগিরার সঙ্গে। তাঁর শাশুড়ি তাঁকে ভালোবাসতেন। এ নিয়ে চিকিৎসক হাসানের স্ত্রী শাহীন খুব হিংসা করতেন। পারিবারিক তুচ্ছ কারণ হাসান আলী ও তাঁর স্ত্রী শাহীনের মনে ইগোর জন্ম হয়। এক সময় শাহীন সগিরাকে শায়েস্তা করার জন্য তাঁর স্বামী হাসানকে বলেন। চিকিৎসক হাসানের রোগী ছিলেন মারুফ রেজা। যিনি তৎকালীন সিদ্ধেশ্বরী এলাকার ভয়ংকর সন্ত্রাসী ছিলেন। সগিরাকে শায়েস্তা করার জন্য মারুফের সঙ্গে কথা বলেন চিকিৎসক হাসান। কাজের জন্য মারুফকে তখন ২৫ হাজার টাকাও দেয়া হয়। মারুফ রেজার সহযোগী হিসেবে হাসানের শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ানকেও সাথে দেয়া হয়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print