ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট সেতু যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে! (ভিডিও)

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

বানিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম শহর হতে দক্ষিণাংশে অবস্থিত একমূখী কালুরঘাট ব্রীজের অবস্থান। দ্বিখন্ডিত বৃহত্তম চট্টগ্রাম জেলাকে কর্ণফুলী নদীর দ্বারা উত্তর দক্ষিণে ভাগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার এই একমূখী কালুঘাট ব্রীজটি। ৯০ বছর বয়সী মেয়াদোত্তীর্ণ একমূখী ব্রীজটি দিয়ে এখনো পর্যন্ত হাজার হাজার ভারী, হালকা নানান মোটরযানসহ ১ লাখেরও বেশি মানুষ চলাচল করে জীবনের ঝুঁকি ও ভোগান্তি মাথায় নিয়ে।

১৯ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝু্ঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেতুর ওপর দিয়ে চলছে যানবাহন। জোড়াতালি দেয়া ৯০ বছরের পুরনো সেতুটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে যান চলাচলের জন্য। চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ ভারী যানবাহন। চলছে যাত্রীবাহী ও ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাঙ্কার। এই সেতু মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতে ট্রেন চলাচলের জন্য নির্মিত।

বয়সের ভারে ন্যুজ এ সেতু যে কোন সময় ধসেপড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা সেতু পারাপারকারী লোকজন ও মোটরযান পরিচালনাকারীদের। অতিদ্রুত একমূখী কালুরঘাট সেতুর স্থানে দ্বিমূখী সড়ক ও রেলসেতু নির্মাণের দাবীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন সহ নানান শ্রেণীর মানুষ আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

জানাগেছে, ১৯৩০ সালে নির্মিত মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম চুয়েটের একদল গবেষক। তারপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে যানবাহন সহ লোকজন। সেতুর পূর্ব দিকে উঠার সময় দেখা যায় রেলওয়ে কতৃপক্ষের সাইবোর্ড, যাতে লিখা রয়েছে এই সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন ছাড়া জনসাধারণের চলাচল নিষেধ। আরেক টি সাইনবোর্ডে দেখা যায় এই সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক মালামাল পরিবহণ নিষেধ। আদেশ অমান্যকারীকে ফৌজদারীতে সোপর্দ করা হইবে।

.

সেতুর বেহালদশা কেউ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না। একমূখী সেতুটির উপর উঠলে দেখতে পাওয়া যায় শতাধিক ছোট বড় গর্ত। কিছু কিছু গর্ত আছে ভারী যানবাহন গর্তে পরলে উঠতে অনেকক্ষণ সময় লাগে। আর ব্রীজটি ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠে। পশ্চিম থেকে কিছু সামনে গেলে সেতুর ক্ষতগুলো এতোই ভয়াবহ যা দেখলে মনে হবে যেন পাহাড়ী ভাঙরাস্তা। তাছাড়া সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে যেমন এক পাশ দিয়ে যান বাহন পারাপারের জন্য ছাড়লে কয়েক ঘন্টা সময় ধরে ছাড়তে থাকে আর অন্য পাশ দিয়ে রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়। গেইটের সিংন্যালের দায়িত্বে নিয়োজিত লোকটি শুধু রাস্তা বন্ধের বাঁশখানা নামিয়ে আর তুলে দিয়েই দায়িত্ব পালন করেন।

.

প্রতিদিন শহরে যাতায়াতকারী কর্মজীবি শামসুল আলম বলেন, ভাই আমি ছাড়া প্রতিদিন আমার মত হাজার হাজার লোকজন এই ব্রীজ দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। আমি তো কাজ করি বাহার সিগন্যাল নামক স্থানে একটা জুতা তৈরির কারখানায়। আমাকে সকাল ৮ টায় হাজির হতে হয়। আমার বেতন ১৩ হাজার টাকা প্রতি মাসে। যেদিন যাবো না সেদিনের বেতন কেটে রাখে। এই ১৫ মিনিটের আসা যাওয়ার রাস্তা এখন সময় লাগে দেড় থেকে ২ ঘন্টা। ছুটির পর বাড়ীতে যেতে যেতে রাত ৯টা বা ১০ টা বাজে। শামসুল আলমের সাথে কথা বলতে বলতে দেখতে পেলাম রোগী বহন করা একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে।

.

অ্যাম্বুলেন্স এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত এক রোগী। রক্তাক্ত শরীর পরিবারের সদস্যরা মুছে দিচ্ছে। আর পশ্চিম পাড় দিয়ে যানবাহন আসতেই আছে। কথা বললাম আহত রোগীর ভাই জানে আলমের সাথে তিনি বলেন- ভাই দেখেন এখানে জরুরী রোগী বললেও কাজ হয় না । তাদের যখন ইচ্ছে হয় তখন গাড়ি বন্ধ করে আর ছাড়ে। রোগী মারা গেলেও তাদের কোন প্রকার দায়িত্ব নেই। তিনি আরো বলেন যদি কোন ভুমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে এই ব্রীজটা ভেঙ্গে যেত তাহলে হয়তো আরেকটা ব্রীজ তৈরী করার পরিকল্পনা সরকার করতো।

একটি সেতুর কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশাল একটি জনপথ। এই সেতুটি বার বার রাজনৈতিক দলের ভোটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর প্রধান অঙ্গীকার ছিল ‘কালুরঘাট সেতু’ নির্মাণ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘একবছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারলে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করবেন’।

.

নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিকবার সেই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেছেন। সর্বশেষে গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে বলেছেন, কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু না করলে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তার আগেই সাংসদ বাদল গত ৭ নবেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতের একটি হাসপাতালে মারা যান। কালুরঘাট সেতুর স্বপ্ন নিয়েই তিনি চলে যান।

কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে সেতু নির্মাণের দাবি করেছে। আর বোয়ালখালীবাসী তো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।

কালুরঘাট সেতু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আশ্বাসের বাণী শুনে আসছেন চট্টগ্রামবাসী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে কর্ণফুলী নদীর ওপর আরেকটি সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর (হযরত শাহ আমানত সেতু) উদ্বোধন শেষে পশ্চিম পটিয়ায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কালুরঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন।

.

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করার পর অনেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দ্রুত সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বোয়ালখালী তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশা জেগেছিল। কিন্তু কালুরঘাট সেতু নির্মাণ এখনো মূলা ঝুলানো প্রকল্পই রয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত কালুরঘাট সেতুর ওপর সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন চান বোয়ালখালী তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের শাসন আমলে ব্রিটিশ শাসকরা বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য আনা নেওয়ার জন্য কর্ণফলী নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশদের কাজে লাগানোর জন্য ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজন হয় ১৯১৪ সালে এবং কর্ণফুলী নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। র্রুনিক এন্ড কোম্পানী সেতু বিল্ডার্স হাওড়া নামক সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে এই সেতু নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৩০ সালে র্রুনিক এন্ড কোম্পানী সেতু বিল্ডার্স হাওড়া নামক প্রতিষ্ঠানটি কালুঘাট ব্রীজটি নির্মাণ কাজ শেষ করেন। মূলত রেল চলাচলের জন্য ৭শত গজ লম্বা ব্রীজটি ১৯৩০ সালে ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। পরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মাফ্রন্টের যাতায়াতের সুবিধার্থে পাটাতন যুক্ত করা হয়। পরে দেশ বিভাগের পর পাটাতন তুলে দেওয়া হয়। ১৯৫৮ সালে সব ধরনে যান চলাচলের যোগ্য করে তুলেন। ব্রীজটিতে রয়েছে ২টি এব্যাটমেট, ৬টি ইটের পিলার,১২টি স্টীলপিলার এবং ১৯টি স্প্যান। যা বর্তমানে দৃশ্যমান তালিজোড়া আর ভাঙ্গাচুরা।

.

কালুরঘাট সেতুর কাজ আগামী বছরের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ কোরিয়ার অর্থায়নে আগামী বছর শুরু হবে। এছাড়া সড়ক সেতুর কাজের ব্যাপারে কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘কালুরঘাটে দুটি সেতু হবে। রেল সেতু করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সড়ক সেতু আমাদের মন্ত্রণালয় করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই ঘোষণা সব বিভ্রান্তির নিরসন ঘটাবে। কালুরঘাট সেতুর জন্য জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি দীর্ঘদিনের। কাজেই আমাদের অংশটার কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সেই নির্দেশ দিয়েছি।’

ছবি/ভিডিও/প্রতিবেদন- মঞ্জুরুল ইসলাম।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print