
পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন-২০১৬ জাতীয় সংসদে পাসের প্রতিবাদ এবং জেলা ভিক্তিক বিভিন্ন দাবীতে বাঙালী সংগঠনগুলোর ডাকে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিসহ ৩ পার্বত্য জেলায় আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ভোর থেকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে।
হরতালে জেলাগুলোতে সকল যানবাহন ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে।
আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে আহুত ২৪ ঘন্টার ( বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত) চলছে। হরতালে সমর্থনে সকাল থেকে বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় টায়ার আগুন,খন্ড,খন্ড মিছিল ও পিকেটিং করতে দেখা গেছে। হরতালের কারনে দুরপাল্লা ও আভ্যন্তরীন সড়কে সব ধরনে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দোকাপাট খুলেনি। শহরে রিক্সা ও টমটম চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

হরতালের কারণে খাগড়াছড়িতে আটকা পড়েছে সহসস্রাধিক পর্যটক। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থায়। একই দাবীতে আগামী রবিবার ( ভোর ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টায় ) সংগঠনগুলোর ২৪ ঘন্টা হরতাল রয়েছে।
পার্বত্য ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন বাতিল ও খাগড়াছড়ি আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ,পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য গণ পরিষদ, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ যৌথভাবে তিন পার্বত্য জেলায় আজ বৃহস্পতিবার ও রবিবার এ ৪৮ ঘন্ট এ হরতালের ডাক দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ১ লা আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ভোটিং সাপেক্ষে ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ৯ আগষ্ট তা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে গত বৃহস্প্রতিবার(৬ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন(সংশোধিত) বিলটি ২০১৬ পাশ হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন বাতিল, বাঙ্গালী নেতা আতিকুর রহমানের মুক্তির দাবিতে রাঙামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা চলছে। ভোর ৬টা থেকে হরতালের সমর্থনে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে হরতাল সমর্থকরা পিকেটিংয়ে অংশ নেয়। এছাড়া হরতালের কারনে শহরের দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। জেলার অভ্যন্তরে ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহি সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি নৌ-পথেও কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করছে না।

শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়ি, কলেজগেইট, বনরূপা, তবলছড়ি, রিজার্ভবাজার, দোয়েলচত্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হরতাল সমর্থকদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। এছাড়া নাশকতা এড়াতে অফিস আদালত, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শহরে ব্যাপক সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যনীয়।
উল্লেখ্য, পার্বত্য জনগণের আন্দোলনকে উপেক্ষা করে সরকার পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ ও তার সংশোধনী আইন ২০১৬ তড়িগড়ি করে জাতীয় সংসদে পাস করার প্রতিবাদে এবং বান্দরবানের বাঙ্গালী নেতা আতিকুর রহমানের মুক্তির দাবিতে ১৩ অক্টোবর ও ১৬ অক্টোবর হরতাল পালন করার ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাঁচটি বাঙ্গালী সংগঠন। গত ৯ই অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন সংগঠনগুলোর মুখপাত্র এ্যাডভোকেট আলম খান।
প্রেস বার্তায় বলা হয়, সরকার গত ০৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্রগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ পাস করায় পাঁচ বাঙ্গালী সংগঠন নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, এই বিতর্কীত আইন পার্বত্য চট্রগ্রামে বাঙ্গালী এবং উপজাতীদের মুখোমুখি দাড় করিয়েছে, ইতোমধ্যে দ্বন্ধ সংগাতের সমুহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই এই বিতর্কিত আইন শীঘ্রই বাতিল এবং বান্দরবানের পাঁচ সংগঠনের শীর্ষ নেতা, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি আতিকুর রহমান মুক্তির দাবিতে উক্ত কর্মসূচি গ্রহন করে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।