
স্ত্রী আশামনি কর্মস্থলে অন্য যুবকের সাথে পরকিয়ায় জড়িত এমন সন্দেহ থেকে তাকে গলায় গামছা পেচিয়ে হত্যা করেছে ঘাতক স্বামী আলেক শাহ। আর হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাসার কাছে র্যাব কার্যালয়ে গিয়ে স্ত্রীকে নিজ হাতে হত্যার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারের অনুরোধ করেন।
চট্টগ্রামের ইপিজেড থানাধীন ওয়াসা গলিতে এ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে এ বর্ণনা দেয় ঘাতক আলেক শাহ।
সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ওয়াসা গলির আবিয়া ভবনের নীচ তলার ভাড়া বাসায় স্বামীর হাতে খুন হয় পোষাক শ্রমিক আশা মনি।
নিহত আশা মনি (২৬) চট্টগ্রামের ইপিজেডের রিজেন্সী নামক পোশাক কারখানায় দীর্ঘ ৪ বছর ধরে কাজ করে আসছে। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার, মদনপুর ইউনিয়নের , নরেন্দ্র নগর গ্রামে। তিনি তার পিতার চার কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। নিহত আশা মনি ৬ বছরের কন্যা সন্তান আঁখির জননী।
বিকালে ইপিজেড থানায় কথা হয় আশা মনির ছোট বোন শিপা’র সাথে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমার বোন আশাই ছিল আমাদের পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। দীর্ঘ বছর ধরে গার্মেন্টস এ চাকরি করে আমাদের পরিবারের হালও ধরেন আমার বোন। গ্রামে বাবার পছন্দ করা পাত্র আলেক শাহ্কে বিয়ে করে আমার বোন আশা। প্রথম দিকে দুলাভাই কিছু দিন দিনমজুরির কাজ করলেও পরে ধীরে ধীরে আমার আপুর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই শুরু হয়ে তাদের পরিবারে পারিবারিক কলহ্।
প্রতি মাসেই আমার বোনের বেতনের টাকা ভোগ করার জন্য নির্যাতন চালাত তার উপর। দিন দিন এর মাত্রা বাড়তে থাকলে আমরা দুলাভাইয়ের কাছ থেকে চলে আসার পরামর্শ দিলে আমার বোন জানায়, এটা কখনো সম্ভব না কারন আমার ৬ বছরের সন্তান আখিঁর ভবিষৎ জড়িয়ে আছে এখানে। আমার বোন জানায়, আঁখির ভবিষৎ এর জন্য সে সব কষ্ট সহ্য করতে পারবে।
আমার বোনকে যে মৃত্যুর মত কঠিন কষ্ট সহ্য করতে হবে সেটা জানতাম না বলে অকাতরে কাঁদতে থাকেন ছোট বোন শিপা।

এদিকে আদালতে নেয়ার আগে থানায় বসে ঘাতক আলেক শাহ্ তার স্ত্রী আশা দীর্ঘদিন ধরে পরকিয়া জড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ্য করে জানায়, আমি আশাকে অনেকবার বারণ করলেও সে আমার কথা অমান্য করে গোপনে ছেলেটির সাথে মেলোমেশা করে আসছিল।
কোন ছেলের সাথে মেলামেশা করে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি ছেলেটিকে চিনি না শুনেছি তার গামেন্টসে কাজ করে। বার বার বারণ করার পর না শুনলে তাকে মারধর শুরু করি এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে তার গলা পেচিয়ে ধরলে সে মারা যায়।
এদিকে ইপিজেড থানার ওসি আবুল কালাম জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে ঘটে এই নির্মাম হত্যাকান্ড। সকাল ৮ টা নাগাদ আমরা ঘটনাটি জানলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই। এরপর ঘাতক আলেক শাহকে র্যাব হেফাজত থেকে থানায় আনা হয়। এবং আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালতে সে ১৬৪ ধারা হত্যার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জানাগেছে, ঘাতক আলেক শাহ্ নেত্রকোনা জেলার, কেন্দুয়া থানার শিতুলিয়া গ্রামের শান্ত মিয়ার পুত্র।
এ ব্যাপারে নিহতের বাবা লুৎফর রহমান বাদী হয়ে আসামী আলেক শাহ্র বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।