
চট্টগ্রাম বন্দর জেটির কাস্টমস-এর ডিউটি ফ্রি শপ থেকে অবাধে পাচার হচ্ছে বিদেশী মদ ও বিয়ার। এসব বিদেশী মদ পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে বন্দর কর্মকর্তাদের গাড়ীতে করে।
গত সোমবার রাতে বন্দরের ৪ নম্বর ফটকে মদ ও বিয়ারসহ বন্দরের প্রধান প্রকৌশলীর গাড়ী আটেকর পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এসময় গুলো পাচারের কথা স্বীকার করেন উক্ত গাড়ীর চালক খালাসি আলতাফ। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট খালাসিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মদসহ আটক গাড়ীটি প্রধান প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) নজমুল হকের নামে বন্দরের বরাদ্দকৃত একাধিক গাড়ির একটি। তিনি বর্তমানে নেদারল্যান্ড সফরে রয়েছেন বলে জানাগেছে।
সুত্র জানায়, ঐ গাড়িটিকে নিয়ে আগ থেকেই সন্দেহ ছিল নিরাপত্তা কর্মীদের। প্রায় সময়ে রাতে বন্দর জেটিতে প্রবেশ করতো গাড়িটি। গত দু’বছরে বহুবার পিকআপটি রাতে জেটিতে যাতায়াত করেছে। ড্রাইভার ইনচার্জের রেজিস্টার যাচাই করলে এর সত্যতা মিলবে, যদি তিনি যথাযথভাবে তথ্য লিপিবদ্ধ করে থাকেন।
বন্দর জেটিতে অবস্থিত ডিউটি ফ্রি শপের পণ্য কেবলমাত্র জাহাজের নাবিকদের কাছে ডলারে বিক্রিযোগ্য। এ ক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রদর্শন করে সেটা শপের রেজিস্টারে এন্ট্রি করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে ডিউটি ফ্রি শপের পণ্য চোরাইপথে পাচার করে দেয়ার।
এতে জড়িত বন্দর এবং কাস্টমস-এর একটি সংঘবদ্ধ চক্র। নাবিকদের কাছে বিক্রিত পণ্য এন্ট্রি করার সময় পরিমাণ অধিক দেখিয়ে অথবা ভুয়া এন্ট্রি করে সুযোগ মত পাচার করে দেয়া হয় বাইরে। তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করেন, এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত হলে ‘কেঁচো খুড়তে সাপ’ বের হয়ে আসতে পারে। এরজন্য প্রয়োজন পুলিশি তদন্ত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী দেশের বাইরে থাকলেও বরাদ্দকৃত গাড়িগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তার পরিবারে। একটি গাড়ি সোমবার দিনে চলাচল করেছে। দিনশেষে চালক সেটা বন্দর ভবনের ভিতরে কার পার্কিং-এ রেখে ড্রাইভার ইনচার্জকে চাবি হস্তান্তর করে ফিরে গেছেন। মেকানিক্যাল শাখার খালাসি আলতাফ হোসেন ড্রাইভিং জানেন।
তিনি বিকল্প চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঐ কর্মকর্তার। তার কাজের সময় রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা। এ সময়ে তিনি বন্দর ভবনে ড্রাইভার ইনচার্জের ওখানে থাকেন। কিছুদিন আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রাইভার পদে লোক নিয়োগ দিয়েছেন। এদের অনেকে এখন পর্যন্ত গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত দিতে না পারলেও মেকানিকাল শাখায় ঐ খালাসিকে দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আলতাফ ২৪ অক্টোবর সোমবার রাতে প্রধান প্রকৌশলীর মেয়ের জন্য গাড়ি দরকার বলে জানান ড্রাইভার ইনচার্জকে। এরপর চাবি নিয়ে ৪৭৮ নম্বর গাড়িতে বের হয়ে যান আলতাফ হোসেন। ঢুকে পড়েন বন্দর জেটির ভিতরে অবাধে। বুকিং স্লিপ বা অনুরূপ কিছু না থাকলেও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে ভিতর থেকে ৪ নম্বর ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের সন্দেহ হলে তারা গাড়ীতে তল্লাশির উদ্যোগ নেন। কিন্তু খালাসি আলতাফ বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বের হতে দেয়া হয়নি। তল্লাশিতে পাওয়া গেছে মদ-বিয়ারভর্তি অনেক কার্টন। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে পৌঁছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাস্টমস-এর ডিউটি ফ্রি শপ থেকে এগুলো পাচারের কথা স্বীকার করেন খালাসি আলতাফ।
বিষয়টি কাস্টম হাউসকেও জানানো হয়েছে। ঐ রাতেই মেকানিক্যাল শাখার একজন প্রকৌশলী গিয়ে তার জিম্মায় ছাড়িয়ে আনেন খালাসি আলতাফকে। এর পরের দিন বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। আটক মালসহ পিকআপটি নিরাপত্তা বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। কাস্টমস প্রতিনিধির উপস্থিতিতে হিসাব করার জন্য নিরাপত্তা বিভাগ অপেক্ষায় ছিল গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত।
বন্দরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বন্দর এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তের পর অভিযুক্ত বা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পুলিশি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা)’র সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। দু দিন প্রচেষ্টার পর গতকাল রবিবার দু দফায় ফোন করলে তাঁর পি এ সরোয়ার উদ্দিন বলেন, স্যার মিটিংয়ে ব্যস্ত এখন কথা বলা যাবেনা।
এ ব্যাপারে বন্দরের সদস্য (এডমিন) মো. জাফর আলম জানান, তিনি রাজধানীতে রয়েছেন। নিরাপত্তা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কোন কথা বলতে পারেন নি নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে।