
কামরুল ইসলাম দুলু, চট্টগ্রাম:
কোরবানী ঈদের বাকী আর মাত্র কয়েক একদিন। তাই নিজেদের পছন্দের পশু কেনার জন্য সবাই ভীড় করছে বাজারে। শেষ মুহুর্তে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন কোরবানীর হাট বাজার বেশ জমে উঠেছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ১৪টি পশুর হাটে বসেছে। উপজেলায় স্থায়ী ৪ বাজারের সাথে নানা স্থানে ছোট-বড় আরো ১০ হাট গড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। ঈদুর আজহা উপলক্ষে সীতাকুণ্ড উপজেলায় স্থায়ী অস্থায়ী মিলে ১৪ টি কোরবানীর পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে । তার মধ্যে ৪ টি স্থায়ী এবং ১০ টি অস্থায়ী।
অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে, ১ নং সৈয়দপুর ইউনিয়নে শেখের হাট, তোহর আলী ভূঁইয়ার হাট, মিয়াজন ভূঁইয়ার হাট, ২নং বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নে ছোট দারোগারহাট, বাড়বকুণ্ড স্কুল মাঠ, বাশঁবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ, সোনাইছড়ির শীতলপুরস্থ মদনহাট, ভাটিয়ারী উত্তর বাজার, মাদামবিবির হাট স্কুল মাঠ, ফৌজদারহাট সলিমপুর সিডিএ এলাকা।

স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে বড় দারোগারহাট, সীতাকুণ্ড পৌরসভাস্থ ঢেবার পাড়, পৌরসভাস্থ ফকিরহাট এবং কুমিরা হাট। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রামণের কারণে আসন্ন ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট চালাতে নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে পশুর হাটে প্রবেশের পথ এবং বাহির দুইটি আলাদা রাস্তা রাখতে হবে, প্রবেশমুখে পানির ট্যাংক, বেসিন, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফেস মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। হাটে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ ব্যক্তিকে না আসার জন্য নিউৎসাহিত করা, এক পরিবার থেকে দুইজনের বেশী পশু ক্রয় করতে যেতে পারবে না, অনলাইনে পশু কেনার জন্য উৎসাহিত করাসহ সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এমন ১১ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখ গেছে প্রশাসনের দেওয়া ১১ টি নির্দেশনার কোনটাই মানা হচ্ছে না। সামাজিক দুরত্বের বলাই নেই। মাস্ক ব্যবহার নেই, হাটে প্রবেশ আর বাহির আলাদা গেইট থাকার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি, প্রবেশমুখে পানির ট্যাংক, বেসিন, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হলেও কোন হাটে তা চোখে পড়েনি।
সীতাকুণ্ডে কোরবানীর গরু ক্রয়-বিক্রয়ে মোহন্তের হাট, বাড়বকুন্ড স্কুল মাঠ হাট, শেখের হাট, ভূঁইয়ার হাট, ফকির হাট, বড়দারগার হাট, ছোটদারগার হাট, মদন হাট, মাদামবিবিরহাট, ভাটিয়ারী স্কুল হাট, ফৌজদারহাটসহ অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে বাজার। গরু কিনতে গিয়ে অনেকে বলছেন গরুর দাম বেশি আবার বিক্রেতারা বলছেন দাম তেমন বেশি না।
কুমিরা গরুর বাজার ইজারাদার মোহাম্মদ তসলিম জানান, আমরা সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে পশুরহাট ইজারা নিয়েছি তার তিন ভাগের দুই ভাগ লোকসান হবে। করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে গরু বিক্রেতারা গরু আনছে না। অপরদিকে করোনার কারণে ক্রেতারাও ভয়ের মধ্যে আছে।

সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে দেশীয় গরুর বেচাকেনা চলছে। বিক্রেতারা জানালেন এবার বাহির থেকে কোন গরু সীতাকুণ্ডের বাজারে আসেনি। স্থানীয় বেপারীদের বছরজুড়ে লালন-পালন করে বড় করা গরু গুলোই ঈদে চাহিদা পুরণ করতে সক্রম। চাঁদ দেখা যাওয়ার পূর্ব থেকে হাটগুলোকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা শুরু করে গরু মজুদ। কিন্তু হাটগুলোতে দিনে দিনে পশু মজুদ বৃদ্ধি পেলেও বিক্রি নিয়ে শংকায় ছিল বিক্রেতারা। কিন্তু কোরবানীর দিন ঘনিয়ে আসার পর থেকে সেই শংন্কা অনেকটা কেটে গেছে। মাদামবিবিরহাট গরুর বাজার ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রচুর দেশীয় গরু রয়েছে। যা চাহিদা পুরণ করতে পারবে। যেহেতু আরো কয়েকদিন বাকি আছে সেহেতু প্রচুর গরুও আছে বাজারে। তাই দাম তেমন বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে ক্রেতারা জানান, হাটে কোরবানির পশু পর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে না। তবে দাম নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত।
এদিকে ক্রেতারাও চাইছেন, শেষ সময়ে এসে সাধ্যের মধ্যে ভালো পশুটা কিনতে। হাট ঘুরে দেখা গেছে, দাম কম-বেশি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে অভিযোগ-অনুযোগ থাকলেও দাম একেবারে খুব বেশি এমনটা এখনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ক্রেতার উপস্থিতি কম, তবে যারাই আসছেন তার মধ্যে অনেকেই গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ছোট গরুর দাম কিছুটা বেশি বলে জানান অনেকেই।
সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ জালাল মো. ইউনুচ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কুরবানির বাজার কিছুটা মন্দা চলছে। আমরা হাট ইজারাদারদের নির্দেশ দিয়েছি প্রতিটি হাটের মুখে স্প্রে মেশিন বসানোর জন্য। যারা হাটে প্রবেশ করবেন তারা অবশ্যই মুখে মাস্ক পড়ে ঢুকতে হবে। এছাড়াও আমাদের তিনটি মেডিকেল টিম সবসময় পশুর হাটগুলোতে তদারকি করছে।