ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

নারীর ১২ লাখ টাকা নিয়ে ওমান পালিয়েছে মীরসরাইয়ের ইউনুস

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

প্রতারক ইউনুস ও রোকসানা ।

ফেসবুকে এক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নগদ ১২লাখ টাকাসহ ও সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার অভিযোগ উঠেছে ওমান প্রবাসী মীরসরাইয়ের যুবক মো. ইউনুস মিয়ার বিরুদ্ধে।

ঘটনার নায়ক ওমান প্রবাসী মো. ইউনুস মিয়া (৩৬) এর বাড়ী চট্টগ্রাম মীরসরাই উপজেলার উত্তর কচুয়া গ্রামে।

ঘটনায় অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে বিদেশে থাকাকালে ইউনুসের সাথে ফেসবুকে পরিচয় ঘটে সুন্দরী নারী রোকসানার (২৮)। রোকসানা বসবাস করতো ঢাকার কোতোয়ালী থানা এলাকায়।

 ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ওমান থেকে দেশে আসে ইউনুস। তার ঠিক একমাস পরেই রোকসানার সাথে নোটারী হলফনামায় বিয়ের করে। পরে দুজনে একত্রে কিছুদিন বসবাসও করে মীরসরাই। ঘুরাঘুরি করেন ঢাকা ও নরসিংদীর বিভিন্ন বিনোদন স্পট।

প্রতারক ইউনুস।

ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, রোকসানার সাথে পরিচয় হবার আগে ইউনুস ঢাকা গাজীপুরের এক গার্মেন্টসে চাকরি করত। পরে বিদেশে চলে যান। বিদেশে গিয়ে ফেসবুকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে এক সন্তানের জননী এই রোকসানাকে। সে ডিভোর্সী ছিল। প্রবাসী ইউনুস তাঁকে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন ও নানা কায়দায় বিশ্বাস জমিয়ে নিজের আয়ত্বে নেয়।

রোকসানার দাবি, বিভিন্ন কৌশলে তাঁর কাছ থেকে আনুমানিক ১২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে ইউনুস তাকে না জানিয়ে ওমান চলে যান। বিদেশে গিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় সব যোগাযোগ সাইট থেকে তাকে ব্লক করে দেয়!

পরে নিরুপায় হয়ে রোকসানা হাজির হয় ইউনুসের গ্রামের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের উত্তর কচুয়া (৪নং ওয়ার্ড) গ্রামে। বিয়ের নামে প্রতারণার মহা ফিরিস্তি গ্রামের মানুষকে জানিয়ে ন্যায় বিচার দাবি করে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে। ফেরত চায় তার দেওয়া নিজের স্বর্ণ ও বাবার দোকান বিক্রির টাকা।

.

এদিকে, ইউনুস বিয়ে অস্বীকার করে। রোকসানার দাবি করে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। ঢাকায় নোটারী পাবলিক কার্যালায়ে। দুজনের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে রোকসানা জানান, বিয়ের কাগজপত্র ইউনুসের কাছে রয়েছে। সে বিদেশ নিয়ে গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব জানা যাবে।

রোকসানা ইউনুসের গ্রামের বাড়ি মীরসরাই গেলে ইউনুসের পরিবার তাকে নাজেহাল করে এবং জীবন নাশের হুমকি দেয় ইউনুসের পরিবার। যদিও রোকসানা এর আগে বহুবার ইউনুসের বাড়িতে এসেছিলো বলে আশেপাশের লোকজন তথ্য দিয়েছেন।

গত ৬ আগষ্ট এনিয়ে ইউনুসের পরিবারের বিরুদ্ধে মীরসরাই থানায় রোকসানা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রোকসানা। যার জিডি নং-৪১৭। জিডিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তারা হলেন–রবিউল ইসলাম রবি (৩৬), আব্দুল করিম (৪১), আবুল কালাম (৬৫), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), রুমা আক্তার রুমু (৩৫), মনি আক্তার (৩৫)।

.

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা পরে ঘটনার সত্যতা জানিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে উল্লেখ করেন, ভালো সম্পর্ক তৈরি করার সুবাদে রোকসানার কাছ থেকে অভিযুক্তরা বাড়ি নির্মাণের কথা বলে বিভিন্ন ধাপে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন। পরিবর্তীতে তা ফেরত চাইলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

অন্যদিকে, সরল বিশ্বাসে প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রবাসী ইউনুসের কাছে সব কিছু সপে দিয়েও রোকসানা এখন সর্বশান্ত। বর্তমানে রোকসানা ঢাকায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জানা যায়, ইউনুস ওমানের সাইহুদ হাইপার মার্কেটে সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

ইতোমধ্যে গত মাসে রোকসানা বাদি হয়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৮৩৬/২০ইং। মামলায় আসামি করা হয়-মীরসরাই উপজেলার উত্তর কচুয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ওমান প্রবাসী মো. ইউনুস মিয়া (৩৬) ও তার আপন বড়ভাই আব্দুল করিম (৪১) ও বোন জামাই মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)কে।

.

মামলা এজাহার রয়েছে, ওমান প্রবাসী মো. ইউনুস ভালেবাসার গভীর সম্পর্ক গড়ে প্রবাসে দোকান করার কথা জানিয়ে টাকা ধার চায়। রোকসানাও সরল বিশ্বাসে ইউনুসের কথা মতো কথিত স্বামীর ভগ্নিপতি মো. জসিমের ব্যাংক হিসাব নং-৩৪৮৪ ইসলামি ব্যাংক শাখা মীরসরাই, ঢাকাস্থ ফরেন এক্সচেঞ্জ কর্পোরেট ব্রাঞ্চ মতিঝিল শাখা ও ০১৮১৭-৬৩১৭৬৫, ০১৯৯২-৪৮০৬৯৫, ০১৮৩৮-৪৪২৫৪১, ০১৭২২-৬৫১০৫৪, ০১৭১৫-৯৬২৩৮৫, ০১৬১৪-২৮০৬৭৪, ০১৩১২-২৮০৬৭৪ এসব বিকাশ নাম্বারে ৩লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জমা দেন।

এছাড়াও ইউনুসের সোনালী ব্যাংক হিসাব নং-৬৩৪৩ মীরসরাই শাখা, সদরঘাট শাখায়, ব্রাক ব্যাংক ঢাকা বনানী শাখা, সিটি ব্যাংক চৌদ্দ গ্রাম শাখাসহ বিভিন্ন একাউন্টে মোট ১২ লক্ষ টাকা প্রদান করে। ২০১৭ সালে ইউনুস দেশে আসে। একই বছরের ২৯শে অক্টোবর ঢাকায় নোটারী পাবলিক হলফনামা মূলে ১০ লক্ষ টাকা কাবিন ধার্য্য করে বিবাহ করেন। এর কিছুদিন পর পূনরায় বিদেশ চলে যান ইউনুস। এরপর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই রোকসানার সাথে। তখনই রোকসানা বুঝতে পারে তিনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। এরমধ্যে রোকসানা কয়েকবার মীরসরাই আসলেও ইউনুস পরিবার হুমকি ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

.

ভুক্তভোগী রোকসানা আক্তার বলেন, ‘ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে আমি হয়তো বোকা বনে গিয়েছিলাম। নয়তো আমার টাকায় তাকে ঢাকা আসগর আলী হসপিটালে চিকিৎসা করিয়েছি। তার পরিবারকে বাড়ি নির্মাণে টাকা ধার দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, মানুষকে বিশ্বাস করা পাপ। যদি জানতাম সে আমার সাথে প্রতারণা করে আমার টাকা পয়সা হাতিয়ে নিবে। তাহলে কোনোদিন এ পথে পা বাড়াতাম না। তিনি আরো বলেন, ইউনুস এখন কেরানিগঞ্জের আরেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়েছে। বিদেশ থেকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলতে হুমকি দিচ্ছে। এখন আমি ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে মামলা করেছি।’

মীরসরাই উপজেলা কচুয়া গ্রামের নুরুল গণি ও একাধিক স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারক ইউনুস এবং ওর পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে মহিলাকে ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতাদের কাছে বহু সালিশ হয়েছে। সমাধান হয়েছে কিনা জানি না আমরা। তবে মীরসরাইতে ঐ পরিবার নিয়ে অনেক মুখরোচক নারী কেলেংকারীর ঘটনাও অতীতে ঘটেছে।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনুসের বড়ভাই মো. আব্দুল করিম (৪১) বলেন, ‘আমার ভাই ইউনুসের সাথে ওর কি হয়েছে আমরা জানি না। মহিলাটা আমাদের বাসায় কয়েকবার বেড়াতে এসেছিলো। আমার ভাই যদি ওকে বিয়ে করে থাকে তাহলে ওর নামে কাবিনের মামলা করবে! কিন্তু মহিলাটা আমাদের বাড়ির অনেকের নামে দুটি মামলা দিয়েছে। বিয়ে করলে ইউনুসকে করেছে কিন্তু আমাদের কেন মামলা দিলো?

প্রতিবেদক ইউনুসের ফেসবুক, হোয়াটস আপ ও মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

.

এদিকে ইউনুসের বোন জামাই জসিমের নাম্বারে কল করা হলে তার স্ত্রী রুমা আক্তার রুমু (৩৫) বলেন, ‘আমার ভাই ও আমার স্বামী যদি টাকা নিয়ে থাকে অবশ্যই দিতে হবে। কারো টাকা কেউ মেরে খেতে পারে না। আমার ভাই বিদেশ থেকে আসলে এ বিষয়ে বৈঠক হবে।’

এলাকার ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিলু ও মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা অবগত। এ বিষয়ে সালিশী বৈঠকও হয়েছিল। বৈঠকে ইউনুসের বাবা আবুল কালাম, ভাই করিম ও তার দুবোন এসেছিলো। মহিলার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছিল তখন। কিন্তু ইউনুস বিদেশে থাকায় তাঁরা সমস্যা সমাধানে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না বলে আমাদের জানায়। এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেনি।’

মামলার আইনজীবি সিরাজুল ইসলাম জানান, রোকসানার দায়ের করা মামলাটি আদালত তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দিয়েছেন। আশাকরি তদন্তে বিষয়টির সত্যতা উঠে আসবে।’

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print