
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ড্রেজার ও বাসা জালে আটকা পড়ে এবার মারা গেল বিপন্ন প্রজাতির আরেকটি ডলফিন।
আজ মঙ্গলবার রাত ৮টার সময় রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে কাগতিয়া আজিমের ঘাট এলাকাস্থ হালদা নদীর পাশ থেকে এ মৃত ডলফিনটি উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
পশ্চিম গুজরা ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, মৃত ডলফিনটি নদীতে ভাসতে দেখে এলাকাবাসী আমাকে খবর দেয়। পরে আমি উপজেলা প্রশাসনকে ঘটনাটি জানায়। এতে ভারপ্রাপ্ত রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, নগরীর ষোলশহরস্থ চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুসসহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিত হয়। পরে রাত ৯টার সময় নদী থেকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ডলফিনটিকে নদী থেকে উদ্ধার করে তীরে আনা হয়।
তিনি জানান, ডলফিনটির দেহে আঘাতের চিহ্ন ও লেজে বাসা জাল পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা হচ্ছে নদীতে বাসা জালে আটকার পর হয়তো নদীতে চলাচল করা বালুবাহী নৌযান বা ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের (পানির নিচে থাকা ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত পাখা) আঘাতে ২/৩ দিন আগে ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে।
ডলফিনটি লম্বায় সাড়ে চার ফুট। ওজন ৪০ কেজি। লম্বা ৪৮ ইঞ্চি। এটিকে অর্ধ গলিত উদ্ধার করার পর রাত সাড়ে ৯টার সময় গর্ত করে পুতে ফেলা হয়।
হালদায় যে ডলফিন দেখা যায়, তা স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত। মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এই প্রাণী গেঞ্জেস বা গাঙ্গেয় ডলফিন। সাধারণত দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে এটি বিচরণ করে। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ছত্তার খালের মুখ থেকে হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ডলফিনের মূল বিচরণক্ষেত্র। মঙ্গলবার যে জায়গায় ডলফিনটি ভেসে ওঠে তা মদুনাঘাট থেকে ২-৩ কিলোমিটার দুরে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ডলফিনের এই প্রজাতিটিকে অতি বিপন্ন (লাল তালিকাভুক্ত) হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
হালদা দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। সরকার ২০১০ সালে চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করে।
উল্লেখ্য, গত আড়াই বছরে এই নদীতে ২৭টি ডলফিন মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত ডলফিনের বেশির ভাগের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত অতি বিপন্ন প্রজাতির মিঠাপানির ডলফিন। সংস্থাটির মতে বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে এ জাতীয় ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি।
পরিবেশবিদদের জরিফে দেখা যায়, হালদায় লাল ডলফিন ছিল ১৭০টি। পরিবেশবাদি ও হালদা তীরবর্তী মানুষের অভিযোগ, যান্ত্রিক নৌযান ও বালুবাহী ড্রেজারের ডুবন্ত যান্ত্রিক পাখার আঘাতে ডলফিনগুলো মারা যাচ্ছে।