দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিস্কৃত থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সনের বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও চট্টগ্রামে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠনা করা হচ্ছে এমন গুন্জনে নড়েচড়ে বসেছে তৃণমূলে দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীরা। ক্ষোভ বিরাজ করছে হামলা-হামলা ও জেল জুলুমের শিকার নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায়, গোলাম আকবর খোন্দকারকে আহ্বায়ক করে সদস্য সচিব ছাড়াই ৫১ সদস্যের উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয় গত সপ্তাহে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্মতির জন্যই অপেক্ষা চলছে। এমন খবর তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়লে উত্তর জেলা রাজনীতিতে বিবাদমান গিয়াস কাদের গ্রুপ ও আসলাম গ্রুপের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কোন পক্ষই কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ।
উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের বিবাদ ভূলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও যুগ্ম-মহাসচিব কারাবন্দি লায়ন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নির্দেশে অভ্যন্তরীন বিবাদ ভূলে তাদের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হলেও গোলাম আকবর খন্দকারকে আহবায়ক করা হচ্ছে এমন সংবাদে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
তবে শেষ মুহুর্তে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গোলাম আকবর খোন্দকারকে আহবায়ক এবং দীর্ঘদিন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা গিয়াস কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনকে সদস্য সচিব করে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে বলে হাইকমান্ড সুত্রে জানাগেছে।
বিগত আন্দোলন সংগ্রামে গোলাম আকবর খন্দকারের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, বিগত আন্দোলনের সম্মুখে যোদ্ধাদের দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হোক। গোলাম আকবর খন্দকার যেহেতু চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সে কারনেই তিনি একসাথে দুই পদে তাকাও দলীয় গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।
একাধকি তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবী বিগত আন্দোলনে সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন চাকসুর সাবেক ভিপি ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, এম এ হালিম,সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমিন,যুগ্ম সম্পাদক ইন্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন,কাজী সালাহউদ্দিনসহ স্থানীয় অনেক নেতা। অনেকের দাবী আসলাম চৌধুরী যেহেতু কারাগারে রয়েছে তাই তিনি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আহবায়ক কমিটি গঠন করা হোক।
একাধিক তৃণমূল নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, চাকসুর সাবেক ভিপি ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, এম এ হালিম,সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমিন এদের মধ্যে যে কোন একজনকে আহবায়ক ও যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাহউদ্দিন এদের দুইজনের যে কোন একজনকে সদস্য সচিব করে আহবায়ক কমিটি গঠন করলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।
এদিকে কমিটি গঠনের গুঞ্জনে করণীয় ঠিক করতে গত ৩ ডিসেম্বর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে রুদ্ধদার বৈঠকে করেছে গিয়াস কাদের ও আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। এর একদিন পর শনিবার উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. নজিম উদ্দীনের বাসায় উভয় পক্ষ ফের বৈঠক করেন। বৈঠকের বিষয়গুলো তাৎক্ষণিক বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানালে উভয় পক্ষের নেতাদের ঢাকায় তলব করেন।
এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, হাইকমান্ডের নির্দেশনায় গিয়াস কাদের ও আসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আসলাম চৌধুরীর সকল মামলায় জামিন হয়েছে তিনি যে কোনো মুহূর্তে কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। আসলাম চৌধুরী মুক্তি পাওয়ার পর ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি গঠন হলে দলের জন্য ভাল হবে।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য উত্তর জেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জেলার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের দাবী আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধাদের দিয়ে ৭১ সদস্য বিশষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হোক। একজন আহবায়ক, এক সদস্য সচিব ও সাতটি সংসদীয় আসন থেকে সাতজন যুগ্ম আহবায়ক দিয়ে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করলে দল অনেক শক্তিশালী হবে।
এবিষয়ে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. নজিম উদ্দীন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, কেউ দলীয় হাই কমান্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে আহবায়ক কমিটি করার চেষ্টা করছে। আমাদের দাবী আসলাম চৌধুরী জেল থেকে বের হওয়ার পরই কমিটি গঠন করা হোক। তিনি দলের রাজনীতি করতে গিয়েই কারাগারে গেছেন। তাকে ছাড়া কোন কমিটি গঠন করা হলে তা মেনে নেওয়া হবেনা। আমরা ম্যাডামের সাথে দেখা করেও বলেছি আসলাম চৌধুরীর বের হওয়ার পরই কমিটি দেওয়ার জন্য। তার মুক্তির পর যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিব। আসলাম চৌধুরী আগামী সাপ্তাহে জেল থেকে মুক্তি পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, উত্তর জেলা বিএনপির একটি আহবায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি মাহবুবের রহমান শামীম দেখছেন।
এব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
