
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
পবিত্র কোরআন শরীফ মুসলমানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মহাগ্রন্থ আল কোরআন যারা মুখস্থ করেন তাদের ‘হাফেজ’ বলা হয়। আল্লাহর কাছে পবিত্র কোরআনের হাফেজদের মর্যাদা অনেক উপরে। তাই যুবক কিংবা নর-নারী মুসলমান ভাই-বোনেরা আল কোরআন মুখস্থ করেন।
এবার মাত্র ৫ মানে পবিত্র কোরআনুল কারীম মুখস্থ করে অসাধারণ এক চমক সৃষ্টি করেছেন বাঁশখালীর ১১ বছর বয়সী নাদিয়া সুলতানা আজিজা নামের এক স্কুল ছাত্রী। সে বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব ইলশা গ্রামের মাওলানা নুরুন্নবী আজিজী ও শাহীন সুলতানা দম্পতির কন্যা। করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে নাদিয়া ভর্তি হন বাঁশখালী পৌরসভার দারুল কারীম মাদরাসায়। সেখানে হিফজখানার মহিলা বিভাগে কোরআন অধ্যায়ন শুরু করেন নাদিয়া।
নাদিয়া রায়ছটা প্রেমাশিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মাওলানা নুরুন্নবী আজিজীও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক। ৩ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে নাদিয়া দ্বিতীয়।
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গেলেও নাদিয়ার বাবা সে সময়টিকে কাজে লাগান দারুণভাবে। সে সুযোগে তার কন্যা নাদিয়া সুলতানা আজিজাকে স্কুল বন্ধের সময়ে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বাঁশখালী পৌরসভাস্থ দারুল কারীম মহিলা মাদরাসার হিফজখানায় ভর্তি করে দেন। খুব অল্প সময়ে নাজেরা শেষ করে চলতি বছরের ৩০ মে তার হিফজের সবক শুরু হয়। মাত্র ৫ মাস অর্থাৎ ১৫০ দিনে হিফজ শেষ করে মেধার স্বাক্ষর রাখলেন নাদিয়া।
নাদিয়ার বাবা স্কুল শিক্ষক মাওলানা নুরুন্নবী আজিজী বলেন, ‘আল্লাহ পাকের কাছে লাখো কোটি শোকর গোঁজার করছি। আমার মেয়ে এই অল্প সময়ে হাফেজা হওয়ায় আমি খুব খুশি। তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
নাদিয়ার সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে দারুল কারীম মাদরাসা ও মহিলা হিফজখানার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, ‘নাদিয়া গত সোমবার (১ নভেম্বর) হিফজের সবক সম্পন্ন করেছে। ৫ মাস পুর্বে বিগত ৩০ মে তার হিফজের সবক শুরু হয়েছিল। সে অত্যন্ত মেধাবী, অত্যন্ত নম্র ভদ্র। মাত্র পাঁচ মাসে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কোরআনের হাফেজা হওয়ার বিষয়টি অনেকের হৃদয়ে নাড়া দেবে। অনেকে আদুরে সন্তানদের কোরআনের হাফেজ করার সৌভাগ্য অর্জন করার স্পৃহা খুঁজে পাবে নাদিয়াকে দিয়ে। সে এবার ‘দাওর’ পড়া শুরু করবেন। ‘দাওর’ পড়তে সাধারণত ১ বছর সময় লাগে। কিন্তু মেধাবী নাদিয়ার ৬ মাস লাগবে।’
প্রসঙ্গত, বাঁশখালী পৌরসভায় অবস্থিত দারুল কারীম মাদরাসার মহিলা হিফজখানায় বর্তমানে ৩ জন হাফেজা শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে ৬৫ জন ছাত্রী অধ্যায়নরত আছেন। তাছাড়া দারুল কারীমের মুল পুরুষ শাখায়ও বর্তমানে হাফেজ শিক্ষকের সংখ্যা ৫ জন। মোট ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে এখানে ২ শতাধিক ছাত্রছাত্রী অধ্যায়নরত আছেন। দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলারদের উপস্থিতিতে প্রতিবছর হেফজ সম্পন্নকারী ছাত্র-ছাত্রীকে হিফজ সমাপনী পাগড়ি ও সম্মাননা প্রদান করে দারুল কারিম মাদরাসা।