
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে চলমান পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে আজ রবিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস চলাচল করলেও দুর পাল্লার সকল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে দ্বিগুণ ভাড়াতে মহানগরীতে বাস চলাচল করছে। আগে উঠানামা ৫টা নির্ধারিত হলেও আজ থেকে সে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০টাকা করে।
ঘোষণা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট সাতটি সংগঠনের মধ্যে পাঁচটি সংগঠনের বাস চলাচল করছে। চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ ১৩টি রুটে বাসসহ গণপরিবহন চলছে।
যেসব যানবাহন চলছে তারা প্রায় সবাই বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীরা জানান, সর্বনিম্ন পাঁচ টাকার ভাড়া ১০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে পরিবহনগুলো। এনিয়ে সকালে বেশ কয়েক জায়গায় যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।

তবে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের বাস মালিকরাও ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। রবিবার বেলা ১১টায় মন্ত্রণালয়ে ভাড়া নিয়ে যে বৈঠক হবে সে সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। ভাড়া না বাড়ালে আবারও ধর্মঘট শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতারা।
চলমান পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতি নামে পরিবহন মালিকদের সংগঠনের নেতারা গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বাস চালানোর কথা জানায়।
সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, সকাল থেকে আমাদের সমিতির অধীন যে বাসগুলো আছে তা মহানগরীতে চলাচল করছে। যাত্রীদের যাতে কোন ধরণের ভোগান্তি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা সিটি এলাকায় বাস চালু করেছি। তিনি বলেন, ‘আগে ওঠানামা ৫ টাকা নিলেও এখন ওঠানামা ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য ভাড়া কিলোমিটারে ঠিকই আছে। আগে যানবাহন চলাচল করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। তারপর সরকার যেভাবে ভাড়া নির্ধারণ করবে সেভাবেই ভাড়া নেবো। দু’দিনের মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
এদিকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। এজন্য তাদের দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। একজনের সিটে দুইজন বসিয়েও নিচ্ছে অনেক যাত্রীবাহী গাড়ি।
গত ৩ নভেম্বর তেল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে পরিবহন মালিকেরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এতে বিপাকে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, তিনদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনও সংগঠন যদি পরিবহন চালাতে চায় তবে চালাতে পারে। এতে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে আমরা এটা বলতে পারি,, আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম মহানগর, জেলা ও দূরপাল্লার কোন পরিবহন বা বাস-মিনিবাস চলাচল করছে না।
চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার সব বাস ছাড়ে নগরীর অলংকার ও এ কে খান মোড় থেকে। শুক্রবার সকাল থেকে বাসের সব কাউন্টার বন্ধ। কাউন্টারের সামনে ও রাস্তায় যাত্রীদের ভিড়। যদিও রাতে দু-একটি গাড়ি চালালেও ভাড়া ছিল দ্বিগুণ।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চালকেরা লোকসানের ঝুঁকির কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন। আমরা ধর্মঘটের ডাক দিইনি। বাস ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাদের আগে থেকে তেল মজুত আছে, তারাই রাস্তায় বাস নামিয়েছে।
এদিকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় আজ রবিবারও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোন পণ্য বাইরে যায়নি। ৩দিন ধরে বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ না হওয়ায় সংকটে পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।