
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশকে পুনর্নির্মাণের রূপকল্প প্রদানে দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই উদযাপন নিছক উৎসব নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ যাত্রায় আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় যে, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
জাতিকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার জন্য জাতিকে শপথ পাঠ করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শপথ বাক্যে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে দেশব্যাপী শপথ বাক্য পাঠ করান, যা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে একযোগে সবাই শপথ পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার ভাষণে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাংলাদেশের জনগণ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।
দেশকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার শপথ নিল জাতি
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাঙালিরা যা ছিল তাই নিয়ে শত্রুদের মোকাবিলা শুরু করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।