
চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে বাসায় গিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে উঠেছে।
রবিবার রাতে নগরীর খুলশী থানার ভূঁইয়া গলির বাসায় গিয়ে এই হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে নগরীর খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।
দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বর্তমানে পটুয়াখালীতে দায়িত্বরত আছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রামে দায়িত্বপালন করেন। গত ১৬ জুন তাঁকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।
খুলশী থানায় করা জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, ৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের ছুটি নিয়ে পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের খুলশী ভুঁইয়া গলির বাসায় আসেন শরীফ উদ্দিন। বাসায় অবস্থানের খবর পেয়ে রবিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী (৫৯) আরেক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে শরীফ উদ্দিনের বাসায় আসেন। এসময় শরীফ অন্য একজন গেস্টের সাথে ভবনের নীচতলায় কথাবার্তা বলছিলেন।
এসময় আইয়ুব খান চৌধুরী দাঁড়োয়ানের অনুমতি ছাড়াই ভবনে ঢুকে শরীফ উদ্দিনকে হুমকী দেন। বলেন, ‘শরীফ কেন তার বিরুদ্ধে নিউজ করাইছেন, শরীফের কারণে তার (আইয়ুব খান) জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, শরীফ কিভাবে দুদকে চাকুরি করে সেটা দেখে নেবে, আবার শরীফ চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালীন অনেকের জীবন নষ্ট করে দিছে, এবার দুদক দিয়েই শরীফের জীবন নষ্ট করে দিবে।’ এক পর্যায়ে তিনি (আইয়ুব খান) ফোন দিয়ে বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে আসে। এসময় শরীফ ও তার পরিবারকে জানে মেরে ফেলার হুমকী দেয় বলে সাধারণ ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করা হয়। থানায় করা ডায়েরির সাথে ভবনের সিসিটিভির ফুটেজও জমা দেন শরীফ।
সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই ব্যক্তি লুঙ্গি পরিহিত শরীফের দুই পাশে দাঁড়ানো। শরীফের বামে দাঁড়ানো মাথায় টুপি পড়া, মাফলার দিয়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি হাতে মোবাইল নিয়ে শরীফের দিকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে বাক্য বিনিময় করছেন। উত্তেজিত বাক্য বিনিময় করা ব্যক্তি কর্ণফুলী গ্যাসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরী বলে দাবি করেন দুদক কর্মকর্তা শরীফ। অন্য ব্যক্তি এলজিইডির লোক বলে পরিচয় দেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন খুলশী থানায় একটি জিডি করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ, দুদক কর্মকর্তা শরীফ চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ কর্মরত থাকাকালীন, কর্ণফুলী গ্যাসের বেশ কয়েকটি অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধান করে আইয়ুব খান চৌধুরী, তার দুই ছেলে মহিউদ্দিন, আশেক উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেন। তন্মধ্যে কর্ণফুলী গ্যাসের এক শত কোটি টাকার জমি ক্রয়ে দুর্নীতি, ৩৮ কর্মকর্তা নিয়োগে দুর্নীতি, ওই নিয়োগে নিয়ম না মেনে আইয়ুব খান চৌধুরী তার দুই ছেলেকে চাকুরি- পদোন্নতি দেন বলে অনুসন্ধানে জানতে পারে দুদক। এনিয়ে আলোচিত ওই দুদক কর্মকর্তা আইয়ুব খান চৌধুরীসহ কর্ণফুলী গ্যাসের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করলেও পরবর্তীতে দুদকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব ঘটনা সত্যি নয় মর্মে উল্টো প্রতিবেদন দিয়ে মামলা অনুমোদন না দিয়ে উল্টো অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির পদক্ষেপ নেন। এ নিয়ে সাম্প্রতিক গণমাধ্যমে সমালোচনা উঠলে ক্ষিপ্ত হন আইয়ুব খান চৌধুরী। আইয়ুব খান চৌধুরী বর্তমানে অবসরকালীন ছুটি ভোগ করছেন। তিনি সর্বশেষ পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম দুদক জেলা কার্যালয়ে যোগদানের পর ইসির সার্ভার ব্যবহার করে অবৈধভাবে ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার সনাক্ত, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়াতে জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশ, রেলওয়েতে ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের, কর্ণফুলী গ্যাসের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার, জমি ক্রয়ে ২৭ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য উৎঘাটন, কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ-পদোন্নতিতে দুর্নীতি, কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতা, প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, পুলিশের এসপি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপসহ কানুনগো, সার্ভেয়ারসহ ১৭জনকে গ্রেপ্তার করে আলোচনায় আসেন শরীফ উদ্দিন।