
চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে একই বাসে তরুণীকে চলন্ত অবস্থায় ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা।
পুলিশ গার্মেন্টস তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় বাসটির মূল চালক ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হল-মো. গিয়াস উদ্দিন নয়ন (২১) ও তার সহযোগী সীমান্ত দত্ত (২২)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাতে নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে বন্দর থানা পুলিশ।
বন্দর থানা পুলিশ জানিয়েছে, নগরীর বন্দর থানায় দায়ের হওয়া একটি ছিনতাই মামলায় চালককে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার আগে একই বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল।
বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক কিশোর মজুমদার বলেন, পলাশ কান্তি দে নামে এক ব্যক্তি গতকাল বৃহস্পতিবার ছিনতাইয়ের অভিযোগে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, গত ২০ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ইপিজেড এলাকার বে শপিং সেন্টারের সামনে থেকে বাসে ওঠেন। নিমতলা বিশ্বরোডে বাস পৌঁছার পর তাকে নামিয়ে দেয়ার জন্য বললে চালক দ্রুতগতিতে বাসটি বড়পোলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে বাসে যাত্রীবেশে থাকা তিনজন তাকে ছুরিকাঘাত করে নগদ ১০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল লুটে নেয়।
এরপর বাসটি সিটি গেট এলাকায় নিয়ে জোরপূর্বক পিন নম্বর নিয়ে তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার ৮০০ টাকা তুলে নেয়। পলাশকে বাসের ভেতর জিম্মি করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিনেমা প্যালেস মোড় এবং বহদ্দারহাটে গিয়ে তিন দফায় এসব টাকা বিকাশ সেন্টার থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর বাস লালখান বাজার এলাকায় ফ্লাইওভারে তুলে রাত সাড়ে তিনটার দিকে পলাশকে নামিয়ে দেয়া হয়। আহত পলাশ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মামলা করেন।
এসআই কিশোর মজুমদার বলেন,‘নিমতলাসহ আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখি, এই বাসটিতে এক গার্মেন্টস ফেরত তরুণীকে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল।
জানাগেছে, গত ১৯ মে রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে পুলিশ এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। পাঁচ দিন ধরে সংজ্ঞাহীন ছিলেন ওই তরুণী। ২৪ মে তার জ্ঞান ফেরে। পরদিন তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পেশায় পোশাককর্মী তরুণী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কারখানার বাসে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। ১৯ মে রাত ৯টার দিকে কারখানা ছুটি হয়। তিনি বাসায় ফেরার জন্য একই কারখানার আরও ১০-১২ জন শ্রমিকের সঙ্গে বাসে ওঠেন। বাস বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছার পর অন্য শ্রমিকরা দ্রুত নেমে যান। পেছনের আসন থেকে উঠে নামার জন্য এগিয়ে সময় তাকে নিয়ে বাস দ্রুত রাহাত্তার পুলের দিকে চলে যায়। এসময় বাস চালাচ্ছিল সহকারী আর চালক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন তরুণী নিজেকে বাঁচাতে চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে গুরুত্বর আহত হন।
পুলিশ জানায় গ্রেপ্তার গিয়াস বাসটির মূল চালক হলেও ধর্ষণ চেষ্টার সময় তার বদলে অন্যজন গাড়িটি চালাচ্ছিল।
ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় গত ২৫ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই তরুণী নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ ঘটনার সময় বাসটি যে চালাচ্ছিল সেই আনোয়ার হোসেন টিপু এবং তার সহকারী জনি দাশকে গ্রেফতার করে। জব্দ করা হয় বাসটিও।