
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ নাছির উদ্দিন মুনির বিরুদ্ধে রাতারাতি সরকারী জায়গা দখল করে নিয়ে মাটি ফেলে জলশয় ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া নয়াহাট বাজারের দক্ষিণে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সড়কের পশ্চিম পার্শ্বস্থ জলাশয় সদৃশ (খাই)টি জেলা পরিষদ এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা। কিন্তু রাতারাতি শত শত টাকভর্তি মাটি দিয়ে গত কয়েকদিনে খাইটি ভরাট করে দখল করা হয়েছে দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কাজের নেপথ্যে মাওলানা মোঃ নাছির উদ্দিন মুনির রয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে।

এ নিয়ে সম্প্রতি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ জায়গাটি গতকাল বৃহস্পতিবার (৫জানুয়ারি) কাটা তারের ঘেরা দিয়ে পুনরুদ্ধার করেছে।
খোদ জনপ্রতিনিধি উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকারী জায়গা দখলের ঘটনায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ যেন “বেড়া ক্ষেত খাওয়ার অবস্থা” রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।

সূত্র জানায়, চারিয়া মৌজার আর এস খতিয়ান নং-৩৩৬৪ ও ৬৩৬৭ দাগের জায়গাটির মালিক জেলা পরিষদ। দীর্ঘ অনেক বছর ধরে এখানে একটি জলাশয় ছিল। তবে চারিয়া বিলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রামের জেলা ইজতেমার কাজে প্রশাসনের ব্যস্ততার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে শত শত ট্রাক মাটি ফেলে জলাশয়টি ভরাট করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন মুনিরের ভাই আকতার সিকদার।
গত ২৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে প্রায় ১শত ট্রাক, ৩ জানুয়ারি শতাধিক ও ৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ৩০ ট্রাক মাটি ফেলে ভরাট করে দখলে নেয়। এমনটি ভরাট কাজে পাহাড়ী লাল মাটিও ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে সরকারী এ জায়গা দখলের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নাছির গং এর বিরুদ্ধে হাটহাজারী মডেল থানা ও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জনৈক ব্যক্তি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করে দখলের সত্যতা খুঁজে পান। পরে প্রশাসনের উপস্থিতিতে সে জায়গা জেলা পরিষদ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ সীমানা খুঁটি দিয়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে পুনরুদ্ধার করে।
ঘটনা সম্পর্কে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী রথিন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘আমরা লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জানতে পারি জেলা পরিষদের জায়গা স্থানীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গং মাটি ভরাট করে জবর দখলের চেষ্টা করছেন। এসে তার সত্যতা পাওয়ায় কাটা তারের বেড়া দিয়ে আমাদের জায়গায় ঘেরাও করে দখলমুক্ত করেছি।’’

জেলা পরিষদ সার্ভেয়ার নাঈম কাগজপত্র দেখে বলেন, ‘‘জায়গাটি চারিয়া মৌজার আর এস ৬৩৬৭ দাগের। এ জায়গার মালিক জেলা পরিষদ এবং কিছু সড়ক ও জনপদ বিভাগের। দখলকারীরা রাতের আঁধারে মাটি ভরাট করে জায়গাটি নিজের দাবি করে অন্যায়ভাবে দখলে নিতে চেয়েছিল।’’
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর মোবাইলে ফোন করেন স্থানীয় একজন সাংবাদিক। তিনি সরকারী জায়গা দখলের বিষয়টি অস্বিকার করেন। তবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ব্যস্ততা দেখিয়ে আপাতত প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। জায়গাটির উপর হস্তক্ষেপ না করতে ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর আমাকে ফোন দিয়েছিল। তবে কাউকে পরিষদের এক ইঞ্চি জায়গাও অবৈধভাবে দখল করতে দেয়া হবেনা।’’