প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে দলের নেতাকর্মীরা।
আজ রবিবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে আসছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ১০ মাস পর তিনি নগরীর ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে দলীয় জনসভায় তিনি প্রধান অথিতির বক্তব্য দেবেন। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ঢাকা থেকে সরাসরি ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) সামরিক বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখান থেকে দুপুরে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে যাবেন। স্টেডিয়াম থেকে তিনি পাশবর্তী সার্কিট হাউজে অবস্থান করবেন। সেখান থেকে বিকেল ৩টায় গাড়িতে করে প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রায় একমাস ধরে প্রস্তুতি চলছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে। বন্দরনগরী ও জেলার নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। নগরীকে নান্দনিক রূপ দিতে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
পুলিশের পক্ষ থেকে নগর জুড়ে নেয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। সমাবেশের আশেপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, এক সপ্তাহ আগে থেকে ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ, একদিন আগে বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল পরীক্ষা স্থাগিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নগর জুড়ে ৩ স্তরের নিরাপত্তার বলয় তৈরী করা হয়েছে। মোতায়েন থাকছে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সেনা বাহিনী।
সমাবেশের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নগর ও জেলা আওয়ামী লীগ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রং বেরঙের ব্যানার, পোষ্টার, বিলবোর্ড ছেয়ে গেছে চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে বিশাল বিশাল তোরণ। প্রস্তুত হয়েছে নৌকার আদলে জনসভার মঞ্চ।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বার্তা সর্বস্তরের পৌঁছাতে শনিবারও (৩ ডিসেম্বর) চালানো হচ্ছে বর্ণাঢ্য প্রচার-প্রচারণা। ঘোড়ার গাড়িতে করে লিফলেট বিতরণ, নৌকার আদলে গাড়ি বানিয়ে প্রচারণা, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, বাইসাইকেল শোভাযাত্রা, প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে র্যালি।জনসভাস্থলে আসতে প্রতিটি উপজেলায় বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বুকিং দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসছেন। এ কারণে চট্টগ্রামবাসীর মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে জনসভায় ভাষণ দেবেন। এতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন। জনসভাকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে পুরো চট্টগ্রাম প্রস্তুত। শুধু জনসভাস্থলেই জনসমুদ্র হবে তা নয়, পুরো চট্টগ্রাম হবে লোকে লোকারণ্য। এ জনসভার মধ্যে দিয়ে বিজয়ের মাসে চট্টগ্রাম আরও একটি ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। জনসভাস্থল ও আশপাশে প্রায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জনসভাকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। এই সমাবেশে বিপুল জনসমাগম হয়। তবে বিএনপির জনসভার চেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর এই মাঠে তিনি আবারও ভাষণ দেবেন।