সাইফুল ইসলাম শিল্পী:
দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার বিকেলে পলোগ্রাউন্ড মাঠে মঞ্চে বক্তব্য দিতে উঠে তিনি চট্টগ্রাম বাসীর উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন ‘অনেরা ক্যান আছন? গম আছন নি? তোয়ারার লাই আঁরতে পেট পুরের।’ (আপনারা কেমন আছেন, ভালো আছেন নি? আপনাদের জন্য আমার পেট পুড়ছে”।
প্রধানমন্ত্রীর মুখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা শুনে উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। এসময় তারা চিৎকার করে জবাব দেন “আঁরা বেগ ভালা আছি” অথ্যৎ আমরা সবাই ভালো আছি”।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই চট্টগ্রামের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সমাবেশ করতে পারিনি। তাই আপনাদের কাছে ছুটে আসলাম। এই স্মৃতিময় চট্টগ্রামে আমরা বারবার ছুটে আসতাম। আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন আমাদের চট্টগ্রামে বেড়াতে নিয়ে আসতেন।’
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম আমাদের সবচেয়ে প্রিয় একটা জায়গা ছিল। এখানে আসলে মনে পড়ে সকল নেতাকর্মীদের কথা। এই চট্টগ্রাম আমাদের সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। চট্টগ্রামের যে নেতারা সারাজীবন তারা সংগ্রাম করেছেন। আজকে এখানে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। করোনার কারণে দীর্ঘদিন জনসভা করতে পারিনি। তাই আজকে আপনাদের কাছে এসে হাজির হয়েছি। আমরা উন্নয়ন করি। বিএনপি মানুষ খুন করে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এই চট্টগ্রামের আমাদের প্রয়াত নেতাদের। এমএ আজিজ, হান্নান সাহেব, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ যে নেতারা আজকে আর নেই। যাদেরকে চাচা বলে ডাকতাম। তাদের বাড়িতে যেতাম। আজকে কেউ আর বেঁচে নেই। তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে আসলেই ছুটে যেতাম এম এ আজিজ চাচা, জহুর আহমেদ চাচার বাসায়। এখন তারা নেই। সব স্মৃতি মনে আছে।’
ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভা থেকে চট্টগ্রামে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি ৪টি উন্নয়ন কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকারের ঘুম নষ্ট হয়নি। ঘুমটা নষ্ট শেখ হাসিনার। দেশের মানুষের জন্য, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, গরীব মানুষকে, দুঃখী মানুষকে বাঁচানোর জন্য শেখ হাসিনাকে রাত জাগতে হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কি খেলা হবে, হবে খেলা’? বীর চট্টলা তৈরি। প্রস্তুত আছেন? ‘খেলা হবে’। ফখরুল সাহেব, আমীর খসরু সাহেব দেখে যান— ‘এখানে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা বলেছিলেন। দেখে যান, কত লোক হয়েছে, আপনাদের আটটা সমাবেশের সমান সমান লোক হয়েছে আজকের পলোগ্রাউন্ড মাঠে। চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় এখানে যা লোক তার আটগুন বেশি লোক বাইরে গোটা চট্টগ্রাম আজকে মিছিলের নগরে।’
বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মহাসমাবেশে নয় এটি মহাসমুদ্র; কি কথা ঠিক। সমুদ্র, কর্ণফুলীর সব ঢেউ আজ পলোগ্রাউন্ডে। বঙ্গপসাগরের সব ঢেউ চট্টগ্রাম প্রান্তে। সব ঢেউ আজকে চট্টগ্রাম শহরে। দেখে যান, জনপ্রিয়তা কাকে বলে।’
শেখ হাসিনাকে মারতে এখনও চক্রান্ত করছেন বলে মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনাকে মারতে এখনও চক্রান্ত করছেন সেটা জানি। কারণ, আমরা জানি ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচনে হারানো যাবে না;…সেজন্য স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা এ দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন তা নাহলে তাদেরও আজ বেঁচে থাকার কথা ছিল না। পলোগ্রাউন্ডের সর্বকালের সর্ববৃহৎ এ সমাবেশে আসার কথা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে, অর্জনকে বাঁচাতে হলে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।’
এরআগে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অপেক্ষার প্রহর শেষে পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় এসে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।