
সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি টিম। আজ রবিবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলের ধ্বংসস্তুপের ভীতরে তল্লাশী করছে উদ্ধার টিম। তবে দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন করে কোন শ্রমিকের মরদেহ পাওয়া যায়নি।
কুমিরা সীতাকুণ্ড স্টেশন ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ ও কুমিরা স্টেশনের দুটি টিম উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে।
আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হতাহত কাউকে উদ্ধারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে গতকাল বিকেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণে সীমা অক্সিজেন (প্লান্ট) লিমিটেড কারখানার আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার প্রচন শব্দে কেঁপে উঠে বলে স্থানীরা জানায়। এ কারণে আশে পাশের অনেক বাড়ী ঘর অফিস দোকান পাশের ভবন মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনায় গ্লাস ভেঙ্গে পড়ে। কিছু কিছু বিল্ডি এ ফাটল দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
কেশবপুর এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, বিস্ফোরণের পর চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিন ও লোহার টুকরা। আশপাশের অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। উড়ে গেছে টিনের চালা। ভেঙে গেছে অনেক ঘরের কাচ। বিস্ফোরণের পরের অবস্থা দেখে তাঁদের মনে হয়, যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ।
ঘটনার সময় কারখানার বাইরে থাকা ইয়াসিন নামে এক শ্রমিক জানান, আমি বিস্ফোরণের মাত্র ১০ মিনিট আগে ফ্যাক্টরী থেকে বের হয়েছিলাম চা খেতে। চা খেয়ে আবার কারখানায় ঢুকার আহেই বিস্ফোরণ ঘটে। অল্পের জন্য বেঁচে যাই। বিস্ফোরণের পর কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এমনকি বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত।
চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বিস্ফোরণে আহত আব্দুল মোতালেব (৫৫)। জানান, বিস্ফোরণে তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন তিনি বলেন আমাদের কারখানায় অক্সিজেন তৈরি করা হয়। তারপর ৮০ কেজি ওজনের সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা হয়। আমি মনে করি সিলিন্ডারে অতিরিক্ত চাপের কারণে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। প্ল্যান্টে এরকম ঘটনা আগে ঘটেনি।
এদিকে বিস্ফোরণে যে ৬ জন নিহত হয়েছে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।
অন্যদিকে, বিস্ফোরণে আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে এবং নিহতের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নিহতের পরিবারকে আরও ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
প্রসঙ্গত- গতকাল শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ডের কদম রসুল এলাকায় অবস্থিত সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রথম দিনের উদ্ধার অভিযান শেষে ৬ জন নিহত ও ৫০ জনের মত আহত হয়। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ জন চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এবং ৪ জন সীতাকুণ্ডের বিএসবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জানা গেছে।