
মানবিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে কর্মস্থলে অনুস্থিত থাকার কারণে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আলোচিত কনস্টেবল শওকত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সিএমপি কর্তৃপক্ষ।
বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার শাকিলা সোলতানা সাক্ষরিত আদেশটি পাঠানো হয়েছে সিএমপি পুলিশ কমিশনার কৃঞ্চ পদ রায়ের কাছে।
চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়েছে, “৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন মতামত দেন।
এদিকে চাকরিচ্যুতির খবর প্রকাশ হলে এনিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, কনস্টেবল শওকত হোসেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। তিনি চাকরির পাশাপাশি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।
২০১১ সাল থেকে শওকত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেন৷ তার এই মানিবক কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ওই সময় কমিশনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিল। বেওয়ারিশ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করায় তখন সংবাদমাধ্যমে পুলিশের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। তখন কনেষ্টেবল শওকত এ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আলোচিত হন।
এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শওকত হোসেন নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকায় একটি মাহফিলে অতিথি হয়ে যান এবং ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যের জেরে পরবর্তী সময়ে তাকে দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে বদলি করে কর্ণফুলী থানায় পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কনস্টেবল শওকত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি অভিমান করে চাকরি থেকে নিজে অব্যাহতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে আমি নিজে দরখাস্ত দিয়েছি। বুঝেনই তো আমার পোস্ট ছোট, কিন্তু কাজ বেশি। অনেক সময় আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে হয়। আমি টিভিতে কথা বলি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলেন। বিষয়টি নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা। তারা বিষয়টি মেনে নেননি। যদিও পুলিশে এক ধরনের শ্রেণি বৈষম্য ছিল এবং আছে। সবমিলিয়ে আমার সঙ্গে যাচ্ছে না, আমি নিজেও পারছি না। আমার মানবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য এক ধরনের অভিমান নিয়ে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমাকে শুধু মানবিক কাজ করার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমার সঙ্গে হিংসাত্মক আচরণ শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং করা হয়। এতে আমার ভালো কাজের ব্যাঘাত ঘটে। তারা আমাকে অনেকটা মানবিক কাজে নিরুৎসাহিত করে।