
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বসতঘর থেকে মা ও তার চার বছর বয়সী মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গলায় তার পেঁচানো মেয়েটির মরদেহ পড়ে ছিলো বিছানায় এবং পাশে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল মায়ের মরদেহ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা- মেয়েকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন।
ওই গৃহবধূর নাম জান্নাত আক্তার (২৪)। তিনি গোপীনাথপুর গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আবুল কালামের স্ত্রী। নিহত চার বছর বয়সী শিশুটির নাম হাজেরা আক্তার।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল হক জানান, গোপীনাথপুর গ্রামের মাঝিবাড়ির মো. শাহজাহানের ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আবুল কালামের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে একই উপজেলার বারেশ্বর গ্রামের মো. মোস্তাফার মেয়ে জান্নাত আক্তারের (২৩) বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের মেয়ে হাজেরা আক্তারের জন্ম হয়। পাঁচ মাস আগে আবুল কালাম ছুটি শেষ করে সিঙ্গাপুর চলে যান।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য আবদুল হক বলেন, বুধবার রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাবার খেয়ে জান্নাত তার শিশু সন্তানকে নিয়ে নিজের রুমে ঘুমাতে যান।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় শাশুড়ি ঘরের দরজায় গিয়ে ডাকতে থাকেন। দীর্ঘক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোকজনকে ডেকে আনেন। স্থানীয়রা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মরদেহ দুটি দেখতে পেয়ে বুড়িচং থানায় খবর দেন।
জান্নাতের মা সাহেনা বেগম বলেন, আমার ছোট মেয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি গোপীনাথপুর গ্রামে আসি। এখানে এসে শুনি, আমার মেয়ে তিন দিন ধরে ভাত খায়নি।
কী নিয়ে ঝগড়া তাও বলতে পারছি না। শ্বশুরবাড়ির কোনো লোক আমাদের খবর দেয়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
জান্নাতের শ্বশুর মো. শাহজাহান বলেন, সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় আমি ছেলের বউ আর নাতনিকে ডাকতে যাই। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখি, খাটে নাতনি ও আড়ায় ঝুলে আছে জান্নাত।
বুড়িচং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সকাল ১০টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ আসার পর দেখতে পায় ঘরের বিছানায় শিশুর মরদেহ পড়ে আছে। পাশেই ফ্যানের সঙ্গে ওড়না গলায় ঝুলন্ত ছিল শিশুটির মায়ের মরদেহ।
তিনি আরো বলেন, শিশুটির গলায় তার পেঁচানো ছিল। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করছি, পারিবারিক কলহের জের ধরে ওই গৃহবধূ আগে তার সন্তানকে হত্যা করে পরে নিজে আত্মহত্যা করেন।
স্থানীয় পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারি বুধবার রাতে স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে ঝগড়া হয় ওই গৃহবধূর। স্থানীয়দের ধারণা- এসব কারণে রাতের কোন এত সময় শিশু সন্তানকে হত্যার পর তার মা আত্মহত্যা করেছেন।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা যাবে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।