বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন আমরা ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছি। অচিরেই এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
তিনি আজ বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর কাজের দেউড়িতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’ এ স্লোগানে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ীর চোরাস্তার মোড়ে ‘তারুণ্যের সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
‘আমেরিকার স্যাংশনে আওয়ামী লীগ সরকারের হাঁটু কাপতে শুরু করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,লজ্জায় আমরা মুখ দেখাতে পারি না। আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারীর কারণে আমেরিকা থেকে স্যাংশন। কেন? তাঁরা বলে আমরা ভয় পাই না। এখন এমন ভয় পেয়েছে হাঁটু কাপতে শুরু করেছে।
তিনি প্রশ্ন করে র্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে। আমাদের ভাইদের তুলে নিয়ে গুম করতে। হত্যা করেছে।

সমাবেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আর বিশ্বাস করা যায় না। নতুন বাংলাদেশ নতুন সরকার গঠন তরতে হবে। সকল মানুষকে এক করতে হবে সকল রাজনৈতিক দলকে এক করতে হবে, সবাইকে নিয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে, যে বাংলাদেশে আমার কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, চাকুরির ব্যবস্থা হবে, আমার ভোট আমি দিতে পারবো, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, আমার সন্তানের ভবিষ্যত তৈরী হবে, আমার শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে, আমার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে সেই বাংলাদেশ আমরা চাই, নতুন কলকারখানা গড়ে উঠবে যেখানে মানুষের চাকুরির নিশ্চয়তা হবে। মানুষ তাদের রুটি রুজির নিশ্চয়তা পাবে। যেখানে শান্তি থাকবে ন্যায় বিচার থাকবে। বড়লোড় বড়লোক হবে না, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হবে না, একটি সাম্যের বাংলাদেশ তৈরী হবে। আমরা সবাই সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তরুণদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং সংগ্রাম করে লড়াই করে যুদ্ধ করে এদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ফখরুল বলেন, ‘জনগণের টাকা দিয়ে নিজের উন্নয়ন করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাঁরা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না। আজকে আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আদালতে গিয়ে যে আমরা ন্যায়বিচার পাব, সেই ন্যায়বিচার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। পার্লামেন্টকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে। এই যে মেয়র নির্বাচন হয়েছে। বরিশাল, খুলনায় নির্বাচন হয়েছে। গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের মায়ের কাছে হেরে গেছে।’
বরিশালে পীর সাহেব একজন আলেম মানুষ। তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করে। শেষ পর্যন্ত তাঁকেও মেরে রক্তপাত ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফখরুল।
বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে সন্দেহ করে ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। শুধু আটক করে রাখেনি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাঁকে কারাগারে অনেক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। বারবার বলেছি, তাঁকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না, তাঁকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা। কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, এতটা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। তাঁকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে। যারা জোর করে প্রতারণা করে, জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাঁরা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে। এই সরকার প্রধান বলেছিলেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু কই? যুবক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারে না। লবণের দাম বেড়েছে, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাঁরা বলে, বাংলাদেশ নাকি ভালো আছে। হুম, তাঁরা ভালো আছে। তাঁরা টাকা পয়সা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এমনকি তাঁদের সন্তানদেরও বিদেশে পাঠিয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং খাগড়াছড়ি রাঙামাটি, বান্দরবান নোয়াখালী, কুমিল্লা ফেনীসহ পুরো বিভাগ থেকে লোকজন সমাবেশস্থল কাজীর দেউড়ি মোড় জড়ো হতে শুরু করে। সকাল থেকে সমাবেশ স্থলে মঞ্চে উপস্থিত জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা।