
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি চত্বরে দুপুরে অনুষ্ঠিত “দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশে” বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে । এই নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে মঞ্চে ব্যাপক হট্টগোল হয় বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ।
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে মঞ্চে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী। মঞ্চের প্রথম সারির শেষভাগে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের পাশে বসেন হুম্মাম কাদের। মঞ্চে আসন গ্রহণ করা হলেও তার নাম মাইকে ঘোষণা করা হয় নি। মঞ্চে আসন গ্রহণের পূর্বে রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম মহানগরে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও তার চাচা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দী আসলাম চৌধুরীর ব্যানার ফেস্টুনসহ বিশাল মিছিল নিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সমাবেশ প্রাঙ্গণ আসলেও মঞ্চের মাইকে তা ঘোষণা করা হয়নি ।
একের পর এক বক্তা বক্তব্য রেখে গেলেও হুম্মাম কাদের চৌধুরী কে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় একপর্যায়ে সমাবেশ স্থলে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক উত্তেজিত হয়ে পড়েন । এসময় বেশ কিছু বিএনপির কর্মী -সমর্থক মঞ্চে উঠে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সাথে ব্যাপক বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয় । পরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপরও হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় এক পর্যায়ে তিনি মঞ্চ ছেড়ে চলে যান ।
এ সময় সমাবেশে আগত বিএনপি নেতা-কর্মীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন । সমাবেশ শেষ হওয়ার পরও সমাবেশে আগত বিএনপির নেতা-কর্মীও সমর্থকদের কাছে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্ত ছিল হুমাম কাদের চৌধুরীকে বক্তব্য দিতে না দেওয়া ।
সমাবেশে আসা বকশিরহাটের বাসিন্দা বিএনপি সমর্থক আরিফ বলেন,” বিএনপির জন্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীর পরিবারের ত্যাগ মঞ্চে উপস্থিত বিএনপি’র কতিপয় নেতা ভুলে গেলেও চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ মনে রেখেছে শ্রদ্ধার সাথে। ত্যাগী ও নির্যাতিত এই পরিবারের প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে, আজ হুম্মাম কাদেরকে বক্তব্য দিতে না দিয়ে “।
এ ব্যাপারে জানার জন্য কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মুঠোফোন একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায় ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, যার বাবা-চাচা এবং সে নিজেও দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাকে বক্তব্য না দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দলীয় হাইকমান্ডের উচিত এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। ”
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশস্থলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিপুল সংখ্যক অনুসারীদের উপস্থিতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকে বক্তব্য রাখতে দেয়া হয় নি। এর আগে পলোগ্রাউন্ড মাঠের সমাবেশে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ‘নারায়ে তাকবির ‘ শ্লোগান নিয়ে বিব্রত হয়েছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। যদিও বিষয়টি সারাদেশে বিএনপি সমর্থকদের নাঁড়া দিয়েছিল। বিএনপি’র কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতার ইন্দনে হুম্মাম কাদের চৌধুরী কে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন সমাবেশ আগত বিএনপির নেতা,কর্মী ও সমর্থকরা।
এদিকে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি চত্বরে অনুষ্ঠিত “দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশে” বক্তব্য দেবার সুযোগ না দেয়ায় হুম্মাম কাদের চৌধুরীর সমর্থকদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায় সমাবেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বক্তব্য দেবার সুযোগ না দিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা ফখরুল ইসলাম বক্তব্য রাখতে শুরু করে দেন। এসময় যুবদল নেতা রাজিব আহসানের উপর চড়াও হতে দেখা যায় ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সমাবেশস্থলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিপুল সংখ্যক অনুসারীদের উপস্থিতির কাল হয়েছে তার।
সমাবেশে নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালকে বক্তব্য দেবার সুযোগ দেয়া হলেও হুম্মান কাদেরকে দেয়া হয় নি- এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের এই নেতার ইন্দনে হুম্মামের নাম ঘোষণা করে নি সমাবেশের মঞ্চে এমন অভিযোগ হুম্মাম কাদের চৌধুরীর সমর্থকদের। তবে বিএনপি নেতাদের কেউ এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজ হননি।
জানতে চাইলে চাইলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, আমার বাবা সারাদেশের মানুষের নেতা ছিলেন । জাতীয়তাবাদী শক্তির সাহস ও অনুপ্রেরণা ছিলেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসার কারণে হয়তো আমাকে বক্তব্য আশা করেছিলো নেতাকর্মীরা। একারণে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে আমার লক্ষ্য ছিলো সমাবেশ সফল করা। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি প্রমাণ করেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। অচিরেই অবৈধ, জুলুমবাজ সরকারের পতন উদযাপন করবে দেশের তরুন সমাজ।