
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলক ভাবে রেল চলাচল শুরু হবে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে স্বপ্নের এ রেললাইনের উদ্বোধন হবে। এটি পুরো দেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের প্রকল্প। বন্যায় ক্ষতি হওয়া রেললাইনের কারনে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে না। কারন বন্যায় রেললাইনের তেমন ক্ষতি হয়নি। রেললাইনের মাত্র ৫০০ মিটার এলাকার মধ্যে কিছু কিছু অংশ ক্ষতি হয়েছে। পানির কারনে স্লীপারে নিচ থেকে পাথর সরে গেছে। কয়েক জায়গায় সামান্য কিছুটা দেবে গেছে। মূল লাইনের কোন ক্ষতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর।
তিনি শুক্রবার সকালে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতি হওয়া রেললাইন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরকে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ছবি দেখে মনে করেছিলাম রেললাইন বেঁকে গেছে। এজন্য সরেজমিন দেখতে এসেছি। এখন দেখলাম কোথাও রেললাইন বেঁকে যায়নি। বন্যার পানিতে পাথর সরে যাওয়ায় লাইন কোথাও ঝুলছে আবার কোথাও সামান্য দেবে গেছে। মূল রেললাইনের কোথাও বেঁকে গেছে বলে আমার মনে হয়নি। দুর থেকে দেখলে মনে হবে আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। কাছে গেলে বুঝা যাচ্ছে আসলে বাঁকা হয়নি। টেকনিক্যাল টিম হয়তো আরো ভালো বলতে পারবে। ঠিক কি কারনে এরকম হয়েছে। যদি সত্যি লোহা বেঁেক থাকে তাহলে সেগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে আছে।
ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের সংস্কার কাজ কখন শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পরিদর্শন করে যাচ্ছি। টেকনিক্যাল টিম এটা নিয়ে কাজ করছে। আমরা তাদেরকে নিয়ে বসবো। কারিগরি দিক থেকে এর সমাধান কি তা এ মূহুর্তে বলতে পারবো না। টেকনিক্যাল টিমের সাথে বসলে জানতে পারবো প্রকৃত কারন এবং সমাধানের পথ কি ? এরপর দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে।
পরিকল্পনায় কোন ক্রুটি বা কাজে গাফিলতি আছে কিনা জানতে চাইলে ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এখানে অতীতে এরকম বন্যা আর হয়নি। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে কখন কোথায় কি হচ্ছে তা বুঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিগত ১০০ বছরের মধ্যে যে পরিমান পানি হয়নি সেখানে এবছর হয়েছে। রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে এবারে সবচেয়ে বেশি পানি হয়েছে। আগামীতে আরো বেশিও হতে পারে। এজন্য আমরা তলিয়ে যাওয়া এলাকায় আরো কিছু ব্রিজ কালভার্ট করে দিবো। কারন রেললাইন প্রকল্পটি আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। জন্য আগামী ১০০ বছরের কথা মাথায় রেখে ব্রিজ কালভার্ট দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে পাথর দিয়ে রেললাইন উচুও করা যাবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শনকালে রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল আহসান, প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান, ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের ঠিকাদারী প্রতিষ্টান তমা গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতাউর রহমান ভুইয়া, রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ডেপুটি ডিরেক্টর সৌরভ বাবু ও প্রকল্পের টিম লিডার ইস্টিবেন প্রেগনাল উপস্থিত ছিলেন।
বন্যায় ক্ষতি হওয়া অংশ সংস্কার ও নতুন ভাবে ব্রিজ কালভার্ট করলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে কিনা জানতে চাইলে রেলপথ সচিব বলেন, এতে প্রকেল্পর ব্যয় বাড়বে না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষন, সাঙ্গু, ডলুনদী ও হাঙ্গর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সাতকানিয়ার উপর দিয়ে স্বরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বয়ে গেছে। উক্ত বন্যায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়ায় কেঁওচিয়ার তেমুহনী অংশ বন্যার পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে রেললাইনের পাথর, কংকর ও মাটি সরে গেছে। কোথাও কোথাও লাইন দেবে যায়। আবার কোথায় পাথর, মাটি সরে যাওয়ায় রেললাইন শূণ্যে ভাসছে।